ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাচ্চাকে যেভাবে টিভি বা মোবাইল থেকে দূরে রাখবেন

প্রকাশিত: ২২:০১, ১৫ মে ২০২৫

বাচ্চাকে যেভাবে টিভি বা মোবাইল থেকে দূরে রাখবেন

ছ‌বি: প্রতীকী

বর্তমান সময়ে শিশুদের মোবাইল ও টিভি স্ক্রিনে আসক্তি একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কিছু অভিভাবক দেখিয়েছেন, সঠিক কৌশল ও ধৈর্যের মাধ্যমে ছোট্ট শিশুকেও পুরোপুরি স্ক্রিন ফ্রি রাখা সম্ভব। এক মা তাঁর আড়াই বছরের সন্তানের এখন পর্যন্ত টিভি বা মোবাইলের কোনও স্ক্রিনের সংস্পর্শে না আসার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

তিনি বলেন, "শুরু থেকেই আমাদের বাউন্ডারিটা ছিল একেবারে স্পষ্ট— ফোন ওর জন্য নয়, এটা বড়দের কাজের জন্য।" শিশুটি যখনই মোবাইল হাতে নিতে চেয়েছে, তখনই শান্তভাবে বারবার বোঝানো হয়েছে, "ফোন তোমার জন্য না", এবং এই নিয়মে তাঁরা কখনোই ছাড় দেননি।

শিশুটি মোবাইল না পাওয়ায় প্রথম দিকে ট্যান্ট্রাম বা কান্নাকাটি করেছে, কিন্তু সেসব পরিস্থিতিতে তাকে ভালোবাসা ও সহানুভূতির সাথে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। "কখনোই রেগে যাইনি, বকাঝকা করিনি, শুধু বুঝিয়েছি—তোমার কষ্ট হচ্ছে আমি জানি, কিন্তু ফোন নেওয়া যাবে না", বলেন ওই মা।

তিনি আরও বলেন, ছোট শিশুদের ইম্পালস কন্ট্রোল করার ক্ষমতা কম থাকে। সামনে ফোন থাকলে স্বাভাবিকভাবেই তারা সেটা নিতে চাইবে। তাই ফোন সবসময় বাচ্চার নাগালের বাইরে রাখা হয়। যদি সে কখনো ফোন হাতে নিয়ে ফেলে, তখন বিকল্প খেলনা বা অন্য কোনও আকর্ষণীয় জিনিস দিয়ে তার মনোযোগ সরিয়ে দেওয়া হয়।

এই পরিবারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হচ্ছে—বাবা-মা কেউই বাচ্চার সামনে ফোনে স্ক্রলিং করেন না। বাবা কাজ শেষে বাসায় ফিরে ফোন এক পাশে রেখে পুরো সময় সন্তানের সঙ্গে কাটান। মা নিজে ঘরে থাকেন এবং পেশাগতভাবে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ায় মোবাইল ব্যবহার করেন ঠিকই, তবে বাচ্চার সামনে তা সীমিত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।

বাচ্চার সামনে কখনো টিভি, ভিডিও, রিলস, টিকটক কিছুই চালানো হয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিশুটির এসবের প্রতি কোনও আকর্ষণ তৈরি হয়নি। এই মা জানান, "আমরা কখনোই ওকে শান্ত করার জন্য ফোন দেইনি, বা কার্টুন চালিয়ে ওর কান্না থামাইনি।"

তবে একটিমাত্র ব্যতিক্রম আছে— যখন বাচ্চাটি ভিডিও কলে দাদা-দাদী, নানা-নানী বা আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে। এছাড়া ছবি তোলা বা ভিডিও করার সময়টাও খুবই সীমিত, এবং সেগুলো শিশুকে দেখানো হয় না।

এই অভিভাবকের ভাষায়, "টিভি বা মোবাইল ছাড়া বাচ্চা পালন অবশ্যই সম্ভব, তবে এর জন্য আপনাকে কিছুটা স্যাক্রিফাইস ও ডিসিপ্লিন থাকতে হবে। আমরা সমাজে স্ক্রিনের ব্যবহার এতটাই স্বাভাবিক করে ফেলেছি যে বাচ্চাকে স্ক্রিন ছাড়াই বড় করার কথাই অনেকের মাথায় আসে না। কিন্তু সেটা সম্ভব— একটু চেষ্টা ও ধারাবাহিকতার মাধ্যমে।"

এই উদাহরণ প্রমাণ করে, সচেতন ও নিয়মতান্ত্রিক অভিভাবকত্বের মাধ্যমে শিশুকে স্ক্রিন আসক্তি থেকে দূরে রাখা সম্ভব।

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=9JDi-C7GYk8

এম.কে.

×