ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

শিল্পী প্রসূন হালদার ও তার অনিশ্চয়তার অনুসন্ধান

সাময়িকী ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:১৩, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শিল্পী প্রসূন হালদার ও তার অনিশ্চয়তার অনুসন্ধান

শিল্পী প্রসূন হালদারের প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার কলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারি ২-এ চলছে শিল্পী প্রসূন হালদারের প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী ‘অনিশ্চয়তায় অনুসন্ধান’। শিল্পী তার গত দশ বছরের কাজের ধারাবাহিকতা এই প্রদর্শনীতে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। এখানে শিল্পীর ৮০টির অধিক শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। তেল রঙ, জল রঙ ও এক্রেলিক রঙে আঁকা ছবির পাশাপাশি রয়েছে পেন্সিল স্কেচ ও পেন স্কেচ।

শিল্পীর পেইন্টিং গুলিতে যেমন রয়েছে বলিষ্ঠ ব্রাশের স্ট্রোক তেমনি রয়েছে সুনিপুর লাইনের ব্যবহার। শিল্পীর নিরীক্ষাধর্মী কাজের পিছনে রয়েছে নানান গল্প। যা তার আশপাশের সমাজ ও বাস্তবতারই প্রতিফলন। এ প্রদর্শনীতে যেমন রয়েছে বিশাল আকৃতির পেইন্টিং ঠিক তেমনি রয়েছে স্ট্যাম্প সাইজের মিনিয়েচার পেইন্টিংও। 

একজন শিল্পীর শিল্প ভাষা সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে দীর্ঘ পথ চলা তারই প্রতিফলন যেন শিল্পী প্রসূন হালদারের প্রদর্শনীটি। শিল্পী প্রসূন হালদার ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতেন, ছবি আঁকার হাতেখড়ি বাবার কাছেই। তবে বাবার মৃত্যুর পরে ছবি আঁকায় ভাটা পড়ে যায়। পরবর্তীতে মায়ের অনুপ্রেরণায় ও নিজের শিল্প সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা থেকে সংকল্প করেন শিল্পী হয়ে ওঠার। প্রসূনের প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনীতে ছিল তার পরিশ্রমী ও বাস্তববাদী মনোভাবের ছাপ। শিল্পীর প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প শিক্ষার শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে।

শিল্পী প্রসূন চারুকলা অনুষদের অংকন চিত্রায়ণ বিভাগ থেকে বিএফএ ও এমএফএ সম্পন্ন করেছেন। শিল্পীর কাছে প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প শিক্ষার গুরুত্ব যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে নিজে থেকে শেখা ও অনুধাবন করার গুরুত্বও। তাইতো তিনি মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়েন প্রকৃতি থেকে শিখতে। আউটডোরে ছবি আঁকেন নিয়মিত। ঘুরে বেড়ান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বাংলাদেশের প্রকৃতি শিল্পীর প্রিয় সাবজেক্টগুলোর অন্যতম।

এছাড়া শিল্পীর পোর্ট্রেট আঁকায় দক্ষতা লক্ষণীয়। শিল্পী বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্নভাবে পোর্ট্রেট এঁকেছেন। এসব পোট্রেট এর মধ্যে শিল্পীর নিজস্ব করণ কৌশল প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন। শিল্পীর রেড পেপার ও ব্রাউন পেপারে করা পোর্ট্রেটগুলো বাড়তিভাবে দর্শককে আকর্ষণ করবে। মানুষের মুখের অভিব্যক্তি শিল্পীর চোখে ধরা দিয়েছে তার মতো করে কখনো বা বলিষ্ঠ ব্রাশের স্টকে আবার কখনো জলরঙের পাতলা লেয়ারে।

এই প্রদর্শনীর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, শিল্পী এখানে তার নানান সময়ের স্কেচ খাতাও দর্শকদের জন্য প্রদর্শন করছেন। স্কেচ খাতাগুলো দেখলে শিল্পীর শিল্প সৃষ্টির পেছনের চিন্তাধারার কথা জানা যায়। জানা যায় তার প্রাত্যহিক জীবনে শিল্পের গুরুত্ব। প্রদর্শনীতে দর্শকদের মূল আকর্ষণ এই স্কেচ খাতাগুলো। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে শিল্পীদের আঁকা বিভিন্ন ছবি দেখা যায় কিন্তু তাদের একান্ত ব্যক্তিগত এসব স্কেচ খাতার দেখা মেলা ভার। দর্শকদের জন্য সেই সুযোগটি করে দিয়েছেন শিল্পী প্রসূন। যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। 
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় এই প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক শেখ আফজাল হোসেন ও অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ও অনুষদের অন্যান্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ। 
সকলের জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনীটি চলেছে ১৯ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।  সাময়িকী ডেস্ক

×