ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

কেমন হবে ভাইভার পোশাক

মেহেজাবিন রাত্রি

প্রকাশিত: ০১:৩০, ১৭ মে ২০২৪

কেমন হবে ভাইভার পোশাক

কেমন হবে ভাইভার পোশাক

শিক্ষাজীবন শেষ হতে না হতেই যে বিষয়টা সবার প্রথম মাথায় আসে, তা হলো কর্মসংস্থান। এতদিনের পড়াশোনা, হাজারো নিদ্রাহীন রাতের সফলতা আসে একটা ভালো চাকরি অথবা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার মধ্য দিয়ে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন এটি। তবে এই স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ কথা নয়।

নিজ স্বপ্ন পূরণে প্রস্তুতি নিতে হবে শিক্ষাজীবন চলাকালেই। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি গণিত, ইংরেজি, আন্তর্জাতিক ঘটনাবলিতে থাকতে হবে বিশেষ দক্ষতা। জানতে হবে নিজ দেশ সম্পর্কে, দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সকল বিষয়। মানসিক দক্ষতাও থাকতে হবে যথেষ্ট। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় দ্রুত সফলতা অর্জনকারীদের অধিকাংশই প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি।

এতে করে স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার পর দ্রুতই চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় করাতে চাইলেও প্রয়োগ করা যেতে পারে একই স্ট্র্যাটেজি। নিজ ভাষায় ও ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা আপনাকে এগিতে নিয়ে যাবে কয়েক ধাপ। প্রস্তুতি নিতে পারেন বন্ধুরা মিলে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার বেশ কিছু গ্রুপ বা পেইজও বেশ সহায়ক।

তবে আজকে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ না করে এগোচ্ছি একটু ভিন্ন দিকে। সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক- ছাত্রজীবন, শিক্ষকতা পেশা অথবা করপোরেট যে কোনো চাকরির জন্য ভাইভার মুখোমুখি হতেই হবে। তাই ভাইভার পোশাক ও সাজগোজ নিয়ে অনেকেই সংশয়ে ভোগেন। তাদের জন্যই আজকের এই লেখা-
পোশাক: পোশাকের বেলায় মাথায় রাখতে হবে ‘পোশাক আমি পরছি, পোশাক আমায় নয়।’ এমন কোনো পোশাকই বাছাই করা যাবে না যা আমি ক্যারি করতে পারব না। পোশাক হতে হবে আরামদায়ক। কোনোক্রমেই আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না এমন কিছু প্রকাশ করা যাবে না। মনে রাখতে হবে একটু পরিপাটি পোশাক আপনাকে কনফিডেন্ট করে তুলবে বহুগুণ।
পুরুষ: ছেলেদের ফর্মাল লুকের জন্য কালো প্যান্টের সঙ্গে সাদা বা অফ হোয়াইট রঙের ইন করা শার্ট। আর শীতকাল হলে কালো স্যুটই যথেষ্ট। সঙ্গে মানানসই সু, ঘড়ি আর হেয়ার কাটের দিকে চাই বিশেষ নজর। চাইলে মানানসই টাইও হতে পারে আপনার সঙ্গী। পোশাকটা যেন আপনার মাপেরই হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। টি-শার্ট, ট্রাউজার এগুলো এভয়েড করতে হবে ইন্টারভিউর বেলায়। দাড়ির ছাটও যেন হয় পরিচ্ছন্ন। 
নারী: মেয়েদের বেলায় শাড়ি, থ্রি পিস অথবা স্যুটও হতে পারে ফর্মাল। তবে বাঙালি মেয়েরা শাড়ি আর থ্রি পিসকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। থ্রি পিসের বেলায় সুতি কাপড়ই মানানসই। হাল্কা যে কোনো রঙের কামিজে সুতার কাজ বা প্রিন্ট। সঙ্গে পরিপাটি ওড়নার ভাঁজই আপনাকে করে তুলতে পারে অনন্য। শাড়ির বেলায় হাল্কা নীল, সাদা, অফ হোয়াইট কিংবা ধূসর রংকে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে।

সেক্ষেত্রে শাড়ির আঁচল ভাঁজ করে পরতে হবে। সঙ্গে থ্রি কোয়ার্টার অথবা ফুল হাতার মানানসই ব্লাউজ। শাড়ি হওয়া চাই সুতি, খাদি, টাঙ্গাইল অথবা জামদানি। খুব জাঁকজমকপূর্ণ শাড়ি বাদ দিয়ে নজর দিতে হবে চিকন বা মাঝারি পাড়ের শাড়িতে। সঙ্গে ঘড়ি, খোপা আর হাল্কা রঙের যে কোনো লিপস্টিক। আপনার ব্যক্তিত্বকে আলাদা করে তুলবে ইন্টারভিউ/ভাইভা বোর্ডের সবার থেকে। চাইলে ছোট একটা কানের টপও পরতে পারেন।

পরিহার করতে হবে বড় সাইজের কানের দুল বা মালা। খেয়াল রাখতে হবে জমকালো সাজ বা পোশাক কখনোই ইন্টারভিউয়ের জন্য নয়। মেয়েদের স্যুটের বেলায়ও দিতে হবে বিশেষ নজর। কালো কিংবা ধূসর রঙের স্যুটকেই আমি এক্ষেত্রে অধিক প্রাধান্য দিচ্ছি। এয়ারলাইন্স অথবা প্রাইভেট সেক্টরে জবের জন্য চাইলে আপনিও স্যুট পরতে পারেন নিশ্চিন্তে।
অন্যান্য: চাকরির ক্ষেত্রে আপনার জমা দেওয়া পাসপোর্ট সাইজ ছবির সঙ্গে আপনার যেন মিল থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাই এ কথা মাথায় রেখেই ছবি তুলতে হবে। যেন পরবর্তীতে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়। অতিরঞ্জিত সাজগোজ পরিহার করতে হবে। কেউ চশমা পরিধান করলেও চশমার ফ্রেম যেন হয় চেহারা আর ফর্মাল লুকের সঙ্গে মানানসই।
সর্বোপরি ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্যই পোশাকের পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পরিচ্ছন্নতা আপনার লুকের প্রধান আকর্ষণ। পরিষ্কার আয়রন করা পোশাক আপনাকে করে তুলবে আকর্ষণীয়। পোশাক ক্যারি করতে হবে কনফিডেন্টলি এবং প্রশ্নের উত্তরও করতে হবে ভদ্রতা ও কনফিডেন্সের সঙ্গে। উত্তর জানা না থাকলেও জানাতে হবে বিনয়ের সঙ্গে।

খুব ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও আপনার নেগেটিভ আচরণ ও লো কনফিডেন্টের কারণে আপনি অন্য সবার চেয়ে পিছিয়ে পড়তে পারেন। খুব ভয় অথবা আতঙ্কে ভুগলেও তা চোখে মুখে ফুটিয়ে তোলা যাবে না। মুখে মুচকি হাসি ও বিনয় ধরে রাখতে হবে। তাই প্রচ- কঠিন ও প্রতিযোগিতামূলক এই চাকরির বাজারে নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখন থেকেই। আমি তো এভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি, আপনি শুরু করেছেন তো? 

×