
ছবিঃ সংগৃহীত
আপনি কি প্রায়ই এমন পরিস্থিতিতে পড়েন—খাবার খেয়ে উঠে একটু পরেই আবার খিদে পায়? মনে হয় পেট কখনোই পুরোপুরি ভরে না? আপনি একা নন।
এই সমস্যা অনেকের। এর পেছনে কারণ থাকতে পারে অনেক কিছু—আপনার খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ফাইবার বা স্বাস্থ্যকর চর্বি না থাকা, অতিরিক্ত ব্যায়াম করা, স্ট্রেস বা ঘুমের অভাব। এমনও হতে পারে, আপনি সারাদিনে প্রয়োজনের চেয়ে কম খাচ্ছেন।
আমাদের শরীর প্রতিক্রিয়া জানায়। যখন আপনি অনেকটা সময় না খেয়ে থাকেন, তখন শরীর বেশি করে ক্ষুধা জাগায়। এর ফলে একসময় আপনি হঠাৎ করে বেশি খেয়ে ফেলেন—সাধারণত যেসব খাবার স্বাস্থ্যকর নয়।
কেন আমরা এত ঘন ঘন ক্ষুধার্ত হই?
খাবারে যদি বেশি পরিমাণে চিনি বা প্রক্রিয়াজাত (processed) কার্বোহাইড্রেট থাকে, তাহলে ক্ষুধা দ্রুত ফিরে আসে। যেমন: সাদা পাউরুটি, মিষ্টি সিরিয়াল বা কেক-পেস্ট্রি। এগুলো শরীর দ্রুত হজম করে ফেলে, রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ে, তারপর আবার হঠাৎ করে কমে যায়। এতে শরীর আবার চায়—আরও খাবার।
আরও খারাপ করে তোলে স্ট্রেস। যখন আপনি টেনশনে থাকেন, তখন কর্টিসল নামে এক হরমোন বাড়ে, যা ক্ষুধা বাড়ায়। বিশেষ করে মিষ্টি বা চটকদার খাবারের জন্য মন ছুটে যায়। কারণ, সেগুলো আমাদের অস্থায়ীভাবে ভালো বোধ করায়।
আমরা অনেকে আবার আবেগে খাই—মন খারাপ, একাকীত্ব, বিরক্তি—সব কিছুতেই খাবার যেন একমাত্র সান্ত্বনা। কিন্তু এটা দীর্ঘমেয়াদে শরীর ও মনের জন্য ভালো না।
মাঝে মাঝে আপনি সত্যিকারের ক্ষুধার্ত নন, শুধু পানি কম খেয়েছেন!
হ্যাঁ, শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকলেও আপনি ক্ষুধা অনুভব করতে পারেন। তাই ক্ষুধা লাগলেই আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে দেখুন।
আর ঘুমের কথাও ভুলবেন না। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলো ঠিকমতো কাজ করে না, ফলে সারাদিনই খেতে ইচ্ছে করে।
তাই কি করবেন?
খুব সহজ – আপনি কম খাবেন না, বরং সঠিকভাবে খাওয়া শিখবেন। এমন খাবার খেতে হবে যা আপনার পেট ভরাবে, শরীরকে পুষ্টি দেবে এবং আপনাকে দিনের শেষ পর্যন্ত শক্তি জোগাবে।
সবসময় ক্ষুধা লাগলে যেসব খাবার খেতে পারেন:
১. ওটস (Oats)
ওটসের ফাইবার হজমে ধীরে যায় এবং অনেকক্ষণ পেট ভরাট রাখে। গ্রীক দই, বাদাম বা চিয়া সিড মিশিয়ে খেতে পারেন।
২. ডিম
প্রোটিনে ভরপুর, হজমে সময় নেয়। সকালের নাস্তায় ২টি ডিম খেলেই অনেকক্ষণ আর ক্ষুধা পাবে না।
৩. গ্রীক দই
ঘন, টেক্সচার ভালো এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ। ফল, বাদাম বা মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, অথবা ঝোল খাবারে টক দইয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করুন।
৪. অ্যাভোকাডো
স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ফাইবারের দারুণ মিশেল। সালাদে বা টোস্টে দিন – পেটও ভরবে, মুডও ভালো থাকবে।
৫. ডাল ও মসুর
প্রচুর প্রোটিন ও ফাইবার – তাই ক্ষুধা দূর করতে অসাধারণ। চিকপি বা মুগডালের কারি খেলে দেখবেন কতক্ষণ ভরাট লাগে।
৬. বাদাম ও বীজ
আমন্ড, আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড – এগুলো একটু পরিমাণেই দীর্ঘস্থায়ী শক্তি দেয়।
৭. কটেজ চিজ
লো-ফ্যাট, হাই-প্রোটিন – হালকা নাস্তায় বা স্মুদি বা প্যানকেকে ব্যবহার করতে পারেন।
৮. সম্পূর্ণ শস্য (Wholegrains)
সাদা চাল বা পাউরুটি বাদ দিয়ে ব্রাউন রাইস, কোয়িনোয়া বা সাওয়ারডো পাউরুটি খান। ধীরে হজম হয়, ক্ষুধাও ধীরে আসে।
৯. শাকসবজি
বিশেষ করে ডার্ক গ্রিন লিফি সবজি – যেমন পালং, কেল, ব্রোকলি। কম ক্যালোরি, কিন্তু অনেক ফাইবার। সালাদে বা ভাজি করে খান।
১০. স্যুপ
শরীর ও মনের জন্য আরামদায়ক খাবার। সবজি, ডাল আর সামান্য প্রোটিন দিয়ে তৈরি স্যুপ অনেকক্ষণ ক্ষুধা দূর রাখতে পারে।
শেষ কথাটি হল...
ক্ষুধা মানেই আপনি দুর্বল নন। বরং, আপনার শরীর সঠিক পুষ্টি চাচ্ছে। তাই শুধু বেশি খাবেন না – বুদ্ধিমানের মতো খাবেন।
সঠিক খাবার, যথেষ্ট পানি, ভালো ঘুম আর স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট – এগুলো মিলেই আপনাকে সুস্থ ও তৃপ্ত রাখবে।
চেষ্টা করে দেখুন:
- আপনার প্রতিদিনের নাস্তায় প্রোটিন যোগ করুন
- পানির বোতল সঙ্গে রাখুন
- রাতে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন
- খেতে যাওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, “আমি কি সত্যিই ক্ষুধার্ত?”
স্বাস্থ্য বিষয়ক এই লেখাটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য দেওয়া হয়েছে। কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মারিয়া