ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

তুহিন আহমদ পায়েল

সৌন্দর্যের লীলাভূমি মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ১২:১৩, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

সৌন্দর্যের লীলাভূমি মালয়েশিয়া

এশিয়ার একটি ছিমছাম ও গোছানো দেশ মালয়েশিয়া। প্রতিবছর অসংখ্য ভ্রমণপিয়াসী মানুষ প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যম-িত এ দেশে ঘুরতে যায়। যে কোনে পর্যটকের পছন্দের তালিকার প্রথম দিকেই থাকে মালয়েশিয়ার নাম। এটি মূলত একটি মুসলিম প্রধান দেশ। পুরো দেশজুড়ে রয়েছে সবুজ-শ্যামল প্রাকৃতি, পাহাড়ী রাস্তা আর বন-জঙ্গল। তেরোটি রাজ্য এবং তিনটি ঐক্যবদ্ধ প্রদেশ নিয়ে গঠিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ- মালয়েশিয়া। দেশটির রাজধানী শহর কুয়ালালামপুর, পুত্রজায়া হলো ফেডারেল সরকারের রাজধানী। দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে দেশটি দু’ভাগে বিভক্ত- পেনিনসুলার মালয়েশিয়া এবং পূর্ব মালয়েশিয়া। দেশটির স্থল সীমান্তে রয়েছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনাই। সমুদ্র সীমান্ত রয়েছে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্সের সঙ্গে। দেশটির প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই চোখে পড়ে পাহাড়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই মূলত বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের সেখানে বেড়াতে যেতে আকৃষ্ট করে। দুই পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ, ছবিতে দেখা এমন দৃশ্যের মতোই মালয়েশিয়া। দেশটির সব আধুনিকায়নের বেশির ভাগই পাহাড় কেটে করা হয়েছে। বিশেষ করে সড়কপথ ও রেলপথ। এখানে এক একটি এলাকার সঙ্গে আরেকটি এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভূ-তাত্ত্বিক মিল একবারেই কম। তাই কোন জায়গার চেয়ে কোনটা কম সুন্দর নয়। যে যার যার মতো ইউনিক! মালয়েশিয়ার সরকার তাই ট্যুরিজমকে সারা বিশ্বের ট্যুরিস্টদের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতিনিয়ত নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী হচ্ছে এই ট্যুরিজমের ওপর নির্ভর করেই। আর তাই সারা বিশ্বের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অন্যতম ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হিসাবে মালয়েশিয়ার গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়ছে। আমার মতে এশিয়ার অন্যতম কসমোপলিটান দেশ। তাদের কমিউনিটি সাধারণত নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মূল্যবোধ, সুন্দর অর্থনৈতিক সম্পর্ক আর শক্তিশালী রাজনৈতিক কাঠামো। ডং মং টু কুয়ালালামপুর : মালিন্দ্র এয়ারওয়েজ থাইল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করি মালয়েশিয়া। খেচর যাত্রায় গৌধূলি বেলায় কুয়ালালামপুর। পামগাছের সারি, রাস্তাঘাট, ইমারত সব সাজানো-গোছানো, ছিমছাম। পড়ন্ত বেলায় মিঠে রোদে শহর যেন দুপুরের ঝিলিক ছাড়াচ্ছিল। নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না মালয়েশিয়া কতটা গোছানো আর সুন্দর একটা দেশ! সমুদ্রের তটরেখা বরাবর বন্দরের জেটিগুলোও সুবিন্যস্ত। বিমান যতই ধেয়ে মাটিকে ছুঁতে যাচ্ছিল, ততই শহরটা দ্রুত ছড়াচ্ছিল। মালয়েশিয়া স্থানীয় সময় ১.২০টা দিকে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করি। বিমান কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের মাটি ছুঁতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কারণ উর্ধগগনে বিমান ওঠার পর মাটি স্পর্শ করা এক অনিশ্চিত বিষয়। কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কখওঅ-১ নামে পরিচিত। কখওঅ-২ নামে আলাদা একটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে। বিকেল ৫টা নাগাদ বুকিত বিনতাং-এ পৌঁছালাম। হোটেল আগে থেকেই বুকিং দেয়া ছিল, তাই রিসিপশনে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে রুমে এলাম। বেশ ভাল লাগছিল। কিন্তু সারা দিনের ক্লান্তি পেয়ে বসছিল। দ্রুত গোসল সেরে বের হই খাদ্যান্বেষণে। বাংলাদেশী খাবার খুঁজে না পেয়ে ম্যাকডোনাল্ডে যেতে হয়। পরে চিন্তা করলাম রাতে বাংলা খাবারের রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করতে হবে। এরপর বুকিত বিনতাংয়ের চারপাশটা একটু হেঁটে ঘুরে চলে আসি হোটেলে। বিছানায় গা লাগাতেই তলিয়ে গেলাম ঘুমের দেশে! রাতে উঠে খাবারের জন্য আবার বের হই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটি পাকিস্তানী রেস্টুরেন্টের সন্ধান মেলে। বেশ মনোলোভা খাবার। আমাদের দেশের অনেকেই সেখানে কাজ করে। রাতের পেটপূজা সেরে ফিরে আসি হোটেলে। হোটেল এসে ঘুম হবে না জানি, কারণ সন্ধ্যার দিকে বেশ ভালই ঘুম হয়েছে। তাই ইন্টারনেটে খুঁজতে বসি মালয়েশিয়ার দর্শনীয় স্থানসমূহ। হোটেলে এসেই কুয়ালালামপুর সিটির একটা ম্যাপ চেয়ে নিয়েছিলাম, তা রাতে ভাল করে দেখি। বাংলাদেশ থেকেই জেনে গিয়েছি সেখানে নাকি এজঅই নামে একটি গাড়ির এ্যাপস সার্ভিস আছে। আমি মোবাইলে তা ইন্সট্রল করে নেই, যাতে সকালে উঠেই কাজে লাগে। টুইন টাওয়ার : পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে বের হলাম টুইন টাওয়ার নামে খ্যাত প্যাট্রোনাস টাওয়ার দেখার জন্য। হোটেলে বসেই এজঅই এ্যাপসের মাধ্যমে গাড়ি বুকিং করি, ভাড়া ৫ রিঙ্গিত। অনেক পর্যটক দেখি সেখানে। সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত। হকারও আছে সেখানে। মোবাইলের লেন্স নিয়ে আসে বিক্রি করতে, যা মোবাইলে লাগিয়ে পুরো টুইন টাওয়ারের ছবি তোলা যায়। দাম মানভেদে ২০, ৩০ ও ৪৫ রিঙ্গিত। যার পছন্দ সে কিনে নিয়ে ছবি তুলছে। আমি প্রথমে একা একাই টুইন টাওয়ারের ছবি তোলি। অনেক বিদেশী পর্যটক ছবি তুলেছে। আমি তাদের দিয়ে আমার ছবি ক্যামেরাবন্দী করি। তার মধ্যে অনেক বাংলাদেশের মানুষ দেখতে পাই। তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ অনেক আলাপ আলোচনা হয়। কথা বলার একপর্যায়ে তারা আমাকে বলল রাতে আসতে, রাতে প্যাট্রোনাস টাওয়ার নাকি অন্যরূপ ধারণ করে। আমিও চিন্তা করালাম, রাতে আবার আসব। এই ফাঁকে কুয়ালালামপুরের চারপাশটা বরং একটু ঘুরে দেখে নেই। কুয়ালালামপুর শহরের মধ্যবর্তী স্থানে সবচেয়ে ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত এ টাওয়ার। বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান এটি। কৃত্রিম লেক, ফোয়ারা, গাছ-গাছালি মিলিয়ে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য সংবলিত বেড়ানোর জায়গাও বানানো হয়েছে, যা বিশ্ব পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার শহরের গুরুত্বপূর্ণ জালান আমপাং, পি পামলী, বিনজাই, কিয়া পেং এবং পিনাংয়ের রাস্তাগুলো দ্বারা সংযুক্ত। সুরিয়া কেএলসিসি, এভিনিউসহ অসংখ্য বিখ্যাত শপিং কমপ্লেক্স রয়েছে এ টাওয়ারে। এর পাশেই রয়েছে জি টাওয়ার, মানদারিন ওরিয়েন্টাল, গ্রান্ড হাইট কুয়ালালামপুর এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল কুয়ালালামপুর হোটেলের মতো বড় বড় আবাসিক হোটেল। মালয়েশিয়ার সর্বোচ্চ দুটি ভবনকে একত্রে সংযুক্ত করা হয়েছে। কেএলসিসির অফিসিয়াল নামÑ পেট্টোনাস টুইন টাওয়ার কেএলসিসি। এর সঙ্গে রয়েছে বিশাল পাবলিক পার্ক ও মসজিদ, যা সবার জন্য উন্মুক্ত। ৮৮ তলা বিশিষ্ট ভবন দুটিকে সংযুক্ত করেছে একটি ব্রিজ। দুই টাওয়ারের মাঝের ব্রিজকে বলা হয় স্কাই ব্রিজ। ৬০ রিঙ্গিত দিয়ে যে কেউ উঠতে পারেন স্কাই ব্রিজে। সেখানে উঠতে পারাটা জীবনের এক বিশাল অভিজ্ঞতা বলা যায়। আর তাই কেউই কুয়ালালামপুরে এসে স্কাই ব্রিজ না ঘুরে যান না। এই জায়গা থেকে পুরো শহরটাই দেখা যায়। সংযুক্ত পার্কটিও বিশাল। সামনে রয়েছে বিশাল কৃত্রিম লেক, নয়নাভিরাম ঝর্ণা, ঘোরাফেরার জন্য সুন্দর লন, যেন শিল্পীর সুনিপুণ তুলির আঁচড়ে হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয়! দিনের বেলায় এক দৃশ্য, রাতের দৃশ্য আবার ভিন্ন। দেশটির মহান স্বাধীনতা দিবসে আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কেএলসিসি বাইরের দিক থেকে দেখতে স্টিলের কাঠামোয় তৈরি দুটি খাড়া ভবন মনে হয়। রোদের ঝলক এসে তার বিচ্ছুরণ ঘটায় সবার চোখে। রাস্তার পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে হেঁটে শহরটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে শুরু করি। প্রচ- রোদ, তাই সঙ্গে এক বোতল পানি ও ওরেঞ্জ জুস রাখি তৃষ্ণা লাগলে যাতে খেতে পারি। সে সময় জাতীয় নির্বাচন ছিল, তাই প্রতিটি রাস্তায় চোখে পড়ে নির্বাচনী প্রচারণার ফ্ল্যাগ। কিন্তু তা এলোমেলোভাবে নয়, সুন্দর ও পরিপাটিভাবে নির্দিষ্ট স্থানে লাগানো। অনেকটা হাঁটাহাঁটি করতে গিয়ে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ি। বিকেল হয়ে গেছে, তাই চিন্তা করলাম আজ আর নয়, ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাব হোটেলে। ট্যাক্সি ডেকে বুকিত বিন্তাং যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করায় ড্রাইভার বলে একটু পায়ে হাঁটলেই চলে যেতে পারবেন সেখানে। আমাকে সে রাস্তাও দেখিয়ে দিল। তার মানে আজ অনেকটা পথই হাঁটা হয়েছে! মোবাইলের গুগল ম্যাপ অন করে লোকেশনের মাধ্যমে চলে আসি হোটেলে। মালয়েশিয়ায় বেড়াতে এলে হাতে কমপক্ষে ৪-৫ দিন সময় নিয়ে আসতে হবে। নইলে গুরুত্বপূর্ণ ও সুন্দর অনেক কিছুই দেখতে ব্যর্থ হবেন। সেন্ট্রাল মাকের্ট : কেন্দ্রীয় মার্কেট কুয়ালালামপুরের একটি দর্শনীয় স্থানও। যেখানে তারা শুধু শপিং করার জন্য না। মালয়েশিয়ার ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যকে এক নজরে আত্মপ্রকাশ করে সবার কাছে। মার্কেটের আর্ট-ডেকো কাঠামোর আওতায় ৩০০টির বেশি দোকান রয়েছে। সেখানে স্থানীয় হস্তশিল্প, বস্ত্র, স্মৃতিস্তম্ভ, সংগ্রহস্থল এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে। কেন্দ্রীয় মার্কেটে কুয়ালালামপুরের শিল্পের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এখানে শিল্প গ্যালারিকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেন্টাল মার্কেটের মূল ভবনটির পেছনে সেন্ট্রাল মার্কেট এ্যানেক্সে একটি আর্ট মিউজিয়াম, আর্ট হাউস গ্যালারি এবং সেন্ট্রাল মার্কেট আর্ট লেন রয়েছে, যা ১০টি অনন্য স্টুডিওর অন্তর্ভুক্ত। স্থানীয় শিল্পীরা এখানে শিল্পকর্মেও কাজ করছেন। সমসায়িক শিল্প থেকে শুরু করে ব্যঙ্গচিত্র, স্থাপত্যশিল্প, দেশীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য সবই তাদের রং তুলিতে ফুটে উঠছে। শিল্পপ্রেমীরা সেখান থেকে অনেক আর্ট ক্রয় করছেন। মালয়েশিয়ার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মূল্যবোধের প্রতিফলন করার জন্য একটি চমৎকার স্থান। স্থানীয় এবং বিদেশী পর্যটক উভয়কেই আকর্ষণ করে এ মার্কেট। সবকিছু ঘুরে দেখে নেয়ার পাশাপাশি কিছু কেনাকাটাও করলাম। সেখান থেকে চলে আসি কোতারায়ায়, যেখানে বাংলাদেশীদের মিলনমেলা দেখা যায়। কোতারায়া : কোতারায়ায় রয়েছে মালয়েশিয়ার কেনাকাটার বিখ্যাত মার্কেট চায়না টাউন। এখানে বেশিরভাগ কাজ করেন বাংলাদেশী শ্রমিক। অনেকে সেলসম্যানে চাকরি করেন। আবার অনেক বাংলাদেশী ব্যবসাও করেন চায়না টাউনে। একজন পর্যটক যে কোন মূল্যে এখান থেকে স্বচ্ছন্দে বাজার করতে পারেন। মোটামুটি সস্তা বাজারের মধ্যে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ চায়না টাউন। কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রস্থলে এ মার্কেটে বাস বা ট্রেনে সহজেই যাওয়া যায়। চীনারাই এ মার্কেটের প্রধান হলেও এখন ভারতীয় ও বাংলাদেশীরাও জায়গা করে নিয়েছে। সেখানে রয়েছে আরও একটি মার্কেটÑ কোতারায়া সেন্টাল মার্কেট। এ মার্কেটেও বেশিরভাগ কর্মজীবী বাংলাদেশী শ্রমিক। মার্কেটে রয়েছে একটি কালচারার ড্যান্স গ্রাউন্ড। ছুটির দিনে এখানে মালয়েশিয়া, বাংলাদেশী, ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও সিঙ্গাপুরি ক্যালচারার ড্যান্স পারফর্মেন্স করা হয়। যা স্থানীয় ও বিদেশীরা উপভোগ করে থাকেন। সিটি গ্যালারি : মার্দেকা স্কয়ারের রাস্তা ধরে কিছু দূর সামনে এগুলেই এ গ্যালারি। অনেক বিদেশী পর্যটকের ভিড় সেখানে। গ্যালারিতে ঢোকার জন্য সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও লাইনে দাঁড়িয়ে মালয়েশিয়ান ১০ রিঙ্গিত দিয়ে টিকিট কাটলাম। এক রিঙ্গিত মানে বাংলাদেশী টাকায় বিশ টাকা। গ্যালারিতে মনোমুগ্ধকর লেজার শোয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার ইতিহাস, বিখ্যাত মানুষদের অবদান, বিখ্যাত স্থাপনা, ট্যুরিস্ট স্পটÑ এসবের ব্যাপারে ট্যুরিস্টদের আইডিয়া দেয়া হয়। এই লেজার শোয়ের দিকে মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে বিশ মিনিট পার হয়ে গেছে, টেরই পাইনি। লেজার শো দেখে গ্যালারির ভেতরের দোকান থেকে কিছু স্যুভিনিয়র কিনলাম। দোকানের সব প্রোডাক্টই একবারে জেনুইন এবং ফিক্সড প্রাইস, তাই দরদাম করার কোন সুযোগই নেই। সিটি গ্যালারির সামনের রাস্তায় ‘আই লাভ কেএল’ লেখা একটা স্থাপনার সামনে ছবি তোলার জন্য মানুষের ভিড় লেগেই ছিল, যা গ্যালারিতে ঢোকার সময়ই লক্ষ্য করেছিলাম। তাই গ্যালারি থেকে বের হয়ে আমিও ছবি তোলার জন্য দৌড় দিলাম, যদিও ছবি তোলার সুযোগের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে বেশ অনেকটা সময় চলে গেল। কিন্তু ছবি কে তুলে দেবে, তাই অনেক সময় দাঁড়াতে হলো। মার্দেকা স্কয়ার : হাজারো পর্যটকের ভিড় সেখানে। মালয়েশিয়া ভ্রমণে এসেছেন আর এ জায়গা দেখে যাওয়া হবে না, তা হতেই পারে না! তাই সবসময়ই এলাকাটি পর্যটক-মুখর থাকে। কুয়ালালামপুরের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ দর্শনের ক্ষেত্রে প্রথমেই প্রাধান্য পায় এই মার্দেকা স্কয়ার। যা দেখে অভিভূত হন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। মার্দেকা অর্থ স্বাধীনতা। ১০০ মিটার উঁচু পতাকা উত্তোলনের স্তম্ভ পৃথিবীর বৃহত্তম বলে স্বীকৃত। এটিকে মালয়েশিয়ার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেও ধরা হয়। এটি পুলিশের প্যারেড এবং ক্রিকেট ম্যাচের জন্যও ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এটি একটি দর্শনীয় ল্যান্ডস্কেপ এরিয়া- যা বাগান, ঝর্ণা ইত্যাদিতে সজ্জিত করা হয়েছে। স্থানটি আজও যে কোন জাতীয় উৎসব, যেমন- জাতীয় দিবস বা শোভা যাত্রা শুরু করার স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি জালান রাকায় অবস্থিত। অনেক পর্যটকের ভিড়। একটির পর একটি বাস পর্যটক নিয়ে আসছে। মার্দেকা স্কয়ারের সামনের খালি মাঠে নেমে সবাই ছবি তুলছে। কেউ বা আসছে ফটোশূট করতে। বিকেল বেলার অনেক সুন্দর দৃশ্য এ জায়গায়। দেখতে খুবই ভাল লাগছিল।
×