
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমানে শিশু যৌন নিপীড়নের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ঘর, স্কুল, খেলার মাঠ—শিশুরা কোথাও শতভাগ নিরাপদ নয়। এমন বাস্তবতায় শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সচেতন অভিভাবকই হতে পারেন প্রথম প্রতিরক্ষা। শিশুর মানসিক ও শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের উচিত কিছু বিশেষ করণীয় মেনে চলা। এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী, শিশু চিকিৎসক ও সামাজিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে নিচে তুলে ধরা হলো ৫টি গুরুত্বপূর্ণ করণীয়।
✅ ১. শিশুকে “ভালো ছোঁয়া” আর “খারাপ ছোঁয়া” বোঝান
শিশু মনোবিজ্ঞানী ডা. শারমিন হোসেন জানান, ৩ বছর বয়স থেকেই শিশুকে শরীরের ব্যক্তিগত অংশগুলো চিহ্নিত করে শেখাতে হবে—কোনো ব্যক্তি যেন সে অংশে স্পর্শ করতে না পারে। ‘ভালো ছোঁয়া’ যেমন বাবা-মায়ের আদর, আর ‘খারাপ ছোঁয়া’ মানে অশোভন স্পর্শ—এটা শিশুকে গল্প, ছবি কিংবা কার্টুনের মাধ্যমে শেখানো যেতে পারে।
✅ ২. গোপন রাখার চাপ যেন শিশুর ওপর না পড়ে
মনোবিজ্ঞানী ও শিশু অধিকার কর্মী তানভীর রহমান বলেন, অনেক নিপীড়ক শিশুকে ভয় দেখিয়ে বলে—“এই কথা কাউকে বললে তোর ক্ষতি হবে।” অভিভাবকদের উচিত শুরু থেকেই শিশুকে বোঝানো—‘তুমি কোনো কিছুতে অস্বস্তি বোধ করলে, সেটা মা-বাবাকে জানানো তোমার অধিকার।’ গোপন না রেখে সাহসী হওয়ার মনোভাব গড়ে তুলুন।
✅ ৩. স্কুল ও আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে খোঁজ রাখুন
শিশু চিকিৎসক ডা. ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, “প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে শিশুর আচরণে যদি হঠাৎ পরিবর্তন আসে—যেমন চুপচাপ হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ভয় পাওয়া বা শরীরে ব্যথার অভিযোগ—তাহলে তা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।” স্কুলের শিক্ষক, দারোয়ান, বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী—সবাই সম্পর্কে অভিভাবকের সতর্কতা থাকা জরুরি।
✅ ৪. ইন্টারনেট ব্যবহারে নজরদারি ও গাইডলাইন দিন
বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের বড় একটি সময় কাটে ইন্টারনেটে। তবে অজান্তেই তারা পর্নোগ্রাফি বা অনুপযুক্ত কনটেন্টে প্রবেশ করতে পারে, যা শিশু নিপীড়নের পথ তৈরি করে। এ বিষয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞ মেহরাব হোসেন বলেন, “শিশুর অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। বয়স উপযোগী কনটেন্ট দেখার জন্য ফিল্টার ব্যবহার করুন।”
✅ ৫. শিশুর বন্ধু হোন, অভিভাবক নয় শুধু
শিশু মনোবিদ ডা. মাহিন সুলতানা বলেন, “শিশু যেন মনে করে, মা-বাবা তার সবচেয়ে বড় নিরাপদ আশ্রয়। তাকে না বকা দিয়ে শ্রবণ করুন, তার ছোট ছোট কথাও গুরুত্ব দিয়ে শুনুন।” যখন সে কোনো অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাইবে, তখন যদি আপনি তাকে থামিয়ে দেন বা ভয় দেখান—তাহলে সে চুপচাপ হয়ে যাবে। তাই বন্ধু হয়ে উঠুন তার জন্য।
শিশুর নিরাপত্তা শুধুমাত্র বাহ্যিক নজরদারিতে সীমাবদ্ধ নয়, এটি নির্ভর করে শিশুর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক, তার মনোজগতে আপনাকে কতটা বিশ্বাস করে এবং আপনি তাকে কতটা আত্মরক্ষায় সক্ষম করে তুলতে পারছেন তার ওপর। যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে অভিভাবকের সচেতনতা, সময় দেওয়া এবং ভালোবাসা হতে পারে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
আসিফ