নিজস্ব সংবাদদাতা, উখিয়া, ৮ মার্চ ॥ মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা শরণার্থী শিবিরকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। সরকারের এখানকার শরণার্থী শিবির অন্যত্র স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার খবরে অনেক রোহিঙ্গা শিবির ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ব্যাপার নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাঝে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে সরকার সম্প্রতি কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকার স্থানীয় এক সংসদ সদস্যসহ ৫১ জন শীর্ষ রোহিঙ্গা বান্ধব গডফাদার তালিকা করলেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামানো যাচ্ছে না। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের অবস্থান বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত থেকে সর্বোচ্চ ৩ কিলোমিটারের মধ্যে। আর টেকনাফের নয়াপাড়া ও লেদা শিবিরের অবস্থান সর্বোচ্চ দেড় কিলোমিটারের ব্যবধান। স্থল ও নাফ নদীর জলসীমা অতিক্রম করে স্থানীয় রোহিঙ্গা বান্ধব সিন্ডিকেট ও এখানে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় মিয়ানমার থেকে প্রায় প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে এবং অনুপ্রবেশকারীরা প্রাথমিকভাবে কুতুপালং, নয়াপাড়া ও লেদা শিবিরে অবস্থান নিয়ে থাকে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এসবের পিছনে শুধু ইন্ধন দিচ্ছে হাতেগোনা কয়েকজন চিহ্নিত জনপ্রতিনিধি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের তালিকাভুক্ত শীর্ষ রোহিঙ্গা বান্ধব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে গত শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নাগরিকদের পাচার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও দালাল চক্রের মাঝে বন্দুকযুদ্ধসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিজিবির সুবেদার মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হকসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এজাহার নামীয় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত অন্যতম রোহিঙ্গা বান্ধব উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা গফুর উদ্দিন চৌধুরী ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশ ও বিজিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিজিবির সহযোগিতায় পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। কক্সবাজার ১৭ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আগের মতোই অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে থাকার পরও চিহ্নিত কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তা থাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ পুরোপুরি রোধ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে।