
অন্তুর বয়স দশ বছর। ও স্কুলে যায়। পড়ে ক্লাস ফোরে। সারাদিন স্কুলে ছোটাছুটি করে বন্ধুদের সঙ্গে। ক্লাসের সময় মনোযোগ দিয়ে স্যারদের কথা শোনে। স্যাররা কয়েকদিন আগেই বলেছেন মে মাসের দ্বিতীয় রোববার হলো মা দিবস। এ কথা শুনেই অন্তুর মনে নতুন পরিকল্পনা আসে। সে ভাবে সারাবছরই তো মা তাকে নানাভাবে সেবা দেন। খাবার রান্না করে দেন। কাপড় কেচে দেন। পড়ার সময় কখন তা বলে দেন। খেলার সময় খেলতে পাঠান। মার হাতে কত্ত কাজ। তবু মা তার যত্নের কোনো অবহেলা করেন না। সেই মা কোনো লাভের আশায় করেন না এসব। তিনি অন্তুকে অনেক ভালোবাসেন। সেই ভালোবাসা থেকে এসব করেন। ফলে মাকে মা দিবসে একটু চমকে দেয়ার পরিকল্পনা মাথায় আসে অন্তুর। এ জন্য অন্তু কি কি করতে হবে তার একটি লিস্ট করে তার বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখলো। তার মধ্যে আছে- সকালের নাস্তা বানানো। মাকে একটি কার্ড উপহার দেয়া। ফুল তোলা। মাকে জড়িয়ে ধরে তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
সত্যি সত্যি চলে এলো মা দিবস। এদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলো অন্তু। রান্নাঘরে গিয়ে একটি বড় বাটি নিলো সে। তাতে কিছু সিরিয়াল নিয়ে তার সঙ্গে একটি কলা নিলো। সঙ্গে যোগ এক গ্লাস দুধ। সবকিছু একটি ট্রেতে সুন্দর করে সাজালো। তার সঙ্গে যোগ করলো কমলার এক গ্লাস রস।
এর পাশে একটি কার্ড রাখল। গত রাতেই গোপনে এই কার্ড লিখেছে সে। তাতে লিখেছে-
‘আমার প্রিয় আম্মু,
দিনের বেলায় তুমি আমার সূর্যের আলো। আর রাতে চাঁদের আলো। আমাকে তুমি যে ভালোবাসা দিয়েছে, আমাকে যে কষ্ট করে খাবার খাওয়াও, আমার হোমওয়ার্কে যে সাহায্য করে আর সব সময় আমাকে জড়িয়ে ধরে যে ভীষণ আদর কর, তার সবকিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। শুভ মা দিবস!
তোমার ভালোবাসা
অন্তু
এরপরই বাগানে ছুটে যায় অন্তু। তিনটি গাঁদা ফুল তোলে। ফুল তিনটি ভিন্ন রকম। তবে তা উজ্জ্বল এবং আনন্দদায়ক- ঠিক তার মায়ের মতো। এরপর সেই ধীরে ধীরে সেই ট্রে হাতে মায়ের কক্ষে প্রবেশ করে অন্তু। এ সময় মা অর্ধঘুমে আছেন।
অন্তু ফিসফিস করে বলে ওঠে- সারপ্রাইজ! হ্যাপি মাদারস ডে!
মা উঠে বসেন। চোখ বড়ো করে সব কিছু দেখে হেসে দেন। বলেন- অন্তু, এসব তুমি করেছ?
মার পাশে ট্রে রেখে গর্বিত অন্তু বলে- হ্যাঁ মা! কারণ তুমি তো সবসময় আমার জন্য সবকিছু করো। আর আজ আমি তোমার জন্য সব কিছু করলাম...
অন্তুর কথা শেষ না হতেই মা তাকে জড়িয়ে ধরেন। কপালে, চিবুকে চুমু দেন। বলেন- বাবা, এ পর্যন্ত আমি যত উপহার পেয়েছে তার মধ্যে তোমার এই উপহার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ।
এরপরই তারা বিছানার পাশে বসে একসঙ্গে নাস্তা করে। হাসাহাসি করেন। গল্প করেন। নাস্তা শেষ হতেই অন্তু তার মাকে নিজের হাতে বানানো ‘কুপন বুক’ তুলে দেয়। তাতে ছোট ছোট নোট লেখা। যেমন- বিনামূল্যে পায়ের ম্যাসাজ, আমি খাবার রেডি করবো এবং আমরা সিনেমা দেখবো- কোনটা সে তোমার পছন্দ!
ওইদিন বিকেলে তারা পার্কে গেল। সেখানে একটা ঘুড়ি উড়ালো। মা-ছেলে আইসক্রিম খেলো। মা-ছেলে তো এমনই হওয়ার কথা। সূর্য ডুবে এলো। তারা ফিরে গেলো বাসায়। রাতে অন্তুকে বিছানায় শুইয়ে দিলেন মা। তার কপালে চুমু দিলেন। মা ফিসফিস করে বললেন- আমার প্রাণের অধিক প্রিয় অন্তু, তোমাকে ধন্যবাদ বাবা!
অন্তুর চোখে ঘুম চলে এসেছে। আধো খোলা চোখে সে হাসে। বলে, তুমিই সবার সেরা আম্মু!
বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো অন্তু। আর আম্মু তার পাশে বসে হৃদয় দিয়ে অনুভব করলেন- এই মা দিবসটা সত্যি তার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্যানেল