ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শম্ভুগঞ্জ-অম্বিকাগঞ্জ সড়ক বেহাল

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ৬ জুলাই ২০২১

শম্ভুগঞ্জ-অম্বিকাগঞ্জ সড়ক বেহাল

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ সদর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের এলজিইডির শম্ভূগঞ্জ-অম্বিকাগঞ্জ সড়কের মরণদশায় চরাঞ্চলবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। চলতি বর্ষায় প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা এই দুর্ভোগকে অসহনীয় করে তুলেছে। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ইট সুরকি ও সিলকোট উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। বৃষ্টি পানি জমে এসব খানাখন্দ পরিণত হচ্ছে মরণ ডোবায়। এছাড়া সড়কের পাশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ভেঙ্গে অনেক জায়গায় সরু হয়ে গেছে। এ রকম অবস্থায় যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। বেহাল দশার কারণে বাড়তি ভাড়া গুণে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে। বোররচর, পরাণগঞ্জ, চরসিরতাসহ চরাঞ্চলের সবজি পরিবহনেও দেখা দিয়েছে অচলাবস্থায়। পরিবহন খরচ বাড়ায় কৃষকের উৎপাদিত সবজি বাজারজাতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। অথচ গত দুই বছরেও সড়ক মেরামতে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ এলাকাবাসী। স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত ১৯৯৯ সালের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পরানগঞ্জের এক জনসভায় শম্ভূগঞ্জ অম্বিকাগঞ্জ সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দেন। এলজিইডি এ সময় ঝড়ো গতিতে ১৫ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে ১৮ ফুট প্রশস্তের সড়কটি বোররচর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করে এলজিইডি। ময়মনসিংহের শম্ভূগঞ্জ থেকে বোররচর পর্যন্ত সড়কটি পাকা হওয়ায় দুর্গম বোররচর, পরাণগঞ্জ, চরসিরতাসহ চরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যদুয়ার খুলে যায়। বিশেষ করে কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনে এলজিইডির এই সড়কটি। কিন্তু সড়কটির শম্ভূগঞ্জ থেকে অম্বিকাগঞ্জ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের কিছু বেশি অংশের ইট সুরকি ও সিলকোট উঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দের। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে এসব খানাখন্দ মরণডোবায় পরিণত হচ্ছে। অম্বিকাগঞ্জ থেকে মানিকডোবা খাল পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার গ্রামের কাচা রাস্তার চেয়েও খারাপ। চরখরিচা অংশও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। অতিরিক্ত ওজনের বালু ও পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলের সময় কাদাজলে একাকার এসব খানাখন্দকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে। এ রকম অবস্থায় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করতে পারলেও অটোরিক্সা ও মাহিন্দ্র এর মতো হাল্কা যান আরোহী নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত করছে। বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রসূতিসহ জরুরী রোগীরা। এলাকাবাসী অবিলম্বে সড়কটি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন। পরানগঞ্জ ইউনিয়নের বাঘাডোবা গ্রামের আবুল হাশেম (৫০) ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সড়কটি চরাঞ্চলবাসীকে উপহার দিয়েছিলেন। অথচ সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে এলজিইডির কোন উদ্যোগ নেই। এলজিইডির ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ জানান, সড়ক বিভাগ শম্ভূগঞ্জ থেকে অম্বিকাগঞ্জ হয়ে শেরপুর জেলার নকলা উপজেলা পর্যন্ত সড়কটি নিতে চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি পাস না হওয়ায় চলতি সালের গত ফেব্রæয়ারি মাসে ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক মেরামতে ১৬ কোটি টাকার প্রাক্কলন তৈরি করে এলজিইডির সদর দফতরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিলম্বে পাঠানোর কারণে এলজিইডির সদর দফতর চলতি অর্থবছরে প্রাক্কলনটি পাস না করায় ঝুলে যায় এর মেরামত কাজ। সংস্কারের তিন মাস ॥ সড়কের পাশ ভাঙ্গা শুরু স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস থেকে জানান, তিন মাস আগে যশোরের মনিরামপুর-নওয়াপাড়া (ভায়া সুন্দলী) সড়কটি সংস্কার করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। তাতে খরচ হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। কিন্তু এরই মধ্যে সড়কের দু’পাশ ভাঙ্গতে শুরু করেছে। ঠিকাদার পাওনা টাকাও তুলে নিয়েছে। মনিরামপুর এলজিইডি সূত্র জানায়, গত মার্চে ওই সড়কের মনিরামপুর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের পশ্চিম মাথা থেকে বাহিরডাঙ্গা কচাতলা শিবমন্দির পর্যন্ত ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার সংস্কারের কাজ শেষ হয়। এতে ব্যয় হয় ২ কোটি ৫৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। যশোরের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলআরআই-এমএমআই সড়কটির সংস্কার কাজ করেছে। জানা গেছে, সড়কটির দুই পাশে অন্তত ১০ জায়গায় মাটি ধসে গেছে। দুই জায়গায় পাশের মাটি ধসে পড়ার পর সড়কটি ভেঙ্গে পাকা অংশের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে এসেছে। অবশিষ্ট অংশে ফাটল ধরেছে। মনিরামপুরের উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল হক বলেন, বৃষ্টিতে সড়কটির ক্ষতি হয়েছে। সড়কটির যে যে অংশে ক্ষতি হয়েছে, তা ঠিক করে দিতে হবে ঠিকাদারকে। সড়কের ওই জায়গাগুলো ঠিক করে দিতে গত ২১ জুন ঠিকাদারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। স্থানীয় মানুষ বলছে, রাস্তার কাজ হয়েছে খুব নিম্নমানের। ঠিকাদার রাতের বেলায় রাস্তার কাজ করেছে। অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। তাই রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়েছে। পাঁচবাড়িয়া গ্রামের অসীম কুমার রায় বলেন, মেশিন দিয়ে রাস্তার জায়গার মাটি কেটে রাস্তায় ফেলা হয়েছে। হরিদাসকাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাঁড়ে বলেন, ঠিকাদার রাতের বেলায় রাস্তার কাজ করেছেন। রাস্তায় অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে মাত্র তিন মাসের মধ্যে রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়েছে। যদিও ঠিকাদার শাহারুল ইসলাম দাবি করেন, সড়কটির পাশের মাটি ভাল না। বর্ষায় মাটি গলে যায় এবং গরমে মাটি পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। খুব ভাল করে সড়কের কাজটি করা হয়েছে। এলজিইডি যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আনিসুজ্জামান বলেন, সড়কটি সরেজমিনে দেখার জন্য লোক পাঠানো হচ্ছে। সড়কটির ক্ষতি হয়ে থাকলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক বছরের মধ্যে সড়কের কোন সমস্যা হলে ঠিকাদার ঠিক করে দেবেন।
×