
ছবি: জনকণ্ঠ
বর্ষার আগমনে কুমিল্লার মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর বাজারে আবারও জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। একসময় এই হাট ছিল নৌকা বিক্রির জন্য দেশের অন্যতম কেন্দ্র, আর এখন তা শুধু টিকে থাকার সংগ্রামে মুখর। উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন ১২ নম্বর রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের এই হাটে বর্ষা মৌসুমে নতুন প্রাণ আসে।
জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন—চার মাস ধরে জমে ওঠে বেচাকেনা। বিশেষ করে আষাঢ় মাসে খালে পানি বাড়লে হাটে দেখা মেলে চাম্বল, মেহগনি, রেইনট্রি কাঠের তৈরি বাহারি নৌকার। প্রতিদিনের মতো বাজারে ভিড় করেন কারিগর, ব্যবসায়ী এবং কৌতূহলী দর্শনার্থীরা।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের মতো এখন আর বেচাকেনা নেই। এক ব্যবসায়ী জানালেন, “গত বছর যে নৌকা ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এবার তা ৩ হাজারেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। খাল-নদীতে পানি নেই, মানুষও নেই।”
একসময়কার জমজমাট হাট এখন হারাতে বসেছে ঐতিহ্যের রূপ। কয়েক বছর আগেও এই বাজারে নৌকার সারি দেখা যেত—বাজারজুড়ে কাঠের গন্ধ আর কারিগরদের কুড়ালের শব্দে মুখর থাকত এলাকা। কিন্তু এখন হাতে গোনা কিছু নৌকা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। খাল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে নেই আগের মতো ক্রেতার আনাগোনা। ব্যবসায়ীরা দিনের পর দিন তীর্থের কাকের মতো বসে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, মুরাদনগর উপজেলার অন্তত ১৭১টি খাল এখন দখল বা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নৌকার ব্যবহার আর তেমন নেই। আগে মানুষ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যেত নৌকায়, কৃষকরা খালের পানি দিয়ে জমি চাষ করত, আর জেলেরা মাছ ধরত। কিন্তু খাল সংকুচিত হওয়ায় সেই জীবনধারা এখন শুধুই স্মৃতি।
নৌকার হাটকে ঘিরে রামচন্দ্রপুর অঞ্চলে একসময় বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান হতো। আজ সেই কারিগর ও ব্যবসায়ীরা হতাশ, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে।
মুমু ২