ওয়াজেদ হীরা ॥ দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল আজহা। কোরবানির এই ঈদে নির্ধারিত সময়ের আগেই আগাম পশু আসতে শুরু করেছে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে। ভাল মূল্যের আশায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিরাতেই ট্রাকে ট্রাকে আসছে গরু। স্থায়ী-অস্থায়ী হাটগুলোতে আগাম গরু উঠলেও অন্যান্য বছরের মতো এবারও দেখার ভিড় নেই উৎসুক মানুষের। ফলে হাটগুলোতে এখন পর্যন্ত ইজারাসংশ্লিষ্ট হাট প্রস্তুত করা মানুষ আর বিক্রেতা ছাড়া অন্য কেউ নেই। আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে হাট তখন ক্রেতা বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে রাজধানীর অনেক হাটেই গরু দেখা গেছে। এখনও অনেক হাটে কাজও চলছে।
দুই সিটি কর্পোরেশনের সূত্রে জানা গেছে, এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১১টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ৫টিসহ মোট ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটে কোরবানির পশুর বেচা-কেনার জন্য ইজারা দিয়েছেন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। শনিবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত অস্থায়ী হাটের প্রস্তুতির জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময়ে হাট প্রস্তুতও করা হচ্ছে অনেক স্থানেই। আর হাট প্রস্তুতির সময়ই অনেক হাটে গরু আসছে। কোন কোন হাটে আরও ক’দিন ধরেই গরু এসেছে। বিক্রেতারা বলছেন প্রতিরাতেই গরু আসতেছে। আগে আসলে বাজারে ভাল জায়গায় নিজেদের গরু রাখা যায়, ক্রেতাদের দেখতে সুবিধা হয়। আর ঢাকায় আসতেই হবে তাই আগে আসাই ভাল। যদিও সিটি কর্পোরেশনের বেধে দেয়া নিয়ম অনুসারে হাট হবে মোট পাঁচদিন। অর্থাৎ আনুষ্ঠানিকভাবে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ঈদের দিনসহ মোট ৫ দিন চলবে পশু কেনা-বেচা। এ সময়ের আগেই কোনভাবে পশুবাহী ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারবে না বলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে সেই ইজারাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা মানানো যাচ্ছে না বিক্রেতাদের।
এদিকে, প্রতিবছরই নির্দিষ্ট সময়ের কয়েকদিন আগে থেকেই পশুবাহী ট্রাকগুলো রাজধানীতে আসতে শুরু করে। অন্যান্য বছরগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে অনেক হাটেই বিক্রিও হয় অনানুষ্ঠানিকভাবে। সেই সঙ্গে আগাম চলে আসা এসব গরু-ছাগল দেখতে এলাকাবাসীসহ রাজধানীর বিভিন্ন বয়সী মানুষ হাটে ভিড় জমায়। কেউ কেউ ছোট ছেলে মেয়েদের ফাঁকা হাটে ভিড় এড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের কোরবানির পশু দেখিয়ে আনেন। ফলে হাটগুলোতে উৎসুক জনতার ভিড়ও থাকে বেশি। বিক্রেতারা মানুষের সমাগমে বেশ খুশিও থাকেন। কোন গরুর কত দাম, কোথা থেকে আনা হয়েছে, দেশী না শঙ্কর জাতের ইত্যাদি নানা প্রশ্নের জবাব হাসিমুখে দিয়ে যান বিক্রেতারা। যদিও বিক্রেতারাও জানেন হাট শুরুর আগে পশু বিক্রি হয় না বললেই চলে তবু উৎসুক মানুষের আগ্রহে তাদের সন্তুষ্টির চেষ্টা থাকে বিভিন্ন বিক্রেতাদের। এ বছর করোনা আতঙ্কে সেই উৎসুক মানুষের ভিড় একেবারেই নেই। এমনকি যে এলাকায় হাট ওই এলাকার মানুষও এখনও হাটমুখী হয়ে পশু দেখছেন না বললেই চলে। ভাষানটেক পশুর হাট সংশ্লিষ্ট একজন জানান, মানুষ এবার পশুর হাট দেখতে আসছে না। হয়ত হাট শুরু হলে কিনতেই শুধু আসবে। করোনায় মানুষ খুব সাবধান হয়ে গেছে। অন্যান্য বছরের মতো আগে আসা গরু ছাগল দেখতে ভিড় করছে না। এখন অপেক্ষা করতে হবে আসলেই হাট কতটুকু জমে। অনেক হাটেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটে প্রবেশ করার কথা ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। অনেক হাটেই বলা হচ্ছে মাস্ক ছাড়া হাটে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এছাড়াও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহারের কথাও বার বার মাইকে বলা হচ্ছে। এসব কারণেও অনেকে আগাম গরু দেখতে ভিড় নাও করতে পারে মনে করছেন অনেকে। কেননা হাটে বার বার না গিয়ে যখন যাবে যেন কোরবানির পশু নিয়েই ফেরা যায় এটিও একটি কারণ হতে পারে।
গাবতলীর হাটে উঠেছে উট ॥ রাজধানীর গাবতলী গরুর হাটে এবার বড় আকৃতির উট আনা হয়েছে। উটের মালিক উটটির দাম হাঁকছেন ১৬ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ টাকা দামও উঠেছে বলে জানান।
উটটির মালিক খলিলুর রহমান ও তার ভাই আমজাদ হোসেন। দুজনে মিলে ব্যবসা করেন।
তারা ভারত থেকে উট, দুম্বা এনে বাংলাদেশে বিক্রি করেন। গত বছরও তারা এই হাটে তিনটি উট বিক্রি করেছেন। উটগুলো পাকিস্তান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আনা হয়েছিল। এই উটটির বয়স ছয় বছর। প্রায় ১৫ মণ মাংস হবে বলে জানান খলিলুর রহমান। এদিকে, গাবতলী গরুর হাটে এখন অনেক গরু আসছে। প্রতিদিন ট্রাকের পর ট্রাক, গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগলসহ কোরবানির পশু হাটে আসছে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সাধারণ মানুষ পশু কেনার জন্য গাবতলী হাটে আসবেন এবং তখন থেকে বেচাকেনা হবে বলে আশা করছেন ব্যাপারীরা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: