
সংগৃহীত
গ্রীষ্মকালের প্রিয় ফল আম স্বাদে মধুর, পুষ্টিতে ভরপুর। কিন্তু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই ফল নিয়ে রয়েছে দীর্ঘদিনের দ্বিধা। অনেকেই মনে করেন, আমে থাকা প্রাকৃতিক চিনি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক পুষ্টিবিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস রোগীরাও নিরাপদে আম খেতে পারেন।
কেন আম পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়?
আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) প্রায় ৫০–৫৫, যা মাঝারি স্তরের। অর্থাৎ এটি এমনভাবে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায় যা হঠাৎ করে রক্তচাপ বা সুগারকে বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছে দেয় না। এছাড়া আমে রয়েছে ভিটামিন A, C, পটাশিয়াম, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমে সহায়তা করে এবং কোষের ক্ষয়রোধ করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আম খাওয়ার নিরাপদ কৌশল:-
পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ
- দিনে ৭৫ গ্রাম বা ১–২টি পাতলা স্লাইস খাওয়া নিরাপদ। সপ্তাহে ২–৩ দিন খাওয়া যেতে পারে।
আঁশ ও প্রোটিনের সঙ্গে খাওয়া
- আমের সঙ্গে বাদাম, দই বা সেমাই-চিড়ার মতো উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খেলে রক্তে সুগার ধীরে বাড়ে।
প্রক্রিয়াজাত আম নয়, তাজা আম
- জুস, পিউরি বা ক্যানজাত আমের তুলনায় তাজা আমে কোনো বাড়তি চিনি থাকে না, যা ডায়াবেটিসে ভালো।
খালি পেটে নয়, প্রধান খাবারের পর
- ভরপেট খাবার শেষে বা মাঝবেলার স্ন্যাকস হিসেবে আম খাওয়া বেশি উপকারী।
রাতের বেলা আম নয়
- সকালের দিকে বা দুপুরে আম খেলে শরীর সহজে শোষণ করতে পারে।
যে-সব মানুষ আরও সতর্ক থাকবেন
- টাইপ-১ ডায়াবেটিস
- ইনসুলিন নির্ভর রোগী
- অতিরিক্ত স্থূলতা বা হাইপারটেনশনে আক্রান্ত ব্যক্তি
তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফলের পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।
পুষ্টিবিদদের মতে, “আম যেমন উপকারী ফল, তেমনই চিনির আধারও। ডায়াবেটিসে ভয়ের কিছু নেই, তবে হিসেব করে খাওয়া জরুরি। সঠিক সময়, সঠিক পরিমাণ এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে খেলেই আম উপভোগ করা সম্ভব।”
ডায়াবেটিস মানেই সব মিষ্টি নিষিদ্ধ এই ধারণা এখন বদলাচ্ছে। আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞান বলছে, পরিমাণ ও ভারসাম্য বজায় রেখে আম খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীরাও ফলের স্বাদ উপভোগ করতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সব সময় উত্তম।