ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ভাদ্র পূর্ণিমার স্নিগ্ধ আলো, গৃহত্যাগী হবার মতো জোছনা

প্রকাশিত: ২১:৫০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

ভাদ্র পূর্ণিমার স্নিগ্ধ আলো, গৃহত্যাগী হবার মতো জোছনা

মোরসালিন মিজান ॥ চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো...। সেই চাঁদ, সেই উছলে পড়া মায়াবী আলোয় ভেসে যাচ্ছে রাজধানী! দেখে চমকিত না হয়ে পারা যায় না। এত্ত বড় চাঁদ আর অপরূপ পূর্ণিমায় আপ্লুত হয়ে লোকগানের অনন্য শিল্পী বারী সিদ্দিকী গেয়েছিলেন, ‘যতই তোরে ভালবাসি মিটে না মিটে না স্বাদ/বন্ধু তুমি আমার ভাদ্র মাসের পূর্ণিমারই চাঁদ।’ হ্যাঁ, এখন ভাদ্র মাস। আর যে পূর্ণিমা উপভোগ করছেন সবাই, সেটি ভাদ্র পূর্ণিমা। মধু পূর্ণিমাও বলা হয় একে। এই কিছুদিন আগে ভীষণ দাপট ছিল বর্ষার। আষাঢ় শ্রাবণ দুই মাস বেদম বৃষ্টি হয়েছে। বাকি সময় কালো মেঘে ঢাকা ছিল আকাশ। অঝর ধারার ফাঁকে ফাঁকে কখনও সখনও চাঁদ দেখা গেছে বটে, আলো অত উজ্জ্বল ছিল না। এলোমেলো উড়তে থাকা কালো ঘোলাটে মেঘ আষাঢ়ে পূর্ণিমাকে সেভাবে প্রকাশিত হতে দেয়নি। তবে এখন আকাশের বুকে রাজাধিরাজের মতো জেগে উঠেছে বিশাল ঝকঝকে চাঁদ। মিষ্টি আলোয় নগরবাসীকে মুগ্ধ করে রেখেছে ভাদ্র পূর্ণিমা। সনাতনী হিসাব মতে, ভাদ্র মাসে দুটি একাদশী তিথি, দুটি অমাবস্যা ও একটি পূর্ণিমা তিথির যোগ রয়েছে। বর্তমানে আকাশে রয়েছে পূর্ণিমা তিথির চাঁদ। ফলে আগের মতোই সন্ধ্যা নামছে। গভীর হচ্ছে রাত। কিন্তু অন্ধকারে আর ডুবছে না সব। জ্বলজ্বল করছে রাতের পৃথিবী। শুক্রবার রাতে প্রসঙ্গটি তুলতেই বাংলাদেশ এস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সহসভাপতি এফ আর সরকার বললেন, দাঁড়ান, আমি চাঁদটা আরও একবার দেখে আসি। দেখে এসে তার বক্তব্য- বেশ বড় চাঁদ। নজরকাড়া আলো। গত বুধবার রাত ১১টা ২২ মিনিটে ফুল মুন বা পূর্ণ চাঁদ হিসেবে এর জন্ম হয়। এখন কিছুটা কমে ৯৪ শতাংশ হয়েছে। এভাবে ক্রমে ছোট হতে থাকবে। তাই বড় থাকতে থাকতেই চাঁদটি দেখার পরামর্শ দেন তিনি। আমার নিজের ভাদ্র পূর্ণিমা দেখা হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরেই। প্রথম দিনের কথা যদি বলি, তখন মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। ঘুমোতে যাব। তার ঠিক আগে দরজা খুলে বারান্দায় পা ফেলতেই চেনা জায়গাটিকে কেমন যেন নতুন মনে হলো। মিষ্টি একটা আলো কোত্থেকে এসে ঠিক পায়ের কাছে বিছিয়ে পড়েছে। সৃষ্টি করেছে অদ্ভুত মায়াবী এক জগত। কিন্তু বিপরীত দিকে বেশ উঁচু একটি এ্যাপার্টমেন্ট হাউস। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছিল কোন একটি বাসার জানালা হয়ত সম্পূর্ণ খুলে দেয়া হয়েছে, গুটিয়ে নেয়া হয়েছে পর্দা, এ কারণে এলইডি বাতির আলো বাধাহীনভাবে আমার বারান্দা পর্যন্ত চলে এসেছে। কিন্তু ভাল করে লক্ষ্য করে দেখা গেল, সব বাসা বাড়ি অন্ধকার। ঘুমে কাতর বাসিন্দারা। অমনই মনে পড়ে গেল ভাদ্র মাস এখন। এ আলো ভাদ্র পূর্ণিমার আলো! একটু উঁকি দিয়ে আকাশের পানে তাকাতেই চোখে পড়ল রুপোর থালার মতো চাঁদ! চাঁদের আলোয় রাতের অন্ধকার দৌড়ে পালিয়েছে। বারান্দার মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে চোখে আরাম দেয় এমন আলো। বোঝা যাচ্ছিল টবের গাছগুলোর কোনটিতে কামিনী ফুটেছে, কোনটিতে অর্কিড। অথচ বাতি জ্বালানো হয়নি! লোহার রড দিয়ে চারপাশ আটকানো বারান্দা। কী আশ্চর্য! আলোটাও সেভাবে কেটে কেটে ভেতরে ঢুকেছে। তাতে করে যে আল্পনা চোখের সামনে ভেসে উঠল, আর কিছুর সঙ্গে এর তুলনা হয় না। এমন চোখ জুড়ানো রাত দেখেই হয়ত রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদ উঠেছিল গগনে।/দেখা হয়েছিল তোমাতে আমাতে কী জানি কী মহা লগনে...।’ মহা লগনটিই চলছে এখন। ‘পূর্ণিমা সন্ধ্যায় তোমার রজনীগন্ধায়/রূপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়...।’ মন সেদিকে ধেয়ে যেতে চাইছে। নজরুলের অনুভূতির কথাও স্মরণ করা যেতে পারে। কিছুটা বেদনা বোধ নিয়েই কবি বলছেন, ‘চাঁদেরে কে চায়, জোছনা সবাই যাচে।’ জোছনার প্রেমে পড়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদও। জোছনা রাতে বিবাগী হতে চেয়েছিলেন লেখক। মনে আকুলি বিকুলি নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, ‘প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই/গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে?’ বলার অপেক্ষা রাখে না, উঠেছে। বাড়ি ছেড়ে যান বা না যান, বড় চাঁদটা আপনার জন্যই উঠেছে, এর দিকে চোখ মেলে তাকান। দেখুন। প্রাণ ভরে উপভোগ করুন ভাদ্র পূর্ণিমা।

আরো পড়ুন  

×