ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিখোঁজ যুবক হোসেইন নিষিদ্ধ সংগঠনে!

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ৭ অক্টোবর ২০২২

নিখোঁজ যুবক হোসেইন নিষিদ্ধ সংগঠনে!

.

প্রায় চার মাস ধরে নিখোঁজ থাকা মাদ্রাসা শিক্ষার্থী যুবক হোসেইন (২৩) কোন নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না এ নিয়ে এলাকায় ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের দোভাষীপাড়া গ্রামের কৃষক হারুন-অর রশীদ ও জাহানারা দম্পতির তৃতীয় সন্তান হোসেইন কোরবানির ঈদের তিনদিন পরে বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে সকল কাগজপত্র নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়। এরপর কখনও কখনও মোবাইল করেছে বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু হোসেইন কোথায় আছে তা কাউকে জানায়নি। নিখোঁজ হোসেইনের যমজ ভাই হাসান কুয়াকাটায় বাণিজ্যিক ক্যামেরাম্যান। বড় ভাই আব্বাস ভ্যান চালক ও সবচেয়ে ছোট ভাই রবিউল দোভাষীপাড়া মাদ্রাসার ছাত্র। এদের রয়েছে এক বোন। একদম দরিদ্র পরিবার।
মা জাহানারা বেগম জানান, বাড়িতে থাকাকালে হোসেইন অধিকাংশ সময় একা একা থাকত। কোন কাজকর্ম করত না। মোবাইলে কল আসলে ঘর থেকে বাইরে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলত। মাঝে মাঝে বলত হোসেইন, ‘আমি যদি কোথাও যাই তাইলে চিন্তা করবা না। এমনকি মারা গেলেও মনে করবা শহীদী মৃত্যু।’ এমনসব অসংলগ্ন কথাবার্তা বলত হোসেইন। বর্তমানে র‌্যাবের অভিযানে ঢাকায় গ্রেফতার হওয়া সাতজনের জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার খবর ছবিসহ প্রকাশ পেলে ওই পরিবারের অন্য সদস্যদের ছবি দেখানো হয়। কারণ গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজনের নাম হোসাইন। কিন্তু ওই ছবির মধ্যে দোভাষীপাড়ার হোসেইন নেই বলে যমজ ভাই হাসান নিশ্চিত করেন। বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকা হোসেইনকে নিয়ে গোটা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চলছে। হোসেইনের সঙ্গে স্থানীয় কার কার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা এ পরিবারের কেউ নিশ্চিত করেননি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৪ মে কুয়াকাটার আজিমপুর গ্রামে জামায়াত শীর্ষনেতা মাওলানা নুরুল ইসলামের বাড়িতে গোপন সভা চলাকালে পুলিশ হানা দেয়। তখন পুলিশ দুইজনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া সেখান থেকে জামায়াতের কুয়াকাটার সাংগঠনকি কর্মকান্ডের পরিকল্পনার খাতাপত্র, চাঁদা আদায়ের রশিদ, চাঁদা দাতাদের রশিদ বই, নগদ টাকা, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন উপকরণ জব্ধ করে। একই তারিখ মহিপুর থানার তৎকালীন এসআই মনিরুজ্জামান ১৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলায় আসামিদের মধ্যে জামায়াতের পাঁচ নারী কর্মী হলেন, মেহের আলীর স্ত্রী মোসাঃ জয়নব রানী, মাওলানা হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মোসাঃ নাজমা হাবিব, মাওলানা আব্দুল মান্নানের মেয়ে মোসাঃ জোবায়দা, মাওলানা আব্দুল মান্নানের স্ত্রী মোসাঃ হালিমা ও অপর একজন মোসাঃ তাসলিমা। এখানে সবার স্বামীর নাম উল্লেখ থাকলেও স্বামীর নাম গোপন করেছিলেন মোসা জোবায়দা। তিনি মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল কলেজের শিক্ষক। এরা ছাড়াও বেশ কয়েকজন মাদ্রাসা, কলেজ ও স্কুল শিক্ষক রয়েছেন যাদের এসব কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। দেশের মধ্যে নাশকতার ষড়যন্ত্রসহ সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধিকরণ এবং নিষিদ্ধ কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি এসব কাজে অর্থায়নের অভিযোগে কুয়াকাটা অঞ্চলের পাঁচ নারীসহ জামায়াতের ১৬ নেতা-কর্মী ফেঁসে যাচ্ছেন বলে তৎকালীর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাফিজুর রহমান বলেছেন। তখন মহিপুর থানা পুলিশ এদের সকলের গোপন কর্মকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছে।
মূলত বর্তমানে নিখোঁজ থাকা হোসেইনের খোঁজ পেলে তার নিরুদ্দেশ হওয়ার বিষয়টি জানা যাবে। পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা শাখা এ বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

×