ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম ৯০ দিন

পদ্মা সেতুতে টোল আদায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

পদ্মা সেতুতে টোল আদায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা

.

 পদ্মা সেতু চালুর প্রথম ৯০ দিনে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৯১৪টি যানবাহন চলাচলে টোল আদায় হয়েছে ১শ’ ৯৫ কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার ৩৫০ টাকা। আধুনিক পিটিজেড কন্ট্রোল ক্যামেরার মাধ্যমে সেতুর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। চলতি বছরই সেতু পুরোপুরি ‘এ্যাডভান্স ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ এর আওতায় আসবে। এছাড়া সেতুতে রোবটিক ক্যামেরা স্থাপনের প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত পর্যায়ে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রেল লাইন চালু হলে আসবে বার্ষিক টোল, এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুত ও ব্রডব্যান্ড লাইন থেকেও মিলবে টোল। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে প্রতি বছর সরকারের অর্থ বিভাগকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার কথা রয়েছে প্রায় ৮২৬ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর ব্যবস্থাপনায় চলছে আধুনিকায়ন। ইতোমধ্যে পিটিজেড, ডোম, বুলেট ও ফিসআই এমন চার ধরনের ৩৪টি ক্যামেরা সেতুর দুই প্রান্তের টোল প্লাজায় স্থাপন করা হয়েছে । এছাড়া সেতুতে রোবটিক ক্যামেরা স্থাপনের প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) সহকারী প্রকৌশলী রঞ্জন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সবদিকে ১৮০ ডিগ্রী পর্যন্ত সমানভাবে ঘুরে হাই রেজ্যুলেশন ভিডিও গ্রহণে সক্ষম পিটিজেড কন্ট্রোল ক্যামেরা পদ্মা সেতুর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ভূমিকা রাখছে। পদ্মা উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসাইন বলেন, সেতুতে এ পর্যন্ত চারটি সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়। আর সেতু চালুর প্রথম দিনের বাইক দুর্ঘটনার পর মোটরবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। কয়েকটি দুর্ঘটনা ভাবিয়ে তুললেও এখন নিয়ন্ত্রণে চলছে পরিকল্পনা। পদ্মা সেতু চালুর প্রথম তিন মাসেই যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। সড়ক যোগাযোগে বিরাট পরিবর্তন ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা ও কৃষি ভিত্তিক অর্থনৈতিতে চারদিকে ইতিবাচক পরিবর্তন। স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতু চালুর তিন মাসেই বিস্ময়কর পরিবর্তন কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যের দুয়াল খুলে দিয়েছে।
পদ্মা সেতুর আয়-ব্যয় পরিকল্পনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচলের পূর্বাভাস তৈরি করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। পরে ২০১০ সালে নক্সা প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ৩৫ বছরের যানবাহনের সংখ্যা এবং আয়ের ছক তৈরি করে। এর ওপর ভিত্তি করে ২০১৯ সালের আগস্টে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে আয়, ব্যয় ও মুনাফা নিয়ে সম্ভাব্য হিসাব করা হয়েছে। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এই টাকা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ১ শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হবে। প্রকল্পের মেয়দ শেষেই এই ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে দায়িত্বশীল এই প্রকৌশলী প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বৃদ্ধির বিষয়ে চেষ্ট করা হবে বলে আভাস দেন।
তিন মাস পর পর কিস্তি পরিশোধ করার কথা, সব মিলিয়ে ১৪০ কিস্তিতে ঋণের টাকা (সুদ ও আসলে) পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে। তাই দায়িত্বশীলরা মনে করছেন, সেতু চালুর পরের কয়েক বছর মুনাফা হবে না। ২০২৯ সালে গিয়ে কিস্তি পরিশোধের পর মুনাফা করতে থাকবে সেতু বিভাগ। ২০৫০ সাল নাগাদ পদ্মা সেতু থেকে মুনাফা হবে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন চলাচলের একটি হিসাব তৈরি করেছে সেতু বিভাগ। এই চিত্র ধরেই পদ্মা সেতু থেকে আয়ের একটা প্রাথমিক ধারণা করা হয়। বিআইডব্লিউটিসির হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ফেরিতে যানবাহন পারাপার হয়েছে সাড়ে আট লাখ। এ হিসেবে প্রতিদিন গড়ে মোটরসাইকেলসহ যানবাহন পারাপার হয়েছে ২ হাজার ৩৩০টি। পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল- চলতি বছর প্রতিদিন গড়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ২৩ হাজার ৯৫৪টি যানবাহন চলাচল করবে। কিন্তু মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করায় বর্তমানে যান সংখ্যা তুলনামূলক কম। সবশেষ হিসাব মতে এখন গড়ে যান চলাচল করছে ১৫ হাজার ৬শ’র কিছু বেশি। আর এখন প্রতিদিনের গড় আয় এখন ২ কোটি ১৭ লাখ টাকার বেশি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা আছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। তন্মেধ্যে জাপান সরকারের ঋণ মওকুফ ফান্ডের অর্থ ৩০০ কোটি টাকা। যা আর পরিশোধ করতে হবে না। ফলে সেতু বিভাগকে আসল হিসেবে ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। এর সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ হারে সুদ গুণতে হবে। অর্থাৎ সুদ-আসলে ৩৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিতে টোলের টাকা ব্যয়ের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সেতুর সাধারণ রক্ষণাবেক্ষণে টোল আয়ের সাড়ে ৭ শতাংশ ব্যয় হবে। এর মধ্যে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের খরচও আছে। রয়েছে ভ্যাট। প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস জানান, ১০০ বছরেরও বেশি টেকসই হবে সেতু। তবে প্রতি ১০ বছর অন্তর অন্তর সেতু সংস্কারের বিষয়টিও রয়েছে।

 

×