ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

টেকসই উন্নয়নের জন্য চাই ঐক্যবদ্ধ সামাজিক শক্তি

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ২৭ অক্টোবর ২০২১

টেকসই উন্নয়নের জন্য চাই ঐক্যবদ্ধ সামাজিক শক্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ সামাজিক শক্তি প্রয়োজন-আজ বিডিসিএসও প্রক্রিয়ার বার্ষিক সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে এই অভিমত প্রকাশ করেন। তাঁরা আরও বলেন, সামাজিক এই শক্তি বা পুঁজি তৈরি উন্নয়ন করতে প্রয়োজন উন্নয়ন ও উন্নয়ন সহযোগিতাগুলোর স্থানীয়করণ, অন্তর্ভুক্তি বা ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এবং সহনশীলতার মানসিকতা। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য এই ধরনের সামাজিক শক্তি অপরিহার্য এবং সামাজিক মূলধনকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চারটি নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁরা আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে গ্র্যান্ড বার্গেইন, উন্নয়ন কার্যকারিতা এবং চার্টার ফর চেঞ্জ আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করার জন্য আহ্বান জানান। ‘বৃহত্তর নাগরিক সমাজ সংগঠন বিকাশে অন্তর্ভুক্তিমূলক-সহনশীলতার সংস্কৃতি’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি ড. আতিউর রহমান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৃটিশ হাইকমিশনের ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর জুডিথ বারবার্টসন, ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশনের ইগনাসিও প্যাকার এবং বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর’র প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাউ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন হিউম্যানিটারিয়ান এইড ইন্টারন্যাশনাল-এর সুধাংশু শেখর সিং (ভারত), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের শরীফ জামিল এবং ক্রেডিট ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি মোর্শেদ আলম সরকার। এতে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তৃতা করেন আরপিএস’র আকবর হোসেন, আফাদ’র সৈয়দা ইয়সমিন, এবং বিএনএনআরসি’র এএইচএম বজলুর রহমান। অধিবেশন পরিচালনা করেন মোস্তফা কামাল আকন্দ ও ইকবাল উদ্দিন, স্বাগত বক্তৃতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিডিসিএসও প্রক্রিয়ার জাতীয় সমন্বয়ক রেজাউল করিম চৌধুরী। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বিডিসিএসও প্রক্রিয়া দেশব্যাপী প্রায় ৬০০টি তৃণমূল সিএসও/এনজিওর একটি ফোরাম। ড. আতিউর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভ্যাকসিন নিয়েও এক ধরনের বর্ণবাদ এবং দ্বন্দ্ব রয়েছে, অথচ বাংলাদেশ তার সীমিত সামর্থ্য নিয়েই লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, এটা আমাদের জণ্য অবশ্যই গর্বের একটি বিষয়। রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক শক্তি ও সম্প্রদায়ের উদ্যোগ খুবই সীমিত, এটি এটা আমাদের অর্থনীতির ওপর বিশাল চাপ, কিš‘আমরা তাদের মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশীরা নৈতিকতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা সবার জন্য প্রযুক্তি নিশ্চিত করব। সুধাংসু শেখর সিং বলেন যে, অন্তর্ভুক্তি এবং সহনশীলতার ক্ষেত্রে ভিন্নমতকেও শুনতে হবে এবং সমালোচনামূলক সুশীল সমাজ বিকাশের সুযোগ রাখতে হবে। তিনি ধনী দেশের পরামর্শ মতো কাজ না করে তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক সমাজকে তাদের নিজস্ব বিষয়বস্তু তৈরি করার আহ্বান জানান। জুডিথ হারবার্টসন বলেন, ব্রিটিশ জনগণ স্থানীয়করণ এবং স্থানীয় সুশীল সমাজকে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যে স্থানীয় এনজিও/সিএসওগুলির সাথে যৌথ চাহিদা মূল্যায়ন এবং সমন্বয় কাঠামো রয়েছে আমাদের। ব্রিটিশ সরকার এখানে একটি প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ দেখতে চায়। ইগনাসিও প্যাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যার প্রতি দায়বদ্ধতার উপর গুরুত্ব দেন, এনজিও বা সিএসওগুলোকে একে অপরের কথা শুনতে হবে, সুশীল সমাজ হিসাবে আমাদের একটি সাধারণ ন্যূনতম অবস্থান দরকার, স্থানীয়করণের ক্ষেত্রে আমাদের ভাল উদাহরণ তৈরি করতে হবে। জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাওউ উল্লেখ করেন যে, ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়, ইউএনএইচসিআর ক্যাম্পে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে সরকারের সঙ্গে রয়েছে। তিনি বাংলাদেশি জনগণ ও সরকারের ব্যতিক্রমী উদারতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মোর্শেদ আলম সরকার বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বাংলাদেশী সিএসও/এনজিওর সক্ষমতার ঘাটতির দিকে অতি মনযোগ দেওয়া উচিৎ নয়। তাদের উচিত স্থানীয় এনজিওগুলোকে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনার ভার ছেড়ে দেওয়া। এএইচএম বজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পরবর্তী সময়ের জন্য বাংলাদেশের এনজিওগুলোকে প্রস্তত করতেও স্থানীয়করণ প্রয়োজন।
×