
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে আবাসন উন্নয়ন ও নগর দরিদ্রতা হ্রাসে নানা উদ্যোগ চললেও, উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক দ্রুত বর্ধনশীল শহরে এখনো বস্তি একটি বাস্তব ও গভীর সংকট। ২০২৫ সালের শুরুর দিকের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বসবাস করছে বস্তিসদৃশ পরিবেশে—যেখানে ঘিঞ্জি অবস্থা, নিম্নমানের আবাসন এবং পানীয় জল, বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশনের মতো মৌলিক সেবার অভাব প্রকট।
জাতিসংঘের মানব বসতি কর্মসূচি (UN-Habitat), বিশ্বব্যাংক এবং ওয়ার্ল্ডোমিটারের ২০২৫ সালের প্রাথমিক জনসংখ্যা তথ্য অনুযায়ী, বস্তিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যেসব দেশে, সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত, যার পরেই রয়েছে নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশ।
এই তালিকাটি মোট বস্তিবাসীর সংখ্যার ভিত্তিতে করা হয়েছে, শতকরা হারে নয়, যাতে প্রকৃত সংকটের ব্যাপ্তি স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।
শীর্ষ ১০টি দেশ ও বস্তিবাসীর সংখ্যা (২০২৫ সালের প্রাথমিক অনুমান)
র্যাংক দেশ মোট জনসংখ্যা বস্তিবাসীর সংখ্যা
১ ভারত ১.৪৬ বিলিয়ন ২৬.২ কোটি
২ নাইজেরিয়া ২৩৭.৫ মিলিয়ন ৬.৪ কোটি
৩ বাংলাদেশ ১৭৫.৭ মিলিয়ন ৪.১ কোটি
৪ পাকিস্তান ২৫৫.২ মিলিয়ন ৪ কোটি
৫ ইন্দোনেশিয়া ২৮৫.৭ মিলিয়ন ৩.৩ কোটি
৬ ব্রাজিল ২১২.৮ মিলিয়ন ৩.২ কোটি
৭ কঙ্গো ১১২.৮ মিলিয়ন ৩.১ কোটি
৮ ইথিওপিয়া ১৩৫.৫ মিলিয়ন ২.২ কোটি
৯ ফিলিপাইন ১১৫.০ মিলিয়ন ২.১ কোটি
১০ কেনিয়া ৫৭.৫ মিলিয়ন ১ কোটি
এই ১০টি দেশেই একত্রে প্রায় ৫৫ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করছেন বস্তিতে, যা বিশ্বব্যাপী মোট বস্তিবাসীর দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় সংকট প্রকট
শুধু ভারতেই প্রায় ২৬ কোটি মানুষ বস্তিতে বসবাস করে, যা দেশের শহরাঞ্চলের আবাসন সংকটের প্রকৃত মাত্রা তুলে ধরে। নাইজেরিয়া দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ৬.৪ কোটি বস্তিবাসী নিয়ে, যেখানে রাজধানী লাগোসসহ বড় শহরগুলোতে চাহিদার তুলনায় আবাসনের সরবরাহ অনেক কম।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানও তালিকায় ওপরের দিকে, যেখানে যথাক্রমে ৪.১ কোটি ও ৪ কোটি বস্তিবাসী রয়েছে। ঢাকায় এবং করাচির মতো শহরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থাকলেও, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়নের কারণে বস্তি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
অন্য অঞ্চলের চিত্র
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইন্দোনেশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার ব্রাজিলেও ৩ কোটির বেশি মানুষ বস্তিতে বসবাস করে। আফ্রিকার কঙ্গো, ইথিওপিয়া ও কেনিয়াতেও বস্তির সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে, যেখানে নগর পরিকল্পনা ও অবকাঠামো উন্নয়নে ঘাটতি রয়েছে।
এই তথ্য থেকে পরিষ্কার—সবচেয়ে বেশি বস্তিবাসীর দেশগুলো সবসময় দরিদ্রতম নয়, বরং এমন দেশ, যেখানে দ্রুত নগরায়নের সাথে তাল মিলিয়ে সরকার আবাসন, পানি, স্যানিটেশন ও ভূমি মালিকানা নিশ্চিত করতে পারেনি। ফলে উন্নয়ন প্রকল্প ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থাকলেও সাধারণ মানুষের জন্য আবাসনের সংকট কাটেনি।
নিয়মিত বিনিয়োগ ও নীতিগত সংস্কার ছাড়া আগামী বছরগুলোতে এই বস্তিগুলোর জনসংখ্যা আরও বাড়বে বলেই ধারণা।
সূত্র: https://africa.businessinsider.com/local/lifestyle/top-10-countries-with-the-largest-slum-populations-in-the-world-as-of-early-2025/m30b5eg
রাকিব