
খলিলুর রহমান
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খলিলুর রহমান। গ্রেফতার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন ও একা বসবাস করতেন। মোবাইল ব্যবহার করতেন না। মাঝে মাঝে গোপনে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেন। সাভারে আত্মগোপনে থেকেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। অবশেষে র্যাবের জালে ধরা পড়েন ৭১ এর এই নরঘাতক। মঙ্গলবার রাতে সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তার বিরুদ্ধে নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে ধ্বংস করা, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ ও গণহত্যায় জড়িত ছিলেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন জানান, ২০১৫ সাল থেকে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই খলিলুর পলাতক ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি রাজধানীর দক্ষিণখান, তুরাগ ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। গ্রেফতার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন ও একা বসবাস করতেন। এমনকি যোগাযোগের জন্য তিনি মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতেন না।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর ২০১৭ সালের ৯নং মামলার অভিযোগপত্র তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি খলিলুর রহমানসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে খলিলুর রহমানের ভাই আজিজুর রহমান, একই এলাকার আলমপুর ইউনিয়নের মৃত তরাব আলীর ছেলে আশক আলী, জানিরগাঁও ইউনিয়নের কদর আলীর ছেলে শাহনেওয়াজ এবং একই এলাকার রমজান আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এরপর পাঁচ আসামির মধ্যে খলিলুর রহমান ছাড়া অন্যদের কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে বিচারকালীন বিভিন্ন সময় চার আসামি মৃত্যুবরণ করেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের চারটিতে মৃত্যুদ- ও একটিতে ১০ বছরের সাজা ঘোষণা করেন। পরে র্যাব দণ্ডিত পলাতক আসামি খলিলুর রহমানকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এতে সফলতা আসে। মঙ্গলবার রাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে খলিলুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে খলিলুর রহমান র্যাবকে জানান, মামলার তদন্ত কাজ শুরু হলে ২০১৫ সাল থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। ২০১৭ সালে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে গৃহীত হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। রাজধানীর দক্ষিণখান, তুরাগ ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করেন। আত্মগোপনে থাকাকালীন গ্রেফতার এড়াতে তিনি নিয়মিত বাসা পরিবর্তন ও একা অবস্থান করতেন। যোগাযোগের জন্য মোবাইলফোনও ব্যবহার করতেন না। পরিবারের সদস্যরা গোপনে তার সঙ্গে দেখা করতেন। ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত অর্থ প্রদান করতেন।