ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

প্রথমদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস প্রতিদিন বাকিদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে

১২ তারিখেই ক্লাস শুরু ॥ খুলছে স্কুল-কলেজ

প্রকাশিত: ২২:১৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

১২ তারিখেই ক্লাস শুরু ॥ খুলছে স্কুল-কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হচ্ছে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর। ওইদিন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণীকক্ষে ক্লাস শুরু হবে। প্রথম দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে ক্লাসের সময় বাড়ানো হবে। প্রথম দিকে ২০২১ সালে যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাদের প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে। এছাড়াও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে আসবে। তবে বাকিরা সপ্তাহে একদিন স্কুলে যাবে। জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া থাকবে। যদি মনে হয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, তাহলে পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দেশে নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার কমছে। জুলাই মাসের তুলনায় সংক্রমণ ৭০ শতাংশ কমেছে। সংক্রমণ কমার কারণেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের অধিকাংশকে টিকার আওতায় আনলেও ক্লাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সবাইকে মাস্ক পরিধান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে রবিবার শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে, শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে স্কুলে প্রবেশ করাতে হবে। স্কুলে আপাতত কোন এ্যাসেম্বলি হবে না। তবে ফিজিক্যাল এ্যাক্টিভিটি বা খেলাধুলা চলবে, যাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভাল অবস্থানে থাকতে পারে। বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শুরুর দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর পর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে চেকলিস্ট পূরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। র‌্যান্ডম স্যাম্পলিং করে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলাকালে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সেই সম্পর্কে প্রচার চালাতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তা নেয়া হবে। এছাড়া অভিভাবকরা যখন তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাবেন তখন তার পরিবারের কেউ কিংবা শিক্ষার্থীর করোনার উপসর্গ নেই তাদের তা নিশ্চিত করতে হবে। অভিভাবকদের তার সন্তানের মাধ্যমে যেন অন্য কোন শিক্ষার্থী সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে বলা হবে। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে শিক্ষা অধিদফতর থেকে রবিবার একটি গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে। গাইডলাইন অনুসারে শিক্ষার্থীরা যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবে তখন করোনা সম্পর্কিত যত ধরনের গাইডলাইন, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) যা যা হালনাগাদ করা হয়েছে তার ভিত্তিতে শিক্ষক ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিনের শারীরিক তাপমাত্রা মাপা, কারও কোন উপসর্গ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা এবং শ্রেণীকক্ষে সবার মুখে মাস্ক পরা আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করবেন। মাস্ক ছাড়া কাউকে ক্লাসে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এক্ষেত্রে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের মুখে মাস্ক পরিয়ে ক্লাসে পাঠাবেন। গাইডলাইন অনুসারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বেঞ্চের দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুটের কম হলে প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসতে পারবে। বেঞ্চের দৈর্ঘ্য পাঁচ থেকে সাত ফুট হলে প্রতি বেঞ্চে দুজন করে শিক্ষার্থী বসতে পারবে। যদি বেঞ্চের দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুট বা তার বেশি হয়, তবে প্রতিটি বেঞ্চে দুজন করে ছয়টি বেঞ্চে ১২ শিক্ষার্থী বসতে পারবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার জন্য কয়েকটি ধাপের কথা বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। এই নির্দেশিকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার জন্য যে ধাপগুলো বিবেচনা করা হয়েছে, তা হলো নিরাপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরাপদে চালু করা এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলাকালে করোনার বিস্তাররোধে পদক্ষেপ নেয়া। এদিকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালুকরণ শীর্ষক নির্দেশিকায় স্কুল-কলেজ খোলার আগে পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় করাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিফটিং করে নিরাপদ দূরত্বে ক্লাসে বসা, প্রথম ১৫ দিন সহ-শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি এবং দুই মাসের মধ্যে কোন পরীক্ষা না নেয়ার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে আমরা আবারও বসব। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত সেখানকার একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট নিয়ে থাকে। উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, সব শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে নিতে পারলে ভাল হয়। সেজন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার তারিখ মধ্য অক্টোবরে নির্ধারণ করেছিলাম। এখন স্কুল-কলেজের সঙ্গে যদি বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে উপাচার্যরা রাজি হন তা খুলতে পারেন বা ভিন্ন কোন তারিখ নির্ধারণ করেন- সেটা তাদের বিষয়।
×