ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি

ডিজিটাল লটারিতে তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

ডিজিটাল লটারিতে তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে নির্বাচন

ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে প্রথম ধাপে তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে

সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তিতে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে প্রথম ধাপে তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এক লাখ ৩৯ জন শিক্ষার্থী। বেসরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় ‘ভর্তি বাণিজ্য’ বন্ধ হয়েছে। এরসঙ্গে দেশের স্বনামধন্য স্কুলে সব পেশার মানুষের সন্তান পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে নামি প্রতিষ্ঠানও নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কারণ আগে ভালো প্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীই ভর্তির সুযোগ পেলেও এখন সব ধরনের শিক্ষার্থী পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লটারি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর শুরু হয় দৈবচয়ন পদ্ধতিতে লটারি। সম্পূর্ণ সফটওয়্যারের মাধ্যমে দুপুর ২টার দিকে ফল প্রকাশ করা হয়। যেসব শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়নি, তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে অপেক্ষমাণ তালিকা করা হয়েছে। নির্ধারিত ওয়েবসাইট ও মাউশির ওয়েবসাইটে এ তালিকা পাওয়া যাবে। লটারিতে প্রথম ধাপে স্কুলে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের আগামী পাঁচদিনের মধ্যে ভর্তি সম্পন্নের নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, দেশের ৬৫৮টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শূন্য আসন ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ১০১টি। বিপরীতে আবেদন করেছিল পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ১৩ জন। তাদের মধ্যে প্রথম দফায় এক লাখ ৩৯ জনকে ভর্তির জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫৩ হাজার ১১ জন ছাত্র ও ৪৭ হাজার ২৬ জন ছাত্রী। তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছে দুজন। অন্যদিকে বেসরকারি মাধ্যমিকে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী। মহানগর ও জেলা সদর পর্যায়ের তিন হাজার ১৮৮টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে তারা ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শূন্য আসন রয়েছে ১০ লাখ ৩ হাজার ৯৯৩টি।
লটারি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল দৈবচয়ন পদ্ধতি সম্পূর্ণ সফটওয়্যারভিত্তিক হওয়ায় শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে আমরা অনেক আগেই লটারি চালু করেছিলাম। করোনা মহামারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি মাথায় নিয়ে প্রথম থেকে নবম পর্যন্ত সব শ্রেণিতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় লটারির মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যে অশুভ প্রতিযোগিতা তা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। একইসঙ্গে কমছে বৈষম্যও।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে লটারি উদ্বোধন ও ফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। এতে সভাপতিত্ব করেন মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রথমদিকে রয়েছে। প্রতিবারই এই স্কুলে ভর্তির জন্য তদবির, ঘুষ, বাণিজ্য চলেছে। তবে ভর্তি প্রক্রিয়া লটারির কারণে গেল কয়েক বছর ধরে তা কমে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে কলেজটির সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান শেখ জনকণ্ঠকে বলেন, ভর্তি লটারির কারণে আমাদের ওপর চাপ কমেছে। তবে এখনো কিছু সমস্যা রয়েছে। ওপরের ক্লাসে অনেক শিক্ষার্থী ইংরেজি ভার্সনে আবেদন করে। এই ভার্সনে আবেদন করে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। এরপর দেখা যায় ভর্তি হওয়ার পর বাংলা ভার্সনে আসতে নানা রকম তদ্বির শুরু হয়। এ বিষয়টিও কর্তৃপক্ষের মাথায় রাখা উচিত।
এদিকে লটারির ফল ই-মেলে স্কুলপ্রধানদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে মাউশি। আর শিক্ষার্থীরা কে কোন স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, সেটা আবেদনের সময় তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরে এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মনোনীত সবাই এসএমএস পাবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানতে পারবেন।
১ জানুয়ারি বই উৎসব নিয়ে সংশয় ॥ জাতীয় নির্বাচনের কারণে এবার বছরের প্রথম দিন বই উৎসব করা নিয়ে ‘সংশয়’ দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর যুক্তি ‘এবার বই উৎসবটা ঠিক ১ তারিখে (জানুয়ারি) করব, না কি নির্বাচনের পরে ১০-১১ তারিখে হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
লটারি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বই উৎসব নিয়ে এখন আমাদের ভাবতে হচ্ছে।

যেহেতু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। নির্বাচনের পরের সময়টা আসলে কেমন থাকবে, সেটাও আমাদের একটু বিবেচনায় নিতে হবে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়। সে কারণে এবার বই উৎসবটা ঠিক ১ তারিখে করব, না কি নির্বাচনের পরে ১০/১১ তারিখ করব, সেটা নিয়ে একটু সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি। সার্বিক অবস্থাটা বিবেচনায় নিয়ে শীঘ্রই সেটা জানাতে পারব।’

×