ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উষ্ণতার সঙ্গী শাল

জলি রহমান

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩

উষ্ণতার সঙ্গী শাল

উষ্ণতার সঙ্গী শাল

বনে বনে পাখির ঝাঁক গেয়ে যায় গীত/ক্ষণে ক্ষণে বহে বায়ু, হাড় কাঁপানো শীত- পৌষের সকাল কবিতার অংশ বিশেষ। এখন বনে বনে পাখির ঝাঁক গ্রামে দেখা গেলেও শহরে এর অস্তিত্ব মেলা ভার। তবে হাড় কাঁপানো শীত সারা দেশেই কমবেশি দেখা যায়। পৌষের প্রকৃতিতে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। দুপুরের প্রখর রোদের তাপও দিচ্ছে শীতল অনুভূতি। শীত মৌসুম বরাবরই বেশ ছন্দময়। পিঠাপুলির উৎসব, ভ্রমনে যাওয়া, বাহারী ডিজাইনের উষ্ণ পোশাক পরে নিজেকে ফ্যাশনেবল করা। সবকিছুই যেন একই সুরের মূর্ছনা দেয়। নব্বই দশকের মা-বাবাদের কাছে শীতের অন্যতম পোশাক ছিল শাল বা চাদর। ছোটরা উষ্ণতা পেতে কখনো কখনো সেই চাদরে আশ্রয় নিত।

সে সময়ের স্কুলের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে দেখা যেত। পুরুষ শিক্ষকগণ গায়ে একটি জাম্পার এবং তার উপরে বড় একখানা চাদর জড়িয়ে রেখেছেন। আর নারী শিক্ষকদের শাড়ির সঙ্গে শালই ছিল অন্যতম শীত পোশাক। এখনো অবশ্য স্কুলের শিক্ষকরা শাড়ির সঙ্গে শাল পরতেই বেশি পছন্দ করেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাকে এসেছে বৈচিত্র্য। বাহারী ডিজাইনের শীত পোশাক থাকলেও শালের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি নিঃসন্দেহে। দেখা যায় রাস্তার পাশে বসে যে নারী পিঠা বিক্রি করছেন তার গায়ে একটি সোয়েটারের উপরে চাদর জড়ানো। আর যে তরুণ সেই পিঠা কিনছে তার উষ্ণতার জন্যও গায়ে শাল দিয়েছেন, সঙ্গে রয়েছে অভিজাত্য ভাব। 
আগের দিনে রাজা-মহারাজারা আভিজাত্যের নিদর্শন হিসেবে কাঁধে ঝুলিয়ে নিতেন রাজকীয় কারুকাজ করা একটি চাদর। বণিক সম্প্রদায়ের লোকজনও চাদর ঝুলিয়ে নিতেন পারিবারিক ঐতিহ্য বা আভিজাত্য হিসেবেই। এর সার্বজনীনতা অগ্রাহ্য করা যায় না। অঞ্চল ভেদে এই শাল ব্যবহারেও রয়েছে ভিন্নতা। তবে সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি যাই হোক না কেন শালের কদর রয়েছে সবজায়গায়। শীতকালীন বিয়ের উৎসব বা অনুষ্ঠানে শাল ব্যবহৃত হয় ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে। বাঙালি শাড়ি যেমনÑ নানা ঢঙে এবং নানা কায়দায় পড়া যায়, ঠিক তেমনি শাল ব্যবহারেও রয়েছে নানা স্টাইল। বিভিন্ন রং, কাটিং এবং ডিজাইনের শাল ফ্যাশন সচেতন নারীদের করে আকৃষ্ট।

এজন্য শীতকালীন উৎসবে শাড়ির সঙ্গী হয় শাল। টিভির পর্দায় চোখ রাখলে দেখা যায় দেশের শীর্ষস্থানীয় নারীরা আভিজাত্য ও সৌন্দর্য প্রকাশ করছে শালের মাধ্যমে। এই বস্ত্রটি ধনী-গরিব নির্বিশেষে ব্যবহার করছে সবাই। তবে চাদরের মান এর ব্যবহারে ভিন্নতা প্রকাশ করে। কেননা বিভিন্ন দাম ও মানের শাল পাওয়া যায়। মানসম্মত একটি শাল ভিন্ন রূপ ও ট্রেন্ডি ভাব নিয়ে আসে। আভিজাত্য প্রকাশ করতে অনেকেই বেছে নেয় নান্দনিক শাল। আবার রাস্তার পাশে যে চাদর জড়িয়ে গায়ে তা দিচ্ছেন সেও এক ধরনের ঐতিহ্য বহন করে। তাই এর প্রয়োজনীয়তা ও সৌন্দর্য সবজায়গায় লক্ষণীয়।

তরুণ-তরুণীরা বাইরে ঘুরতে যাওয়া কিংবা আড্ডা দেওয়ার সময় পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে একটি শাল পরতে পারেন। যা দেবে ট্রেন্ডি লুক। ফ্যাশনে ভিন্নলুক আনতেও ব্যবহার করা যায় পাতলা রঙিন চাদর। এসব চাদরের রং এবং প্রিন্ট সুন্দর হওয়ায় অনেক তরুণীরা শীতের সময়ে ওড়নার পরিবর্তে ব্যবহার করেন। গাঢ় শেডের সবুজ, মেরুন, রয়েল ব্লু অথবা পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে যে কোনো রঙের শাল বা চাদর বেছে নিতে পারেন ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে। এটি পোশাকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এর যে কত কদর এবং বৈচিত্র্য রয়েছে তা বোঝা যায় বাণিজ্য মেলায় শালের স্টলগুলোতে গেলে। প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসে আয়োজিত এ মেলার বহু স্টলেই থাকে আকর্ষণীয় কারুকার্যের শাল। এগুলো তৈরি হয় বাহারী রং ও পাতলা কাপড় দিয়ে। এসবের মধ্যে বিখ্যাত হলো কাশ্মীরি শাল। এর সুখ্যাতি উপমহাদেশের গ-ি পেরিয়ে ইউরোপের মাটিতে চলে গেছে বহু আগেই। বাণিজ্যমেলা শীতকালে আয়োজিত হয় বিধায় কাশ্মীরি শালের দোকানে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। 
জানা যায় আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে কাশ্মীরি শাল তৈরি করা হয় নেপাল ও কাশ্মীরে। যা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মহিলাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ধীরে ধীরে এই জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোও শীত মৌসুম শুরু হলেই তৈরি করে সুন্দর রং এবং ডিজাইনের শাল। এছাড়াও ছোট-বড় সবধরনের  শপিংমলেও পাওয়া যায় আকর্ষণীয় চাদর বা শাল। 
দাম : বর্তমানে বিভিন্ন দামের শাল দেখা যায় মার্কেটে। তবে ভালো মানের শালগুলোর দাম একটু বেশি। এগুলো ২ হাজার থেকে ৮ হাজারের মধ্যে পাওয়া যাবে। আর কম দামীয় শালগুলোর দাম হবে ৩শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।
পোশাক ও ছবি : রঙ বাংলাদেশ

×