স্টাফ রিপোর্টর ॥ নিম্নচাপের প্রভাব কেটে যাওয়ায় দেশের ভেতরে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু প্রবল আকার ধারণ করেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও দেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বলা হয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম সিলেট এবং বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বভাসও দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতেও বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোন কোন স্থানে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের বিশেষ সতর্ক বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে এসব বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে।
এদিকে গত কয়েকদিনই চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টা সর্বোচ্চ ২২৭ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে ফেনীতে, কুমিল্লায় ১২২ মিমি সীতাকুন্ডে ১০৫ মিমি এবং টেকনাফে ১০১ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া বরিশালের খেপুপাড়ায় ১২৫ মিমি, বরিশালে ৫ মিমি, সিলেটে ১০২ মিমি, ঢাকায় ৫৮ মিমি ও খুলনায় ১৩ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। গত দুদিন থেকে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এলাকায় অতি ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের পাঁচ জেলায় বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। জেলাগুলো হলো কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও মৌলভীবাজার। বন্যায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতিসহ যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এই পাঁচ জেলা প্রশাসনকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে এই জেলাগুলোসহ দেশের সব জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যাগাযোগ রাখা হচ্ছে। বন্যাপ্রবণ পাঁচ জেলার প্রত্যন্ত-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণকে সরিয়ে আনতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের দুই উপজেলার ফটিকছড়ি ও রাউজানের বাসিন্দাদেরও সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তাদের বন্যা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেও বলা হয়েছে। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে পাহাড়ধসে নিহতদের সাহাযার্থে জেলা প্রশাসনের তহবিল থেকে প্রতি পরিবারকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা অনুদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বন্যাকবলিতদের সাহাযার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দেশে ৯৪ পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৫৩টি স্টেশনে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার খবর জানা গেছেল কমেছে সমতলে ৩৩টি স্টেশনের পানি। বর্তমানে ১১টি নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে কানাইঘাটে সুরমা নদী বিপদ সীমার ১০৮ সিটিমিটার উপর দিয়ে, অমালশীদে কুশিয়ারা ২৩ সেন্টিমিটার, বাল্লায় খোয়াই নদী ২২৮ সেন্টিমিটার, হবিগঞ্জে ১৮০ সেন্টিমিটার এবং মুহুরী নদী পরশুরামে ২৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয় বোর্ড জানিয়েছে দেশের ভেতরে এবং বাইরে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ব্যাপক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণকৃত স্টেশন লালখালে ৩৬২, হবিগঞ্জে ২৭৫, জাফলংয়ে ২৬৫, সুনামগঞ্জে ১৯৫, ছাতকে ১৮৬, সিলেটে ১২৮ মহেশখোলে ১১২ টেকনাফে ১০০.৫ এবং পরশুরামে ১শ’ মিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া ভারতের চেরাপঞ্জিতে এই সময়ে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২১২ মিমিটার।