ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১

এগিয়ে যাওয়াই জীবন

নীলিমা জাহান

প্রকাশিত: ০১:৩২, ২৪ মে ২০২৪

এগিয়ে যাওয়াই জীবন

সুলতানা রাজিয়া

৫৫ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। তার পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী তার চেয়েও এক হাজার ভোট কম পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সুলতানা রাজিয়া মিলন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে অনেকের কাছেই নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।

সরাসরি ভোটে অংশগ্রহণ করে নিজেকে জনকল্যাণমূলক কাজের যোগ্য হিসেবে তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের সমর্থন পেয়েছেন। ভোটের মাঠে সুলতানা রাজিয়ার আগমন হঠাৎ করেই হয়নি। অনেক লড়াই সংগ্রাম ত্যাগ ও কঠিন দুঃসময় পার করেছেন। কিন্তু পিছু পা হননি। দমে যাননি। ভোটের মাঠে, রাজনীতির মাঠে সামাজিকতায় নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন।

তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে নিজে একবার ভাইস চেয়ারম্যান নিবাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও দুইটি সংসদ নির্বাচনে সরাসরি প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করেছেন। সামাজিকতায় এবং রাজনীতিতে তার অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। তবেই তিনি জনগণের ভোট পেয়েছেন, সমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ, কাজিপুর এবং বেলকুচিতে  মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান যারা নির্বাচিত হয়েছেন কম বেশি সকলেই তার পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। নির্বাচিতরা সবাই গ্রামের নারী। অর্থাৎ গ্রামের নারীরাও এখন ভোটের রাজনীতিতে অনেকদূর এগিয়েছেন। রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকা-ে তাদের অবস্থান আগের তুলনায় বেশ এগিয়ে। এবারের নির্বাচনে ভোটের অংকে নারী ভোটারের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি। নারীরা এখন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ে নিজেদেরকে জড়িয়েছেন। 
নির্বাচনে বিজয়ী বা বিজিত প্রতিজন নারী প্রার্থী লিফলেট হাতে নিয়ে পুরুষ এবং নারী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি-বাড়ি ভোট চেয়েছেন। প্রখর রোদের খরতাপে মাঠে থেকেছেন। নারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করে পুরুষ এবং নারী ভোটারের সমর্থন নিয়েছেন। এতে কেউ জিতেছেন আবার কেউ হেরেছেন। নির্বাচনে কেউ জিতবেন, আবার কেউ হারবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে কথা হচ্ছে নারীরাও পিছিয়ে নেই।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত নারী চেয়ারম্যানও রয়েছেন। নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছেন। নারীর অগ্রযাত্রার নির্বাচিত নারীরা অন্যদের সাহস জুগিয়ে আরও এগিয়ে নেবেন এমন প্রত্যাশা নারীদের।
বিশ^ নারী দিবসের বক্তৃতায় সুশীল সমাজের অনেকেই নারী অধিকার নিয়ে কথা বলি।  পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর প্রতি ঘৃণা, নারীর উপর নির্যাতন নানাভাবে উপস্থাপন করি। এটাও সত্য পুরুষেরা নারীর কাছে কম নির্যাতিত হন না।  তবে এমন বিষয় নিয়ে অনেক কথা হতে পারে, বিতর্ক হবে। তর্ক বিতর্কের দিকে না গিয়ে সোজা সাপটা  কথা হচ্ছে নারীকে ঘরে বসে থাকলে অধিকার বা স্বাধীনতা কেউ হাতে তুলে দেবেন না। অধিকার, স্বাধীনতা সমাজ সেবার আকা্খংা কিংবা রাজনীতির সুযোগ নারীকেই অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে পড়ালেখাও করতে হবে।

রাজনীতি সমাজনীতি নিয়ে লেখা বই প্রচুর পরিমাণ পড়তে হবে। জ্ঞান অর্জনের জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। পড়ার লব্ধ জ্ঞান নিয়ে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যারা এগিয়ে এসেছেন, মাঠে থেকেছেন, সংগ্রাম করেই সতারা ফলতা পেয়েছেন। তবে কথা থাকে নানা ষড়যন্ত্র, প্রতিকূলতা, অপবাদ চলার পথে কাঁটার মতো বিঁধবে।

এ কথাও মনে রাখতে হবে নানা ষড়যন্ত্র, প্রতিকূলতা, অপবাদ শুধু নারীর ক্ষেত্রে নয়- পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এসব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়াই জীবন। পিছপা হলে পিছলে পড়ে কোমর ভেঙ্গে যাবে। সোজা হয়ে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।

×