ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নারীর ময়নাতদন্ত

কেন নয় নারী চিকিৎসক

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ১৫ মে ২০২৫

কেন নয় নারী চিকিৎসক

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নতুন বাংলাদেশ গঠন প্রক্রিয়ায় নানামাত্রিক অসঙ্গতি বিদ্যমান সমাজকে আলোড়িত করে যাচ্ছে। মূল বিভাজনে নারী-পুরুষ সমতা কিংবা ধর্মীয় বিধিতে নারী সংক্রান্ত নিয়মকানুনও সচেতনভাবে উঠে আসছে। আমরা জাতি হিসেবে বিশ্বাসী। দুই বৃহৎ সম্প্রদায় হিন্দু-মুসলমান যেই হোক না কেন। ইসলামে পর্দা প্রথাকে মূল বিবেচনায় রেখে আনুষঙ্গিক কিছু বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর শুধু অসমতা কিংবা বিভেদ নয় বরং প্রচলিত ধর্মীয় নিয়মনীতিকে প্রাধান্য দিতেও কতিপয় সুপারিশমালা প্রণয়ন পরিস্থিতির ন্যায্যতা। এমনিতে পর পুরুষের সামনে অনাত্মীয় নারীদের প্রতি যেসব নিয়ম চালু থাকে সেটা অতি অবশ্যই পর্দার আড়াল থেকে করতে হবে। কিন্তু নারী যদি মারা যায় তার শবদেহ আর কোনো পুরুষের সামনে দেখানো যায় না। যা শুধু ধর্ম নয়। প্রচলিত আইন, সমাজ সংস্কারেরও দীর্ঘদিন চলে আসা এক নিয়মের অধীন। ছোট বেলা থেকে আমরা দেখেছি নারী মারা গেলে স্বামীকে পর্যন্ত লাশ দেখানো যায় না। শুধু তাই নয় নারীরাই শবদেহকে ধোয়ানো, মোছানো করে খাটিয়ায় শুইয়ে দেন। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তির আধুনিকতার বলয় নিত্য নতুন অভিগমনে কত বিধি, সংস্কার পেছনে ফেলে দিচ্ছে সেটাও সবার পক্ষে মানা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি সর্বোচ্চ মহামান্য আদালতও নারীর পর্দা প্রথা সামনে এনে কবরে লাশ যাওয়া পর্যন্ত সর্ববিধ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট নারীরাই অংশ নেবেন এমন বিধি নিয়ম যুগ-যুগান্তরের। শুধু স্বাভাবিক লাশ হলে তেমন কোনো আশঙ্কার বিষয় থাকেই না। আধুনিক যে কোনো দেশে শুধু স্বাভাবিক মৃত্যু নয় অপঘাতে মৃত্যু, আত্মহত্যা, খুন, জখম সবই নতুন সমাজ সভ্যতার নব অনুষঙ্গ। আত্মহত্যা কিংবা খুন করা হলে সবার আগে ময়নাতদন্তের মতো সরেজমিনে শবদেহ পরীক্ষা করাও পরিস্থিতির ন্যায্যতা। প্রশ্ন উঠছে ঠিক এখানেই। ময়নাতদন্ত এবং প্রতিবেদন তৈরিতে নারীর মৃতদেহের জন্য নারী চিকিৎসকই জরুরি বলে বিবেচনায় আসা বর্তমান সময়ের আর এক আবশ্যকীয় কর্ম হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে উঠে আসছে আত্মহত্যায় নারীরা এগিয়ে। সেটা কেন তেমন প্রশ্ন এখানে জরুরি নয়। বরং প্রয়োজনে ময়নাতদন্ত করা হলে তা কেন নারী চিকিৎসক নিয়ে নয় এই মর্মে মহামান্য আদালত এক রুল জারি করেছেন। বেশি লোক প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট নারী নার্স দিয়ে কাজ সমাধা করতে হাইকোর্ট এমন নির্দেশনা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জুয়েল আজাদ গত মাসে উল্লিখিত রিটটি করেন। জুয়েল আজাদ মহামান্য হাইকোর্টকে আরও অবহিত করেন ইতোমধ্যে পাকিস্তানে নারী চিকিৎসকই নারীর শবদেহ ময়নাতদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকছেন। সংবিধানে উল্লেখ থাকে যে, কোনো মানুষ শুধু জীবিত অবস্থায় নয়, বরং মারা যাওয়ার পরই তার যথার্থ অধিকার আর মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় ইসলামের নিয়মবিধি অনুযায়ী নারীর মৃতদেহ সৎকারও যেন নারীদের দিয়ে করানো হয়। তিনি চিকিৎসক, নার্স কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী যেই হোন না কেন। জীবন ক্ষণস্থায়ী। জন্ম, মৃত্যু পরম করুণাময়ের বিধান। তেমন বিধিনিষেধ পালন করাও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য অবশ্যই  কর্তব্য। এর অন্যথা শুধু ধর্ম নয় সমাজ, সংস্কার আইনগত বিধি সবক্ষেত্রে স্পষ্ট হয়ে আছে। যথাযথ অনুসরণ সংশ্লিষ্ট বিধি নিষেধকে সম্মান জানানো উচিত। জীবনের নানামাত্রিক যাত্রাপথে ধর্ম আর আইনানুগ বিধি একসুতায় গাঁথা, অবিচ্ছেদ্য। যাতে কোনোভাবেই লঙ্ঘনীয় নয়।
অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্যানেল

×