ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লেখক হয়ে ওঠার গল্প

ডা. ছাবিকুন নাহার

প্রকাশিত: ০১:৫৫, ৩ মার্চ ২০২৩

লেখক হয়ে ওঠার গল্প

৩০তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা ডা. ছাবিকুন নাহার

৩০তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা ডা. ছাবিকুন নাহার। বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েশন করে ফেলোশিপ করেছেন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিষয়ে। প্রসূতি ও স্ত্রীরোগের ডাক্তার হওয়ার সুবাদে তিনি নারীদের এমন কিছু জটিল সমস্যা এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, যেগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে আর একটু সচেতন হলে এসব জটিলতা আর মৃত্যুরোধ করা অনেক সহজ হয়ে যেত। বয়োসন্ধিকালে মেয়েদের ঋতু¯্রাব হওয়া স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় এক প্রক্রিয়া।

ঋতু¯্রাবের মাধ্যমেই একজন নারী সন্তান জন্মদানের প্রাথমিক সক্ষমতা অর্জন করেন। এমনকি এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে নারীর সারাজীবনের প্রজনন স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক সুস্থতা। একবিংশ শতাব্দীতেও আমরা এ বিষয়ে নীরবতাই পালন করি। এই নীরবতার আড়ালে কত নারীর চোখের জল বিসর্জিত হয় তা বলা কঠিন। এসব সমস্যা সম্পর্কে নারীদের সচেতন করার লক্ষ্যে এবারের ‘একুশে বইমেলা, ২০২৩’ এ পেন্সিল প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে তার বই ‘নারীকথন : সুস্থ মাসিক ব্যবস্থাপনা সুন্দর জীবন’।

বইয়ে তিনি নারীদের পিরিয়ড সম্পর্কিত জটিলতাগুলোর পরিচয় এবং করণীয় প্রসঙ্গে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ডা. ছাবিকুন নাহার বলেন, ‘স্বাভাবিক মাসিকের ক্ষেত্রে নারীদের তেমন কোনো জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় না। কিন্তু অস্বাভাবিক মাসিকের ক্ষেত্রে একেকজন নারী একেক ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হয়। কেউ কেউ আবার মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়। এই বইটি পড়তে পারলে বহু বিষয় সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে একজন কিশোরী। এটি আমার দ্বিতীয় বই, যা প্রকাশিত হয়েছে ‘পেন্সিল’ পাবলিকেশন্স থেকে।

বিভিন্ন ম্যাগাজিন, দৈনিক, অনলাইন পোর্টালে তিনি গল্প, কবিত লিখেন। এক সময় তার রোগীদের সমস্যাগুলো শেয়ার করেন ফেসবুক ওয়ালে। সেখান থেকে ‘পেন্সিল’ নামক একটি অনলাইন গ্রুপের ওয়ালে লিখেন এবং ব্যাপক সাড়া পান। অনেক অজানা রোগ সম্পর্কে অনেকে বিস্তারিত জানতে চান। সদা হাসিখুশি ডা. নাহার ধৈর্যসহকারে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন। এক সময় পেন্সিল থেকেই প্রস্তাব আসে এই কথাগুলো বই আকারে প্রকাশ করার। প্রথমে তিনি রাজি হননি।

এসব কথামালার আবার কিসের বই! পরে রাজি হয়ে যান। তার প্রথম বই ‘রোগীকথন: জানা-অজানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কথকতার প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখে বিস্মিত হয়ে যান। সেবারই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়। বইটি ছিল কেইস স্টাডিমূলক। গল্পের ছলে মজা করে লেখা। সেই উৎসাহ আর নারীদের মাসিক সম্পর্কে অজ্ঞতার কথা ভেবে তিনি এবারের বইটি প্রকাশ করতে আর পিছপা হননি। তিনি বলেন, ‘পেন্সিল ঝুঁকি নিয়ে আমার বইগুলো প্রকাশ করেছে, তার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

বইটি অনেকের কাজে লাগছে, অজানা রোগ সম্পর্কে সবাই জানছে- এখানেই আমার সার্থকতা। মানুষ মরে যায়, তার কাজ থেকে যায়। এই একটি কাজই হয়তো আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে মানুষের মাঝে। যুগে যুগে মায়েরা, মেয়েরা, বউয়েরা, শাশুড়িরা মাসিক নিয়ে ঝামেলায় পড়লে নারীকথন উল্টাবে।’ তার এই মহান চেষ্টা লাখো নারীর জীবনে স্বস্তির নিঃশ্বাস হবে, এটা আমাদেরও প্রত্যাশা।

×