
আতর ও সুগন্ধি প্রতিটি ধর্মেই পছন্দ
আতর ও সুগন্ধি প্রতিটি ধর্মেই পছন্দ। এর সূত্র ধরে গোটা পরিবেশ সুগন্ধিময় করতে পাক-ভারত উপমহাদেশে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবার মধ্যে আগরবাতির প্রচলন ঘটেছিল। আগরবাতি হলো কাঠিতে মসলামাখা সুগন্ধিযুক্ত এক ধরনের বাতি। আগরবাতিতে আগুন জ্বালালে তা ধীরে ধীরে পুড়ে চারপাশে সুগন্ধি ছড়ায়। আগরবাতি উৎপাদন কুটির শিল্পের অন্তর্গত। সাধারণত বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানে আগরবাতি জ্বালানো হয়। আগরবাতি জ্বালালে ঘরের পরিবেশ ও চারপাশ সুগন্ধে ভরে যায়।
মন্দির, মসজিদ, গির্জা প্রভৃতি উপাসনালয়ে এবং বাড়িতে পূজা বা মিলাদে আগরবাতি ব্যবহার করা হয়। কুটির শিল্পের অন্তর্গত এই আগরবাতি তৈরি হচ্ছে- উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর সৈয়দপুরে। আর এ কাজে জড়িয়ে পড়েছে নি¤œআয়ের পরিবারের গৃহবধূ থেকে স্কুলের সহস্রাধিক মেয়েরাও। আগরবাতি সৈয়দপুর শহরে ক্ষুদ্র আয়ের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। প্রায় ৭০ বছর থেকে সৈয়দপুরে আগরবাতি তৈরির সঙ্গে ১০ থেকে ১২ হাজার নারী জড়িত থাকলেও বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন হাজারে।
গৃহবধূরা সারাদিন সংসারের কাজ শেষে আর মেয়েরা স্কুল থেকে ফিরে আগরবাতি তৈরিতে কাজে লেগে যায়। বিনা পুঁজিতে শুধু দুটো কাঠের পিঁড়িতে এই ক্ষুদ্র শিল্পের মালিকদের দেওয়া কয়লা, কাঠের ভুসির ও বিজলার ছালের পাউডারের পেস্ট বানিয়ে বাঁশের কাঠিতে লাগিয়ে আগরবাতি তৈরি করছেন তারা। এতে প্রতিদিন জনপ্রতি আয় হচ্ছে ১০০ টাকা।
পরিবারের একমাত্র আয়কারী ব্যক্তি স্বামী বা বাবার কাছে নিজের প্রয়োজনীয় টাকার জন্য হাত পাততে হচ্ছে না স্ত্রী বা সন্তানদের।
দেশের একমাত্র রেলওয়ে কারখানাকে কেন্দ্র করে কৃষির পাশাপাশি ব্যবসা ও শিল্পে এগিয়ে আছে সৈয়দপুর। শহর গ্রামজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন পণ্য তৈরির ছোট ছোট কারখানা। এরই অন্যতম একটি হলো আগরবাতি। এখনো আগরবাতি তৈরিতে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করছেন নারীরা।
সৈয়দপুর শহরের পাড়া-মহল্লার বাড়ির আঙিনা বা দরজার সামনে বসে ছোট মেয়ে বা নারী কাঠের পিঁড়িতে বসে আরেক পিড়ির ওপর হাত দিয়ে ঘষে আগরবাতি বানাচ্ছেন। মহাজনরা আগরবাতি তৈরির উপকরণ বাড়িতেই দিয়ে যান। এসব উপকরণ নিয়ে অবসর সময়ে বাড়ির নারী সদস্যরা আগরবাতি বানাতে বসে যান।
প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ হাজার আগরবাতি বানাতে পারেন তারা। এ থেকে আয় হয় ৬০ থেকে ১০০ টাকা। এছাড়া কিছু আধুনিকতার ছোঁয়াও লেগেছে এই শিল্পে। অনেকে স্থানীয়ভাবে ছোট ছোট মেশিন তৈরি করে সেটা দিয়েও আগরবাতি তৈরি করছেন। আয়ের পরিমাণ সামান্য হলেও ছোটখাটো বিপদে কারও কাছে হাত পাততে হয় না তাদের।
সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়া, মুন্সিপাড়া, গোলাহাট, বাঁশবাড়ী এলাকার ময়মুনা, নাহার, তাসনিমা, মুন্নি, তামান্না বলেন, এটা কোনো চাকরি না, আমরা বাড়ির কাজ; স্কুল শেষ করে বাড়তি সময়ে আগরবাতি বানাতে বসি। দুই থেকে ৪ হাজার পর্যন্ত বানাতে পারি। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে আমরা নিজেদের টুকিটাকি খরচ ও স্কুলের খাতা-কলম কিনি। কারও কাছে হাত পাততে হয় না। নাছিমন ও হাবিবা বলেন, বসে না থেকে কাজ করি। যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের ছোটখাটো সমস্যা মিটাতে পারি।
তারা আরও জানান প্রতিমাসে যদি ৩ হাজার টাকা করে হাতে আসে, তা দিয়ে আমাদের নিম্ন আয়ের পরিবারের বিশাল পাওয়া। তাই এই আগরবাতি তৈরি করে আমরাও আলোকিত ও সুগন্ধি জীবন উপভোগ করতে পারছি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপক হুসনে আরা খাতুন বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের আমরা সব সময় প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আগরবাতির ক্ষেত্রেও তারা এগিয়ে আসলে কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেব।