পদ্মা সেতু
কল্পনাকেও হার মানিয়েছে পদ্মা সেতু। মাত্র সোয়া তিন ঘণ্টায় খুলনা। এক ঘণ্টায় ভাঙ্গা। এ যেন বিমানকেও হার মানিয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ এটি। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা যেতে তিন জায়গায় টোল দিতে হচ্ছে। তবে তা খুব বেশি নয়। ছোট গাড়িতে আগের তুলনায় ২০৫ টাকা বেশি। এতে খুশি সাধারণ মানুষ। এবার ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি থাকবে না বলে অনেকেই মনে করছেন।
জুলাই মাসে শুরু হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে (ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) টোল আদায়। প্রথম দিনে টোল প্লাজাগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ লাইন তৈরি হলেও শনিবার থেকে তা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রথম দিন টোল প্লাজা সীমিত থাকায় দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। একই সঙ্গে বেড়েছে গাড়ির চাপ। সব মিলে প্রথম দিন পরিস্থিতিটা একটু ভিন্ন ছিল।
পদ্মা সেতু চালু করায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বেজায় খুশি। সাধারণ মানুষের মুখে সরকারের জয়গান। খুশিতে মানুষ জনদরদি, উন্নয়ন সম্রাজ্ঞী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করছে। একই সঙ্গে তারা বলছেন দেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে (ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) দ্বিতীয় দিনে টোল আদায়ের চাপ অনেকটাই কমেছে। আগের দিন থেকে গাড়ির চাপ কম থাকায় এবং যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে টোল আদায়ের গতি বাড়ায় শনিবার সকালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
দুপুর ১২টার দিকে ভাঙ্গা পৌরসভার বগাইল টোল প্লাজা ফাঁকা দেখা গেছে। শুক্রবার এখানে তিন থেকে চার কিলোমিটার দীর্ঘ জট তৈরি হয়েছিল। এখন খুব কম সময়ে টোল পরিশোধ করে গাড়িগুলো যেতে পারছে। শুক্রবার এক্সপ্রেসওয়েতে যানজটের কারণ ছিল টোল আদায়ে ধীরগতি। ভাঙ্গার বগাইল টোল প্লাজার ১০টি টোল বুথের মধ্যে সচল ছিল চারটি। এ কারণে যানবাহনের সারি তৈরি হয়ে যায়।
পরে তিনটি বুথ চালু করা হয়। তখন একসঙ্গে সাতটি বুথ টোল আদায় শুরু করে। এতে টোল আদায়ের গতি বৃদ্ধি পায়। শনিবার আরও একটি চালু করে এখন মোট আটটি বুথে টোল আদায় হচ্ছে। এতে যানজট দূর হয়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত সড়কে স্বাভাবিক চিত্র দেখা গেছে।
ফরিদপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করা গোল্ডেন লাইন পরিবহনের এক চালক জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৫টায় ফরিদপুর থেকে রওনা দিই, ঢাকায় পৌঁছাই ৭টা ৫ মিনিটে। আবার সকাল সোয়া ৮টায় রওনা দিয়ে ১০টার মধ্যে ফরিদপুর চলে আসি। টোল আদায় দ্রুত হওয়ায় এত অল্প সময়ে যাতায়াত সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
বরিশাল থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন হক সাহেব নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, টোল দিতে খুবই কম সময় লেগেছে, এক মিনিটেরও কম। টোল প্লাজায় কোন যানজট নেই, ভিড় নেই। টোল নেয়ার ক্ষেত্রে এ গতি রাখতে পারলে সবার উপকার হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
টোল আদায়ে নিয়োজিত কর্মী এম ডি ইব্রাহিম বলেন, বগাইল টোল প্লাজায় আসা-যাওয়া মিলে মোট ১০টি কাউন্টার। এর মধ্যে শনিবার পর্যন্ত চারটি করে মোট আটটি বুথ চালু হয়েছে। বাকি দুটির কারিগরি কাজ চলছে। আশা করছি দুই এক দিনের মধ্যে ওই দুটি বুথও চালু করা সম্ভব হবে। সব বুথ চালু হলে ঈদে যানজট হবে না।
টোল প্লাজার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু হোসেন জাকারিয়া বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ লাখ চার হাজার ৬৪০ টাকার টোল আদায় করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে এ পথে গাড়ির চাপ বাড়বে। সে প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ১০টি বুথ চালু হলে আমাদের এখানে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
পদ্মা সেতুসহ ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যেতে আগের তুলনায় টোল বেড়েছে ৩০ শতাংশ। আগে একটি প্রাইভেট কারকে ঢাকা থেকে বের হতে বুড়িগঙ্গা সেতুতে টোল দিতে হতো ৪০ টাকা, মুন্সীগঞ্জের জোড়া ব্রিজে টোল দিতে হতো ৬০ টাকা, টার্মিনাল ফি দিতে হতো ৪০ টাকা। ফেরি পারের জন্য ৫০০ টাকা, ফেরিতে বকশিশ ছিল ১০ টাকা, আড়িয়াল খাঁ ব্রিজের টোল দিতে হতো ৩৫ টাকা। এতে মোট খরচ ছিল ৬৮৫ টাকা। বর্তমানে ভাঙ্গা পর্যন্ত যেতে খরচ এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিতে হচ্ছে ৮৫ টাকা, পদ্মা সেতুর টোল ৭৫০ টাকা, আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে টোল দিতে হচ্ছে ৫৫ টাকা। সব মিলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা যেতে মোট খরচ হচ্ছে ৮৯০ টাকা। এতে একটি প্রাইভেট কারে খরচ বেড়েছে ২০৫ টাকা। যা আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ভাঙ্গাগামী ৫৫ কিলোমিটার এই এক্সপ্রেসওয়ের নাম দেয়া হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক। এর মধ্যে ভাঙ্গা অংশে পড়া এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় করা হয় ভাঙ্গা গোল চত্বরের অদূরে ভাঙ্গা পৌরসভার বগাইল নামক স্থানে। ওই জায়গায় আসা-যাওয়ার ১০টি লেনে ২৩ কিলোমিটার অংশের টোল নেয়া হচ্ছে।