ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর প্রতিটি কারখানার নিরাপত্তা বাড়াতে গড়ে অতিরিক্ত ৫ কোটি টাকা ব্যয়

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ বাজারে ন্যায্যমূল্য চায় বিজিএমইএ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ বাজারে ন্যায্যমূল্য চায় বিজিএমইএ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ইউরোপীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান একর্ড-এ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা বাড়াতে প্রতিটি কারখানাকে গড়ে অতিরিক্ত ৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। ফলে ফ্যাক্টরির উন্নতির পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা বাড়লেও তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবসার পরিচালন ব্যয় অনেকাংশেই বেড়েছে। এই অবস্থার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের দরপতন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এজন্য বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রকৃত মূল্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে বিজিএমইএ ভবনের সভাকক্ষে ‘সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের আলোকে তৈরি পোশাক খাতের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতি’ বিষয়ক প্রেস ব্রিফিংয়ে সংগঠনের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানার ভবনের নিরাপত্তা সংস্কার ও মজুরিসহ অন্যান্য খাতে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কারেকশন একশান প্ল্যান বাস্তবায়নে প্রতিটি কারখানাকে গড়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত দুরূহ। এ ছাড়া শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে আমাদের পণ্যের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখিত দেশগুলোকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রকৃত মূল্য দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ক্রেতাদের কাছে অনুরোধ, গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের অংশ হিসেবে এদেশের শিল্পকে টেকসই করার লক্ষ্যে দায়িত্বশীল ব্যবসা করুন। আমাদেরকে পোশাকের ন্যায্যমূল্য দিন। সব ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিতে একই রকম শর্ত আরোপ করুন। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক খাত অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এখন ক্রেতারা অর্ডার দিতে দ্বিধান্বিত হন না। ক্রেতারা আসছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতাদেরও আমাদের কথা বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত এ্যাকর্ড এবং এ্যালায়েন্স মেয়াদ রয়েছে। তারা পোশাক খাতের অগ্রগতিতে কিছু শর্ত দিয়েছে। আমরাও আশা করি এর আগেই তাদের শর্ত পূরণে সমর্থ হব। তিনি বলেন, ন্যাশনাল এ্যাকশন প্লান (ন্যাপ), এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্সের আওতায় কারখানার নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিদর্শনে বিজিএমইএ পূর্ণ সহযোগিতা করে আসছে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৩ হাজার ৬৬০টি চালু কারখানা পরিদর্শন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং কারখানাগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ করেছে। বেআইনী সাব কন্ট্রাকটিং বন্ধে বিজিএমইএ সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সাব-কন্ট্রাকটিং করতে হলে সংশ্লিষ্ট কারখানাকে কমপ্লায়েন্ট হতে হবে। বিজিএমইএ’র বৈধ সদস্য হতে হবে এবং শ্রমিকেরদরে জন্য গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স থাকতে হবে। তিনি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর কারখানার নিরাপত্তা প্রশ্নে বিজিএমইএ জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করছে। এই নীতির আলোকে এ্যাকর্ড, এ্যালায়েন্স, আইএলওসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ পোশাক তৈরির দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। দেশের তৈরি পোশাক কারখানার উন্নয়ন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শুধুমাত্র নিরাপদ কর্মপরিবেশই রচনা করছি না পরিবেশবান্ধব গ্রীন শিল্পও গড়ে তুলছি। এ পর্যন্ত দেশের ২০টি কারখানা গ্রীন হয়েছে। আরও ১০০টি কারখানা গ্রীন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আমাদের অগ্রগতি চলমান, থেমে থাকবে না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, সহসভাপতি অর্থ মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, বিকেএমইএ’র সহসভাপতি মনসুর আহমেদ, পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
×