
.
তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি, এনায়েতপুর ও চৌহালী উপজেলা নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৫ আসন গঠিত। প্রখ্যাত কবি রজনীকান্ত সেনের বেলকুচি, পীর এ কামেল খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (র) এর পুণ্যভূমি এ আসনের মর্যাদাও কম নয়। প্রমত্তা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এ আসনে দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে বড় দুই দলেই শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ১৯৯৬ সাল থেকে টানা চারবার আসনটি রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। নৌকার পক্ষের অনুকূল আসনটি পুনরুদ্ধারে বিএনপিও নির্বাচনী মাঠে তৎপর। তবে দু’দলেই একাধিক প্রার্থীর ভিড়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
একটি পৌরসভা ও ১৩ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৯ হাজার ৮৯৩। এ আসনের বেশিরভাগ ভোটার ব্যবসায়ী। উত্তরাঞ্চলের কাপড়ের ব্যবসার বৃহত্তম সোহাগপুর ও এনায়েতপুর নামের দুইটি সমৃদ্ধ বড় হাট এ আসনের অন্তর্ভুক্ত। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ আসনে বসবাসকারী ব্যবসায়ীদের যথেষ্ট অবদান আছে। উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা বেলকুচি-এনায়েতপুর এবং চৌহালীর সাধারণ মানুষ চায় সামজিক নিরাপত্তা এবং শান্তি।
এ আসনে ১৯৯৬ , ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে চারবার আওয়ামী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দুইবার জিতেছে। ২০০৮ সালে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস নির্বাচিত হলে তাকে সরকারের মন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালেও নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় আবদুল মজিদ মন্ডলকে। পরে ২০১৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছেন মজিদ মন্ডলের পুত্র আব্দুল মমিন মন্ডল। তিনিই বর্তমানে এ আসনের আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এবারও তিনি অন্যতম মনোনয়নপ্রত্যাশী। এই আসনে আওয়ামী লীগ চায় পঞ্চমবারের মতো আসন ধরে রাখতে, আর বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। মূলত এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন।
তবে এ আসনটিতেও রয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডল ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, ঢাকার বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা মীর মোশাররফ হোসেন এবং চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন।
অন্যদিকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটেও রয়েছে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, গোলাম মওলা খান বাবলু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, জেলা বিএনপির সদস্য রাকিবুল করিম পাপ্পু ও জামায়াতে ইসলামীর আলী আলম। এছাড়া জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ভোটারদের কাছে যাওয়া শুরু করেছেন।
এই আসনের বর্তমান এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মমিন মন্ডল দেশের বস্ত্রখাতের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান মন্ডল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির কর্ণধার। তিনি সরকারি অনুদানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অনুদানেও তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তুলেছেন। মসজিদ মাদ্রাসাসহ সামজিক প্রতিষ্ঠানে তার অনুদান সরকারি অনুদানের চেয়ে কম নয়। তিনি তার নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলে সমৃদ্ধ করেছেন। আগামীতে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন গর্বিত সদস্য হতে চান।
তিনি বলেন তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ এলাকা ও যমুনা নদী বিধৌত চরাঞ্চলের অবহেলিত মানুষের পাশে থেকে জনগণের চাহিদা মতো কাজ করে যাাচ্ছি এবং আগামীতেও করব ইনশাল্লাহ। এছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহযোগিতা করা হচ্ছে এবং আগামীতে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এবার আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব ইনশাল্লাহ্।
এ আসনের আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক মন্ত্রী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার প্রার্থী হওয়ার মূল লক্ষ্য দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এলাকার সর্বস্তরের জনগণের চাহিদা মোতাবেক খেদমত করে যাওয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করা এবং বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব সোনার বাংলা গড়ে তোলার একজন কর্মী হতে চাই।
আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। এবার দ্বাদশ নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।
মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি বিশ্বাস করি এলাকায় জনসম্পৃক্ততা, সততা, সাহসী ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যোগ্য ব্যক্তিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবারের নির্বাচনে বাছাই করে মনোনয়ন দেবেন। ’৮০ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে বোমা হামলার শিকার হয়েছি, জেল-জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছি। আমি আশা করি বিষয়টি বিবেচনায় থাকবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে এ আসন উপহার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত শক্তিশালী করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহপ্রচার সম্পাদক আব্দুল আলিম বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। যদি দল নির্বাচনে যায় এবং আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে নির্বাচনী এলাকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণকে আত্মনির্ভরশীল করতে চাই।
তবে উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক কর্মকা-ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা বেলকুচি-এনায়েতপুর এবং চৌহালীর সাধারণ মানুষ চায় সামজিক নিরাপত্তা এবং শান্তি। যমুনার ভাঙনে বিধ্বস্ত চৌহালীর সাধারণ ভোটাররা নদী ভাঙনের হাত থেকে নিজেদের সহায় সম্বল রক্ষা করতে পারে এমন প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনার এলাকায় কেমন জনপ্রতিধি চাই এমন প্রশ্নে বেলকুচি উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পৌর এলাকার ভোটার সুলতানা রাজিয়া মিলন, দেলুয়াকন্দি গ্রামের ফটিক ফকির, ভাঙ্গাবাড়ির আব্দুর রশিদসহ বেশ ক’জন ভোটার জানান, এ আসনটি যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত। ভাঙনে বিধ্বস্ত এলাকা। এই এলাকায় অর্থ আত্মসাতকারী, সন্ত্রাস পালনকারী, অতিথি পাখির মতো বা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে ভোট চাইলেই তাকে ভোট দেয়া হবে না। তারা শিক্ষিত, মার্জিত, সৎ এবং চৌকস রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই আসনটিতে অভিভাবকত্বের আসনে বসাতে চায়। যিনি দুখী মেহনতি গণমানুষের কল্যাণে কাজ করবেন, এলাকার উন্নয়ন করবেন, তেমন নেতাকেই আমরা খুঁজে নেব।