ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বঙ্গ সংস্কৃতির বৃহৎ উৎসব আজ শুরু

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

বঙ্গ সংস্কৃতির বৃহৎ উৎসব আজ শুরু

বইমেলা আজ শুরু হচ্ছে

বইমেলা আজ শুরু হচ্ছে। বইমেলা বলতে ওই একটিই- অমর একুশে বইমেলা। সারা বছর বইয়ের সঙ্গে বাঙালির সংযোগ থাক বা না থাক, ফেব্রুয়ারি এলে প্রাণের মেলায় ছুটে যান সবাই। এবারও অভিন্ন চাওয়া এবং চেতনার জায়গা থেকে মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। আজ ১ ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাকালে কয়েক বছর মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি সরকারপ্রধান। এবার অনুকূল সময়ে বাংলা একাডেমির মেলা মঞ্চে পাওয়া যাবে তাঁকে।  
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, বিকাশ, বাঙালি সংস্কৃতির বহমান উদার অসাম্প্রদায়িক ধারায় অনন্য সংযোজন বইমেলা। বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক বাংলা একাডেমি এর আয়োজক। মাসব্যাপী মেলায় মূলধারার প্রায় সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। মেলা চলবে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত। বইয়ের প্রদর্শনী বেচাকেনার এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন সারা বিশ্বে বিরল। সকল বাঙালির আবেগ-ভালোবাসার অনিন্দ্য সুন্দর প্রকাশ বইমেলা তাই প্রাণের মেলা হিসেবে খ্যাত। শুধু বইকে কেন্দ্র করে হলেও, কালক্রমে এটি হয়ে উঠেছে বঙ্গ সংস্কৃতির বৃহৎ উৎসবে। 
বইমেলা ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল বাঙালি। রফিক, শফিক, বরকত ও জব্বারের তাজা রক্ত গড়েছিল নতুন ইতিহাস। তাদের রক্তে নতুন প্রাণ পায় আ-মরি বাংলা ভাষা। অমর একুশের সেই চেতনাকে ধারণ করে আছে একুশের বইমেলা। অনেকের মতে, আয়োজনটির প্রাথমিক সূচনা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান হাউসের বটতলায় চট পেতে বসেছিলেন এই  প্রকাশক। মাত্র ৩২টি বই।

বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের লেখা এসব বই প্রকাশ করে চিত্তরঞ্জন প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী)। বইগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অবদান। নিজের প্রকাশিত বই নিয়ে একাই উদ্যোগটি অব্যাহত রাখেন চিত্তরঞ্জন। যতদূর জানা যায়, ১৯৭৬ সালে তার উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয় আরও কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। আর ১৯৭৮ সালে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয় বাংলা একাডেমি। ১৯৭৯ সালে মেলার অংশ হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। কোনো কোনো সূত্রমতে, ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকাকালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমিতে প্রথম অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করেন। বর্তমানে মেলা সম্প্রসারিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। 
এরই মাঝে চলতি বছরের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলা একাডেমি। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করবেন একই অনুষ্ঠানে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। 
মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। 
মেলার বিন্যাস সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অংশে হবে মূল মেলা। সেখানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠান বই প্রদর্শন ও বিক্রি করবে। মেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট সংখ্যা হবে ৬০১টি। এ ছাড়াও থাকছে ৩৮টি প্যাভিলিয়ন। লিটলম্যাগ চত্বরে ১৫৩টি স্টল প্রস্তুত করা হয়েছে। 
এবার বাংলা একাডেমি প্রান্ত থেকে মেলায় প্রবেশ করতে রমনা কালী মন্দিরের গেটটি ব্যবহার করতে হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অন্যদিকে, টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে আরও ৩টি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে কোনো স্টল থাকবে না। শিশু চত্বরটি মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডানদিকে রাখা হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। 
আয়োজক সূত্র জানায়, বইমেলায় নতুন পুরনো মিলিয়ে ১৩৬টি বই প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। বইমেলার প্রথম দিনে ‘শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলী’, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘আমার দেখা নয়াচীন-পাঠ বিশ্লেষণ’,  ‘কারাগারের রোজনামচা-পাঠ বিশ্লেষণ’ এবং হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’-এর ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য লেটার অব সাবিত্রী’র মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলা একাডেমি থেকে এবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনী ‘আমার জীবন, আমার রাজনীতি’ প্রকাশিত হবে। এ বইটিরও মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। 
প্রতিদিন বিকেল ৪টায় একাডেমি আঙিনায় মেলার মূল মঞ্চে হবে সেমিনার। সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশু-কিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে।

×