স্টাফ রিপোর্টার॥ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে নতুন চার বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে তিন বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। শপথগ্রহণকারী বিচারপতিগণ হলেন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। অন্যদিকে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান করোনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি আছেন। সে কারণে শপথ অনুষ্ঠানে আসেননি। তিনি সুস্থ হলে পরে তার শপথ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এই তিন বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান। নতুন চারজনকে নিয়ে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ আদালতে প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতির সংখ্যা এখন দাঁড়াল আটজনে।
শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ আলী আকবর। এ সময় সুপ্রীমকোর্টের আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রবিবার সকালে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব (দায়িত্বপ্রাপ্ত ) মোঃ গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে আপীল বিভাগে চার বিচারপতির নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথকে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করেছেন। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ॥ ১৯৫৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বোরহান উদ্দিন। তাঁর পিতার নাম আব্দুস সবুর এবং মাতার নাম মমতাজ সবুর। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের ৩ মার্চ অধঃস্তন আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হন তিনি। এর তিন বছর পর ১৯৮৮ সালের ১৬ জুন সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ২০০২ সালের ২৭ নবেম্বর আপীল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৮ সালের ১৬ নবেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ॥ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য প্রয়াত আইনজীবী এম আব্দুর রহিমের সুযোগ্য সন্তান বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম। ১৯৬০ সালের ১১ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন ইনায়েতুর রহিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করার পর এলএলবি ডিগ্রী নেন। ১৯৮৬ সালের ১০ অক্টোবর অধঃস্তন আদালতে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। তিন বছর পর ১৯৮৯ সালের ২ জানুয়ারি সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০০২ সালের ১৫ মে আপীল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। আপীল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ২০০৫ সালে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। এ ছাড়া তিনি অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ॥ ১৯৫৫ সালের ১৫ ফেরুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন নাজমুল আহাসান। তাঁর পিতার নাম আনোয়ার হোসেন এবং মাতার নাম জাহানারা বেগম। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তিনি এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালের ১৮ মার্চ অধঃস্তন আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। এর পর ১৯৯৪ সালের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এবং ২০০৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর আপীল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ॥ ১৯৫৫ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণা দেবনাথ। তার পিতার নাম দিনেশ চন্দ্র দেবনাথ এবং মাতার নাম বেণু দেবনাথ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেন। বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর বিচার বিভাগে মুনসেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পদোন্নতি পেয়ে ১৯৯৮ সালের ১ নবেম্বর জেলা ও দায়রা জজ হন তিনি।
বিচার বিভাগের দুর্নীতি দূর করতে সবাইকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান ॥ বিচার বিভাগ থেকে দুর্নীতি দূর করতে সবাইকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আপীল বিভাগের নবনিযুক্ত বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম। তিনি বলেছেন, ‘বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি রোধ করতে শপথের যথাযথ চর্চা করতে আমি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।’ রবিবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের ১নং বেঞ্চে তিন বিচারপতিকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে তিন বিচারপতির শ্রদ্ধা ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও জাতীয় স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি। পরে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন তারা। রবিবার বিকেলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিন বিচারপতি। এ সময় আপীল বিভাগের নতুন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ছাড়াও সুপ্রীমকোর্টের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।