
ড. এ কে আব্দুল মোমেন
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলে সময় হলে আমরাও বিদেশীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এছাড়া বিদেশী কূটনীতিকদের প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের পরিপক্ক আচরণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোর গণমাধ্যম সেখানে কর্মরত কূটনীতিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রশ্ন করে না বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। এর আগে সকালে চ্যারিটি বাজার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন ড. মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কল্যাণমূলক সংগঠন ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশনের (ফোসা) উদ্যোগে দিনব্যাপী ‘ইন্টারন্যাশনাল চ্যারিটি বাজার’ অনুষ্ঠিত হয়।
ফোসার সামাজিক ও কল্যাণমূলক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ মেলার আয়োজন করা হয়। চ্যারিটি বাজার থেকে অর্জিত আয় আর্ত মানবতার সেবায় ব্যয় করা হবে। সকালে চ্যারিটি বাজারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহধর্মিণী ও ফোসার প্রধান পৃষ্ঠপোষক সেলিনা মোমেন।
এ সময় পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, ফোসার সভাপতি পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব)-এর সহধর্মিণী ফাহমিদা জেবিন সোমা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার এডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলম, সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, ফোসার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ফোসা পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং দর্শনার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ আয়োজনে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও বুটিক পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় করা হয়। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহের মাধ্যমে সংগৃহীত অন্যান্য দেশের পণ্যসামগ্রীও চ্যারিটি বাজারে স্থান পায়। ঢাকায় বিদেশী দূতাবাসগুলোর মধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, রাশিয়া, তুরস্ক, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের দূতাবাসও এই চ্যারিটি বাজারে অংশগ্রহণ করে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার জন্য রাশিয়ার ২০-২১ জন কূটনীতিককে বের করে দিয়েছে। তারা শক্তিশালী দেশ বলে অনেক কিছুই পারে। আমাদের সেই শক্তি নেই বলে আমরা এই পথে যাই না। তবে সময় হলে আমরাও বিদেশীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব।
ড. মোমেন বলেন, এটা দুঃখজনক যে কিছু লোক বিদেশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তারা চান বিদেশীরা কিছু বলুক। তবে বিদেশীরা যখন স্বদেশের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তখন সে দেশের আর মঙ্গল হয় না। আপনি আফগানিস্তানের দিকে দেখেন, বিদেশীদের জ্বালায় কি কষ্টে আছে। চিলিতে একই ঘটনা ঘটেছিল। চিলির নির্বাচিত সরকারও বিদেশীদের জ্বালায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমাদের কিছু লোক বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দেয়। তারা যখনই মাতব্বরি করেছেন, তখন ওই দেশের অবস্থা খারাপ হয়েছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিদেশী রাষ্ট্রদূতকে এক পয়সাও পাত্তা দেয় না। ভারতেও বিদেশীরা অনেক কিছু বলে, তারাও পাত্তা দেয় না। যাদের সম্মান আছে, তারা বিদেশীদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে না। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, যেখানেই তারা এসেছেন, সমস্যা হয়েছে। এজন্য ওদের পরামর্শ শোনার প্রয়োজন নেই আমাদের। তবে তারা বলতে পারেন, আমরা শুনতে পারি। তারা যদি আমাদের কিছু জানাতে চান, আমাদের জানাতে পারেন। ড. মোমেন বলেন, বিদেশীদের কাছে মায়াকান্না না করে বিরোধী দলের জনগণের কাছে গেলেই ভালো হবে।
প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর কবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। জাপানে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মতো বড় আয়োজন করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া সেখানে কিছুটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালেও করোনার কারণে প্রধানমন্ত্রীর সফর স্থগিত করা হয়েছিল।