ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

আদর্শ শিক্ষক হতে চান মামুন

চাকরি বাজার ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ৩১ মে ২০২৪

আদর্শ শিক্ষক হতে চান মামুন

চান মামুন

‘বরফ ঢাকা শীতকাল পেরিয়ে যেমন বসন্তের আগমন ঘটে কিংবা মরুভূমির বুকে এক পশলা বৃষ্টির মতো, পথহারা নাবিকের গন্তব্য খুঁজে পাওয়ার মতো, মরুর বুকে হারিয়ে যাওয়া ঘোড়ার মতো অনুভূতি লাগছিল সেদিন, ক্যাডার পাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর’- বলছিলেন ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে (উদ্ভিদ বিজ্ঞান) সুপারিশপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন। ‘প্রথমে একমাত্র ছোট বোন মীম ফোন দিয়ে জানায়। রেজাল্ট শিটে নিজের রোল দেখে চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

মেসের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আবার রোল মিলিয়ে নিশ্চিত হলাম। মহান রবকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলাম। প্রথমে আব্বুকে ফোন দিলাম। আম্মু ধরলেন, শুনে শুধু কাঁদলেন। অনেক ইচ্ছা ছিল সবাইকে বলার, আমি ভালো কিছু করেছি। আল্লাহ সুযোগ করে দিয়েছেন। অনাগত শিশুর মতো পরিবারের সবাইকে খুশি করতে পেরেছি।’
রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের চৌমুখ গ্রামে বাড়ি আব্দুল্লাহ আল মামুনের। বাবা আবুল কালাম আজাদ, মা শাহীনা আক্তার। তিনি আলহাজ আমেনা খাতুন বিদ্যাপীঠ থেকে এসএসসি এবং পাংশা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ভর্তি হন। সেখান থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেন।
কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা মামুনকে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে প্রচুর টিউশনি করতে হয়েছে। অনেক সরকারি চাকরির ভাইবা দিয়েও যখন কাক্সিক্ষত ফলাফল পাচ্ছিলেন না, তখন অনেকেই অনেক কটুকথা শুনিয়েছেন। মুখ বুজে সহ্য করেছি। মা শুধু কান্না করতেন। দোয়া করতেন আর বলতেন, আল্লাহ তোমাকে হতাশ করবে না।

আমি বারবার পড়ে গিয়েছি আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। মচকে গিয়েছি কিন্তু ভাঙিনি। মায়ের অশ্রুসিক্ত মুখ আর বাবার ক্লান্ত ঘর্মাক্ত শরীর আমাকে কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। একাডেমিক রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পর থেকেই চাকরির কথা চিন্তা করতে থাকি। ৩৫-৩৬তম বিসিএসের রেজাল্টে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪-৫ বিষয়ে প্রথম হয়েছে। তখন মনে হয়েছে আমার দ্বারাও সম্ভব। যদিও বাবার ইচ্ছা ছিল আমার ছেলের প্রশাসন ক্যাডার হবে।
অনার্স শেষ করে বিসিএসের জন্য পড়া শুরু করি। প্রথম দুটি বিসিএসে অকৃতকার্য হই এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। তবে কয়েকটি ভাইবা কিছুটা আশান্বিত করেছিল, যদিও চাকরি হয়নি। প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, তখনই আসে মহামারী করোনা। ঢাকা থেকে চলে যাওয়ার পর প্রস্তুতিতে ভাটা পড়ল। একদিকে ভাইরাস অন্যদিকে বয়সের টান। হতাশা চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে। এর মধ্যে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ হলো। দিন-রাত এক করে পড়লাম।

এমনও হয়েছে জ্বর এসেছে, ওষুধ খেয়ে লাইব্রেরিতে গেছি, ওষুধ খেয়ে পড়তে বসেছি। আসলে আমার অন্য কোনো উপায় ছিল না। ভালো পরীক্ষা হলো আর টিকেও গেলাম। লিখিত পরীক্ষাটাও ভালোমতো দিলাম। রিটেনের পর একটা ঝড় এসে জীবনটাকে পুরো এলোমেলো করে দিয়েছিল। ধন্যবাদ বন্ধু জসীমকে খারাপ সময়ে পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য। ভাইভায় ডাক পেলাম। যেহেতু আগে বিপিএসসি যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল। খুব বেশি নার্ভাস ছিলাম না। ভাইভা ভালো হলো। সবশেষে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম।
মায়ের অশ্রুসিক্ত নয়ন এবং বাবার ঘর্মাক্ত দেহই আমার অনুপ্রেরণা। আমি এখনো কিছু করতে পারছি না। তাদের কোনো কাজে আসতে পারছি না। যা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। সেখান থেকে শক্তি লাভ করেছি। কিছু করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ দিয়েছেন। ৩৫তম বিসিএসে ডিপার্টমেন্টের অনেকে ক্যাডার হয়েছেন। যা আমাকে আশান্বিত করেছে। তাছাড়া হাল ছেড়ে না দেওয়ার মানসিকতাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে আর মা-বাবার দোয়া।
‘আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। আল্লাহ তা’আলা জাতি গঠনের যে সুযোগ দিয়েছেন, তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে চাই। পাশাপাশি সবাইকে ভালো রাখতে চাই। নিজের ফ্যামিলি, সমাজ ও দেশকে কিছু দিতে চাই।’
নতুনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যাদের স্বপ্ন ভালো কিছু করা, তাদের আমি বলব নিজের সাবজেক্টটা ভালোভাবে পড়তে। কারণ এটা সব জায়গায় লাগবে। অনার্স ৩য় বর্ষ পরীক্ষার পর থেকেই চাকরির জন্য ভালোমতো পড়া শুরু করা উচিত। যাদের অঙ্ক ও ইংরেজি সমস্যা আছে, অনার্স ১ম বর্ষ থেকেই এ দুটি সাবজেক্ট একটু একটু করে পড়া উচিত।’ 

চাকরি বাজার ডেস্ক

×