ছেলের সঙ্গে তানজিলা এশা। ছবি: সংগৃহীত
ছয় বছরের ছেলে আরহাম, ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়া তাবাসসুম এবং তার দুই মেয়ে আয়রা ও নাবাকে নিয়ে রাজধানীর বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে খেতে যান তানজিলা এশা (৩০)।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওই সময় আগুন লাগার খবর পেয়ে কাচ্চি ভাইয়ের জানালা ভেঙে নিজের ছেলে ও ভাইয়ের স্ত্রী সন্তানদের আগুন থেকে বের করে দেন। কিন্তু নিজে আর বের হতে পারেননি। বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুন মারা যান তিনি।
রাতেই তানজিলা এশার খালাতো ভাই তৌকির মুজিব ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট থেকে মরদেহ শনাক্ত করেন। নিথর তানজিলা বাড়ি ফিরেছেন লাশবাহী হিম গাড়িতে।
এষার মামাতো ভাই নাজমুস সাকিব তুষ্টি জানান, আগুন দেখে ছেলেসহ নিজের স্বজনদের বের কর দিয়েছিলেন এষা। তবে শেষে নিজে আর বের হতে পারেননি। তার আগেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়।
নাজমুস সাকিব জানান, এষা পিরোজপুরে লেখাপড়া শেষ করে ঢাকায় ইডেন কলেজে ভর্তি হন। লেখাপড়া শেষে তার বিয়ে হয়। তার স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর রামপুরা মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন। বৃহস্পতিবার কাচ্চি খেতে এষা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলে আরহাম, খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী, দুই সন্তান ও শ্যালককে।
নাজমুস সাকিব আরও জানান, হোটেলে আগুন লাগলে তানজিনা এষা তার ছেলে আরহাম, খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়াসহ অন্যদের বের করে দিয়ে নিজে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তখন অন্য আরেকজন বের হওয়ার চেষ্টা করেন। একই সময়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। বিকট শব্দ হয় এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে কক্ষ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন তানজিনা এষা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এষার শ্বশুর নাসির আহমেদ পিরোজপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। শ্বশুরের বাসা শহরের নড়াইলপাড়া এলাকায়। এষার স্বামী নাদিম আহমেদ ঢাকায় এসটি স্টিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এষা একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তাদের একমাত্র ছেলে আরহাম মালিবাগের সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
নাদিম আহমেদের চাচা সাকিল আহমেদ বলেন, আরহাম কাচ্চি খাবে বলে মায়ের কাছে আবদার করেছিল। ছেলের আবদার পূরণে বেইলি রোডে থাকা “কাচ্চি ভাই”-তে গিয়েছিল তারা।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে আগুন লাগে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ছিল বিরিয়ানির পরিচিত খাবার দোকান “কাচ্চি ভাই” এর শাখা, পোশাকের ব্র্যান্ড ইলিয়েন, নিচের তলায় স্যামসাং এর শোরুমসহ আরও বেশ কিছু দোকান। স্যামসাংয়ের শোরুমের পাশে রয়েছে একটি কফি শপ। এরকম কফির দোকানসহ ফাস্টফুডের অনেকগুলো দোকান ও রেস্তোরাঁ রয়েছে ভবনটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিভিয়ে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এরপরই আসতে থাকে একের পর এক মৃত্যুর খবর।
এসআর