
সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও সম্মানজনক পেশা
হাজারো পেশার মধ্যে সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও সম্মানজনক পেশা। তবে এর সঙ্গে আর অন্য দশটি পেশার পার্থক্য অনেক। আজকের প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত সাংবাদিকদের অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করে এসেছেন। ভালো সাংবাদিক হওয়ার জন্য সাংবাদিকতাই পড়তে হবে এমনটা জরুরি নয়। তবে বিষয়টি পড়া থাকলে ভালো। সাংবাদিকদের ‘সব কাজের কাজী’ হতে হয়। অর্থাৎ অনেক বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকা একজন সাংবাদিকের জন্য জরুরি।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রসমূহ
প্রিন্ট মিডিয়া (পত্রিকা, ম্যাগাজিন, সাময়িকী ইত্যাদি), ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া (রেডিও, টেলিভিশন), অনলাইন মিডিয়া।
সাংবাদিক হতে হলে: যেসব গুণ থাকা দরকারÑ ১. সিদ্ধান্তগ্রহণ ২. সততা ৩. ব্যক্তিত্ব ৪. ব্যবহার ৫. সাহসিকতা ৬. বস্তুনিষ্ঠতা
৭. অধ্যবসায় ৮. নিয়মানুবর্তিতা ও যোগাযোগ ৯. দায়বদ্ধতা ১০. বিচক্ষণতা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ পেশায় নিয়োজিত সিংহভাগ জনশক্তিই প্রশিক্ষণহীন। সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করে এ পেশায় এসেছেন এমন লোকের সংখ্যা নিতান্ত নগণ্য। অথচ একটি সম্ভাবনাময় ও চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা আজ দেশে-বিদেশে সমাদৃত। সাংবাদিকতায় অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পেশায় প্রবেশ করতে পারলে একটি উজ্জ্বল ক্যরিয়ার গড়া সম্ভব।
সাংবাদিক হতে শিক্ষাগত যোগ্যতা: জাতীয় পত্রিকা/অনলাইন/ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কাজ করতে হলে তাকে কমপক্ষে অনার্স অথবা সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা মফস্বলের ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। সাংবাদিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও সাংবাদিকতার ওপর যে কোনো কোর্স করলে সহজেই সাংবাদিকতা পেশায় হাতেখড়ি হতে পারে। একটি সফল শর্ট কোর্সের পর পিজিটি ও মাস্টার্স করতে পারলে সাংবাদিক হিসেবে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়ানো সম্ভব।
কোথায় করবেন কোর্স: যাদের পক্ষে এখন আর সাংবাদিকতায় স্নাতক করা সম্ভব নয়, তারাও করে নিতে পারেন ৬ মাস, এক বছর বা ২ বছর মেয়াদী স্নাতকোত্তর বা ডিপ্লোমা অথবা সার্টিফিকেট কোর্স। দেশের সরকারি বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কোর্স করার সুযোগ রয়েছে।
ভর্তির যোগ্যতা: স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হতে যে কোনো বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস হতে হবে। আর স্নাতকোত্তর বা ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে স্নাতক পাস হতে হবে।
সম্মানী কেমন: এখানে প্রথমদিকে আয়ের পরিমাণটা কম। তবে অভিজ্ঞতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আয় রোজগার। দেশে আপনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সম্মানী ১০-৫০ হাজার টাকা হয়ে থাকে।
তবে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে এ অঙ্ক বাড়তে পারে। আর যদি সাংবাদিকতার মাধ্যমে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার সাংবাদিক হওয়া যায় তা হলে সম্মানী এর দ্বিগুণও হতে পারে। এ এক ভারি মজার পেশা। পেশার থেকেও নেশা বলাই শ্রেয়। একজন সাংবাদিকের সমাজে ভূমিকা ঠিক ততটাই যতটা একজন শিক্ষকের ভূমিকা তার ছাত্রের জীবনে। কারণ তাদের মাধ্যমেই সকালে ঘুম থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া অবধি মানুষ জানতে পারে দেশ-কাল-সমাজে কী ঘটে চলেছে।
গ্যাসের দাম কত বাড়ল, আবহাওয়া কেমন থাকবে, দেশের অর্থনীতির হালচাল কী, রাজ্য-রাজনীতির খবরাখবর, এসবই আমজনতার কাছে পৌঁছে দেন একজন সাংবাদিক। তাই এই পেশার দায়িত্ব, ঝুঁকি যেমন অনেক, তেমনই সম্মানটাও রয়েছে বেজায়। কিন্তু ছোট থেকে অনেকেই সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও কী নিয়ে পড়লে সহজেই হতে পারে লক্ষ্য পূরণ, তা বুঝতে গিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়েন।
মনে রাখা ভালো, ডাক্তার হতে গেলে যেমন ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হয় তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা কিন্তু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নেই। অর্থাৎ সাংবাদিক হতে গেলে আপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক সাংবাদিকতা বা গণজ্ঞাপন বিষয়ে পড়তেই হবে অথবা নিদেন পক্ষে ডিগ্রি লাগবেই এমন মাথার দিব্যি কোথাও দেওয়া নেই। বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে সাংবাদিকতায় এসেছেন এমন অসংখ্য উদাহরণ আমাদের চারপাশে রয়েছে।
তবে কেউ যদি আগে থেকেই ঠিক করে রাখেন সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবেন তবে তার কাছে এই বিষয় নিয়ে চর্চা থাকাটা বা পড়াশোনা থাকাটা অবশ্যই বাড়তি সুবিধা প্রদান করবে। সহজ কথায় এই পেশা আসার ক্ষেত্রে অসংখ্য দিক খোলা রয়েছে।
তবে একজন সাংবাদিক হতে গেলে আপনার মধ্যেও কিছু কিছু বিশেষ গুণাবলি থাকা আবশ্যিক। যেমন সর্বাগ্রে বাংলা, ইংরেজি ভাষায় দখল থাকা আবশ্যিক। দ্বিতীয়ত দরকার অনুসন্ধানী মন। কোনো বিষয়কে সাধারণ মানুষ যেভাবে দেখবে, একজন সাংবাদিক সেভাবে দেখবে না। তার কাজই হলো, দৈনন্দিন হাজারো বিষয়ের মধ্যে থেকে খবরের গুণাবলি আছে এমন তথ্যকে খুঁজে বের করা।
আপনি যদি ইন্ট্রোভার্ট বা চুপচাপ প্রকৃতির মানুষ হন, তবে এই পেশা আপনার জন্য নয়। কেননা একজন সাংবাদিকের অন্যতম কাজ আমজনতার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা। এ ছাড়াও কোনো বিষয়কে উপস্থাপন যোগ্য করে তোলা, নিমেষের মধ্যে ঘটনা বিবৃতি দেওয়ার দক্ষতা, লেখালিখির অভ্যাস এই পেশার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
ডিজিটাল মাধ্যমেও সাংবাদিকদের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। এক্ষেত্রে আপনার ফটোশপ, কম্পিউটার টাইপিং, এডিটিং সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে তা আপনার কাজের সুযোগ আরও বাড়াবে। সবশেষে একজন সাংবাদিকের হওয়া প্রয়োজন আদর্শবান, সৃজনশীল এবং যুক্তিবাদী। কাজ করতে করতে এক্ষেত্রে হাত পোক্ত হয়। কেরিয়ারের শুরুতে বিভিন্ন রকম ইন্টার্নশিপ করা যেতে পারে। এটি একটি উদীয়মান ইন্ডাস্ট্রি, তাই লেগে থাকলে এখানে কাজের সুযোগ অনেক।
চাকরি বাজার ডেস্ক