
উত্তরবঙ্গের ছোট্ট অথচ ঐতিহ্যবাহী জেলা ঠাকুরগাঁও, শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যেই নয়, খাবারের বৈচিত্র্যেও সমৃদ্ধ। এখানকার প্রতিটি গ্রাম ও বাজার যেন নিজস্ব এক একটি স্বাদের গল্প বলে। ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু অমলিন ও মুখরোচক খাবার, যা এখানকার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
শীতল হাওয়ায় ভরা ঠাকুরগাঁও জেলার প্রতিটি জনপদ যেন এক একটি খাদ্যজগত। এখানকার খাবার শুধু পেট ভরায় না, জড়িয়ে থাকে স্মৃতি, সংস্কৃতি আর প্রজন্মের প্রজন্ম ধরে বয়ে চলা ঐতিহ্য।
রানীশংকৈলের বিখ্যাত ঘি-মোয়া এখন ঠাকুরগাঁওয়ের পরিচয়পত্র হয়ে উঠেছে। মুড়ি, ঘি ও চিনি দিয়ে তৈরি এই মিষ্টান্ন মুখে দিলেই গলে যায়। জেলার মিষ্টির দোকানগুলোতে সারাবছরই এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে।
কলা পিঠা ও খেজুর রসের পায়েস: শীতের সন্ধ্যায় স্বাদের উৎসব
গ্রামবাংলার প্রতিটি শীতের সন্ধ্যায় পিঠা-পায়েস যেন একটা আবেগ। ঠাকুরগাঁওয়ের কলা পিঠা ও খেজুর রসের পায়েস শহর ও গ্রামের সীমানা পেরিয়ে এখন বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টের মেনুতে জায়গা করে নিচ্ছে।
চকবাজার, হরিপুর মোড় বা শিবগঞ্জের অলিগলি—যেখানে ভিড়, সেখানেই ‘চিংড়ি বড়া’র গন্ধে মুখরিত পথ। বিশেষ মসলা মিশিয়ে ভাজা এই বড়াগুলোর সাথে টক-ঝাল চাটনি যেন স্বাদের পূর্ণতা আনে।
সাঁওতাল ও ওরাঁও আদিবাসীদের নিজস্ব রান্নার ধরন আজও অনেক গ্রামে টিকে আছে। কচু পাতায় মোড়া মাছ, বাঁশের চালনিতে রান্না ভাত কিংবা শুকনো বাঁশের ভেতরে ভুনা মাংস—এসব শুধু খাবার নয়, একেকটা সাংস্কৃতিক নিদর্শন।
এক সময় উৎসব মানেই ছিল কাঠালের বড়া ও চালকুমড়োর হালুয়া। বর্তমানে কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ নারী এখনও পরিবারিক উৎসবে এই খাবার তৈরি করে থাকেন। এসব খাবার আবার ফিরিয়ে আনার দাবি উঠেছে তরুণদের মুখেও।
খাবার মানে শুধু উপকরণ নয়, তার পেছনে থাকে গল্প, ভালোবাসা, ওতপ্রোতভাবে জড়িত ইতিহাস। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতিটি বিখ্যাত খাবারের পেছনেও রয়েছে তেমনি আবেগমাখা গল্প।
স্থানীয় প্রশাসন, পর্যটন কর্তৃপক্ষ ও উদ্যোক্তারা চান এই স্বাদের ঐতিহ্য সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। প্রয়োজন যথাযথ ব্র্যান্ডিং ও সংরক্ষণের উদ্যোগ।
নোভা