
ছবিঃ সংগৃহীত
রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ শুধু কার্বোহাইড্রেটের ব্যাপার নয়, সঠিক হাইড্রেশনও গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা—এই দুটি বিষয় সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যদি আপনার টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে এ দুটি বিষয় আরও বেশি গুরুত্ব পায়।
একদিকে উচ্চ রক্তে চিনি অতিরিক্ত প্রস্রাবের কারণ হতে পারে, যা শরীরে পানিশূন্যতা ডেকে আনতে পারে। অন্যদিকে, সঠিকভাবে হাইড্রেটেড থাকা কিডনির কার্যকারিতার জন্য জরুরি, কারণ কিডনি রক্ত থেকে অতিরিক্ত চিনি বের করে দিতে সাহায্য করে।
ভাগ্য ভালো যে, কিছু নির্দিষ্ট পানিযুক্ত খাবার রয়েছে যা সুস্বাদু এবং ডায়াবেটিস-বান্ধব ডায়েটের অংশ হতে পারে। রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানদের পরামর্শ অনুযায়ী, নিচে এমন ৬টি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যা রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে ও শরীর হাইড্রেটেড রাখতে সহায়ক:
১. শসা (Cucumbers)
১ কাপ কাটা শসা = ৩.৩ আউন্স পানি
প্রায় ৯৫% পানি রয়েছে শসায়, যা শরীরকে ঠান্ডা ও হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। প্রতি কাপ শসায় মাত্র ৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং খোসাসহ খেলে সামান্য পরিমাণে ফাইবারও পাওয়া যায়, যা রক্তে গ্লুকোজের দ্রুত বৃদ্ধি রোধে সহায়ক।
সালাদে, স্মুদি বা ঠান্ডা স্যুপে, কিংবা কাঁচা খাওয়ার উপযুক্ত—শসা যেকোনোভাবে খাওয়া যায়।
২. ঢেঁড়স (Okra)
১ কাপ রান্না করা ঢেঁড়স = ৫ আউন্স পানি
ঢেঁড়স ৯৩% পানি সমৃদ্ধ এবং প্রতি কাপ ঢেঁড়সে থাকে ৪ গ্রাম ফাইবার। এটি এক ধরনের জেলি-জাতীয় সলিউবল ফাইবার যা চিনির শোষণ ধীর করে। এছাড়াও এতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিফেনল, যা প্রদাহ হ্রাস এবং গ্লুকোজ বিপাক উন্নত করতে সাহায্য করে।
ঢেঁড়সে ৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে, যা রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এটি রোস্ট করে, স্টিম করে বা স্যুপে খাওয়া যেতে পারে।
৩. আপেল (Apples)
১টি মাঝারি আপেল = ৫.২ আউন্স পানি
আপেল প্রায় ৮৫% পানি দিয়ে গঠিত এবং প্রতি আপেলে ৪ গ্রাম ফাইবার থাকে। আপেলের চিনির শোষণ ধীরে হয় বলে এটি দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করে। এর খোসায় থাকা পেকটিন ও সেলুলোজ নামক ফাইবার রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ কার্ব খাবারের আগে আপেল খেলে রক্তে চিনি বৃদ্ধির হার কমে। আপনি চাইলে আপেল বাদামবাটার বা পনিরের সঙ্গে খেতে পারেন, অথবা ডায়াবেটিস-বান্ধব "অ্যাপল সিডার চিকেন" রান্না করে দেখতে পারেন।
৪. আঙ্গুরফল (Grapefruit)
আধা আঙ্গুরফল = ৩.৬ আউন্স পানি
এই সাইট্রাস ফলটির ৯০% পানি এবং এতে আছে পটাশিয়াম, যা শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আঙ্গুরফলের ফাইবার চিনির শোষণ ধীর করে ও শক্তি স্থিতিশীল রাখে।
স্ন্যাক, সালাদ বা স্মুদিতে এটি যুক্ত করা যায়—একেবারে তাজা স্বাদের হাইড্রেটিং ফল।
৫. তরমুজ (Watermelon)
১ কাপ তরমুজ = ৪.৬ আউন্স পানি
৯১% পানি দিয়ে গঠিত তরমুজ গরম দিনে শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং হাইড্রেশন বজায় রাখতে দারুণ। প্রতি কাপ তরমুজে মাত্র ৯ গ্রাম চিনি থাকে, যা নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে ডায়াবেটিস ডায়েটে রাখা যায়।
তরমুজে রয়েছে সিট্রুলিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড, যা নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনে সহায়ক এবং রক্তপ্রবাহ উন্নত করে। এতে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হ্রাসেও সহায়তা করতে পারে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
এটি বাদাম বা পনিরের সঙ্গে খেলে কার্ব হজম ধীরে হয়। চাইলে "Watermelon, Cucumber & Feta Salad" রেসিপিও ট্রাই করতে পারেন।
৬. প্লেইন গ্রিক দই (Plain Greek Yogurt)
১ (৫.৬ আউন্স) কনটেইনার = ৪.৪ আউন্স পানি
গ্রিক দই উচ্চ জলীয় উপাদানসমৃদ্ধ এবং এতে প্রোটিন থাকে প্রচুর পরিমাণে। এতে কার্ব এবং চিনির পরিমাণ কম হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত।
একটি কনটেইনার দইয়ে প্রায় ১৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা হজম ধীর করে ও রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল রাখে। এটি ক্ষুধাও কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গ্রিক দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা রক্তে চিনির নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। উপরে বেরি বা দারুচিনি ছিটিয়ে খেলে আরও মজাদার ও উপকারী হবে। চাইলে ঘরেই দই তৈরি করে নিতে পারেন।
উপসংহার
এই পানিযুক্ত খাবারগুলো শুধু হাইড্রেশনের জন্যই নয়, বরং রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণেও অসাধারণ ভূমিকা রাখে। তাই আপনি যদি ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন, কিংবা স্বাস্থ্য সচেতন থাকেন—এই খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখুন।
সূত্রঃ https://www.eatingwell.com/best-hydrating-foods-for-blood-sugar-11715676
ইমরান