ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

গারো নারীরা উদ্যোক্তার কাতারে

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:০০, ৮ নভেম্বর ২০২৪

গারো নারীরা উদ্যোক্তার কাতারে

গারো নারীদের জীবনাচরণ ব্যতিক্রমী ধারায় আবর্তিত

টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চল। পাহাড় আর বনের অবিমিশ্র মিলনে মধুপুরের পার্বত্য এলাকায় গারো নারীদের জীবনাচরণ ব্যতিক্রমী ধারায় আবর্তিত। কৃষি কাজে অভ্যস্ত গারো সমাজের আর এক চমকপ্রদ সামাজিক চেহারা মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। অর্থাৎ কর্তৃত্বে গারো নারীর জন্মগত অধিকার সমাজ সংস্কারের অনন্য বিধি। 
সম্পত্তি আর বংশ পঞ্জিও অর্জন ধারণ করা হয় মায়ের দিক থেকেই। পার্বত্য এই বনাঞ্চলের ঐতিহ্যিক নিয়ম বিধিতে নারীদের রিচস্থায়ী সম্মান, স্বাধীনতা, মর্যাদা সামাজিক পরিম-লে স্বীকৃত, অনিবার্যও বটে। জুম চাষাবাদে অভ্যস্ত কৃষিভিত্তিক নারীপ্রধান সমাজ গারোদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার অভিগমন সময়ের চাহিদা। যেখানে ভূমিনির্ভর চাষাবাদ থেকে অন্যদিকে মোড় ফেরানো নতুন আবহের নবদ্যুতি তো বটেই। 
মাতৃতান্ত্রিক এমন পরিবারে নারীদের আয় রোজগারও অবশ্যম্ভাবী এক পর্যায়। নিয়ম অনুযায়ী  স্বামীরা শ্বশুরবাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করা আর এক ঐতিহ্যিক পরিম-ল বলা যায়। সংগত কারণে স্বাধীনচেতা, আত্মপ্রত্যয়ী গারো নারীরা জীবন নির্বাহেও তাদের প্রতিদিনের কর্মযোগকে সচেতনভাবে এগিয়েও নিয়ে যায়। 
বহুকাল ধরে চলে আসা এমন বংশনুক্রমিক নিয়মবিধিতে পুরুষরাই গৃহে থাকার বিষয়টাও প্রচলিত সংস্কারের অনন্য পালাক্রম। গৃহে অলস সময় পার করা স্বামীরা সন্তানদের দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া গারো সংস্কৃতির চলে আসা রীতি। তবে আধুনিকতার নির্মাল্য আর প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নে গারো সমাজে যে পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয় সেখানে ছোট্ট পারিবারিক আঙ্গিনা থেকে বৃহত্তর সামাজিক বলয়েও নব্য সংস্কৃতির দৃশ্যমান প্রভাব উদিত সূর্যের প্রাসঙ্গিক কিরণ তো বটেই।

তেমন সুসময়ে গারো নারী সমাজের যে আলোকিত ভুবন তা চিরায়ত ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলে মিশে যে অনন্য জগৎ উন্মোচিত তা পুরনো সংস্কারকে এক প্রকার পেছনে ফেলা। নতুন আলোর নবকিরণে গারো নারী সমাজ আধুনিকতার প্রযুক্তি বলয়কে আলিঙ্গন করতে নিয়তই এগিয়ে যাচ্ছে। চাষাবাদ ছেড়ে ব্যবসাবাণিজ্যে মনোযোগ সৃষ্টিতে উদীয়মান নারী উদ্যোক্তা তৈরি হওয়া গাড়ো পার্বত্য এলাকাকে নতুন আবহের অংশীদারও করছে।

অতি প্রাচীনকাল থেকে ভূসম্পত্তির মালিক আর পারিবারিক নেতৃত্বে সামনে থাকা গাড়ো মহিলারা আজ আধুনিক ব্যবসাবাণিজ্য নিজেদের সমর্পণ করে যোগ্যতম প্রমাণ করতে নবযুগকে আলিঙ্গন করার চিত্র সত্যিই স্বস্তিদায়ক। এতদিন ধরে পাহাড়, অরণ্য, নদী আর কৃষি ভূমির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য থাকা গারো নারীরা আজ সামনের দিকে এগিয়ে নতুন সময় আর চমকপ্রদ আধুনিক কর্মযোগে নব ব্যবস্থাপনার সহগামী হতে যা করার সবটাই করে যাচ্ছে। 
চিরস্থায়ী সামাজিক গ্রন্থি, প্রচলিত জীবন সংস্কৃতিতে নবধারার যে অনন্য সংযোজন সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়, অভিনন্দনযোগ্য তো বটেই। সমাজ, পরিবার ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি মাতৃতান্ত্রিক গারো পরিবারের পুরো নারী সমাজই। কন্যা, জায়া, জননী সত্যিই নারী শক্তির এক অবিমিশ্র সম্মোহিত, সম্মানিত আধার। দুঃসাহস আর অনন্য শক্তিমত্তায় গারো নারীদের নিত্যনতুন দুর্বিনীত অভিযানে আধুনিকতার নব্য ছায়ায় যে অভাবনীয় অগ্রগামিতা তাও কর্মঠ হয়ে ওঠার স্বস্তিকর চিত্র। 
ধর্মীয় ভাবানুভূতি ও বিশ্বাসে জনগণ খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। শতকরা ৯৭ জনই খ্রিস্টান। ন্যূনতম তিন শতাংশ প্রচলিত সমাজ সংস্কারের সনাতনী প্রথার অনুগামী। তবে ধর্ম সেখানে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে না বলে তথ্যউপাত্তে উঠে আসে। মূলত পুরো সমাজ আবর্তিত হয় প্রচলিত নিয়ম, নীতি, সংস্কার, আচার  নিষ্ঠতাকে কেন্দ্র করেই। যা এদেশের পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্তার চিরায়ত ঐতিহ্যই শুধু নয়- বৈশিষ্ট্যও বটে।

তবে নতুন সময়ে অবগাহন করেও গারো সমাজ আজও তাদের সামাজিক ঐতিহ্য ও প্রয়োজনীয় প্রাচীন সংস্কার থেকে বিচ্যুত না হওয়াও একপ্রকার সনাতনী প্রথাসিদ্ধ আচারকে আঁকড়ে ধরা। তবে উদীয়মান নতুন প্রজন্ম যেহেতু আধুনিকতার তথ্যপ্রযুক্তির বলয়ে জীবন-মান গড়ে তুলছে সেখানে অনিবার্যভাবে দানা বাঁধছে মুক্ত সংস্কৃতি, নতুন সময়ের যৌক্তিক আহ্বান আর বৈচিত্রিক পেশার হরেক সম্মিলন। 
তবে স্বাধীনতা আর অধিকার যে কোনো মানুষের চিরস্থায়ী সম্পদই নয় সম্বলও বটে। গারো সমাজে নারী শিক্ষার হার বেড়ে যাওয়া নবযুগের হাওয়া তো বটেই। অনুষঙ্গ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি কর্মযোগে অভিষিক্ত হওয়া নতুন যুগকে আলিঙ্গন করা। বর্তমান সময়ে শিক্ষিত ও বৈচিত্রিক পেশায় নিবেদিত নারীরা তেমন আলামতে গারো সমাজকে আধুনিকতার চাদরে আবৃত করছে। নারী ঘনিষ্ঠ, বান্ধব এই সমাজে তাদের অবস্থানও চমকপ্রদ স্বস্তিদায়ক। কর্তৃত্ব এবং সাংসারিক দায়দায়িত্বে গারো নারীসমাজ আজও নিজেদের সুসংবদ্ধ, শক্ত অবস্থানে দৃঢ়তার সঙ্গে শুধু টিকে থাকাই নয় বরং বীরদর্পে সামনে এগিয়েও যাচ্ছে। 
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×