
ছবি : সংগৃহীত
প্রযুক্তির জগতে আরেকটি বড় সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো চীন। দেশটি তৈরি করেছে বিশ্বের প্রথম ‘ওশানিক মাইক্রোস্কোপ’—একটি সর্বাধুনিক মহাসাগর অনুকরণকারী সিমুলেশন সিস্টেম, যার নাম LICOMK++। এই প্রযুক্তি দিয়ে সমুদ্রের ভেতরের ঘটনা খুব ছোট আকারে, ১ কিলোমিটার রেজোলিউশনে, পরিষ্কারভাবে দেখা ও বিশ্লেষণ করা যায়। এত সূক্ষ্মভাবে আগে কখনো সমুদ্র পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। LICOMK++ কেবল একটি সিমুলেশন প্রযুক্তি নয়, বরং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
চীনের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে ইনস্টিটিউট অব অ্যাটমোসফেরিক ফিজিক্স এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার যৌথভাবে এই প্রযুক্তি তৈরি করেছে। এটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞার পাল্টা জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
LICOMK++ এর পূর্ণরূপ “LASG/IAP Climate Ocean Model K++”। এটি এমন এক সিমুলেশন সিস্টেম যা পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে এমন সমুদ্রঘূর্ণি, স্রোত, তাপ পরিবহন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। আগে এতটা নিখুঁত বিশ্লেষণ প্রযুক্তিগতভাবে অসম্ভব ছিল।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—LICOMK++ সম্পূর্ণভাবে দেশীয় যন্ত্রাংশে পরিচালিত হয়, অর্থাৎ কোনো বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভর না করেই এটি চালানো সম্ভব। এতে চীন তাদের প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা আরও শক্তিশালী করলো।
কী করতে পারে এই সিস্টেম?
-
রিয়েল টাইমে সাগরের স্রোতের গতি ও আচরণ বিশ্লেষণ
-
উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ইন্টিগ্রেট করে সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া
-
ভবিষ্যতে উপকূলীয় এলাকার জলবায়ু পরিস্থিতির মডেল তৈরি
-
সমুদ্র কীভাবে অতিরিক্ত তাপ ও CO₂ শোষণ করে তা নির্ণয় করা
কেন এই উদ্ভাবন?
পৃথিবীর মোট তাপের ৯০% এর বেশি শোষণ করে মহাসাগর, এবং এটি পরিবেশের CO₂ এরও একটি বড় অংশ শোষণ করে। ফলে উপকূলীয় এলাকাগুলো শীতল থাকে। LICOMK++ ব্যবহারে বিজ্ঞানীরা ঘূর্ণিঝড়, হঠাৎ স্রোতের পরিবর্তন, ও প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর আগাম পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবেন। এর ফলে প্রস্তুতির সুযোগ বাড়বে এবং প্রাণহানি কমবে।
LICOMK++ এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে চীন কীভাবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অতিক্রম করে নিজস্ব প্রযুক্তি তৈরি করলো। উন্নত অ্যালগরিদম, দেশীয় সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারে কার্যকরী করে তারা এক বৈপ্লবিক উদাহরণ তৈরি করেছে—যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি শক্তিশালী অনুপ্রেরণা হতে পারে।
এই প্রযুক্তি শুধু চীনের জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক জলবায়ু গবেষণার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। LICOMK++-এর মাধ্যমে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখনো অনির্দেশ্য, সেগুলোরও পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে।
সা/ই