ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বিচিত্র কর্মজীবন অর্জনের প্রচেষ্টা

প্রকাশিত: ০১:৪৭, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪; আপডেট: ১৬:২০, ২১ জানুয়ারি ২০২৪

বিচিত্র কর্মজীবন অর্জনের প্রচেষ্টা

কর্মজীবন অর্জনের প্রচেষ্টা

পড়াশোনা শেষ করার পর কর্মজীবন নিয়ে শুরুতে সবাই একটু নার্ভাস থাকেন। অনেকে কর্মজীবনের শুরুতে আরাম বা কমফোর্ট জোন খোঁজেন। সেটা তার ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে বাধা হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া ক্যারিয়ারে অনেকে নিজের পছন্দ বা ভালো লাগার বিষয়টা হারিয়ে ফেলেন। কর্মজীবনের নানান খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন আগামী ডটকম-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সরজিৎ বড়াল।

১. একজন চাকরিজীবীর কর্মজীবন মূলত ২৫-৩৫ বছর হয়ে থাকে। তাই এই পুরো সময়টাকে চারটা ভাগে ভাগ করে নেওয়া উচিত। যেমন: লার্নিং পিরিয়ড, ইনভেস্টমেন্ট পিরিয়ড, ট্যালেন্ট ব্র্যান্ডিং পিরিয়ড এবং রিটায়ারমেন্ট পিরিয়ড।
ক) কর্মজীবনের প্রথম ২-৩ বছর লার্নিং পিরিয়ড। এই সময়ে একজন কর্মজীবী যেসব স্কিল ডেভলপ করেন সেটাই বাকি কর্মজীবনের সবচেয়ে বড় পুঁজি। এই সময়ের পর স্কিল ডেভলপ করার সময় ও মানসিকতা তেমন থাকে না। তবে পরবর্তীতে এসব স্কিলের ভিত্তিতে অভিজ্ঞতা বাড়ে। এসব অভিজ্ঞতার কারণে তার মধ্যে লিডারশিপ স্কিল বাড়ে। আজ যিনি এমডি বা সিইও তিনি ফাংশনাল স্কিল শিখেছেন তার কর্মজীবনের প্রথম ২-৩ বছরেই।
খ) কর্মজীবনের ৩-১০ বছর পর্যন্ত ইনভেস্টমেন্ট পিরিয়ড। মাঠ পর্যায়ের এবং ইন্ডাস্ট্রির সব কাজ শেখা হয় এই সময়ে। এই সময়েই ঠিক করতে হবে তিনি ইন্ডাস্ট্রির কোনো বিষয়ে যেতে চান। যেমন যদি কেউ মার্কেটিংয়ে যেতে চান তাহলে তাকে মার্কেটিংয়ের সাব ফাংশনাল দিকগুলোতে কাজ করতে হবে।
গ) ১০ বছরের পর কর্মজীবীদের ট্যালেন্ট ব্র্যান্ডিং করা উচিত। যেমন তিনি যে যোগ্য সেটা প্রমাণ করার জন্য বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজের চেষ্টা করতে হবে। ফলে অন্যরা বুঝতে পারেন তিনি একজন ট্যালেন্টেড মানুষ।
ঘ) কর্মজীবনের শেষ স্টেজ রিটায়ারমেন্ট। কর্মজীবন শুরুর ২৫-৩০ বছর পর থেকে এই স্টেজ শুরু হয়। এই সময়ে সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য হলেও কোনো কোম্পানির প্রধান হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। কারণ এই স্টেজে শেখার কিছু থাকে না।
২. কর্মজীবনে কিছু কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়, যেখানে স্কিল ও প্যাশন মিলে যায়। সেখানে সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করতে হবে যাতে কোম্পানিতে সাড়া পড়ে যায়। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। কিন্তু এমন কিছু দায়িত্ব আসবে যেটাতে কর্মজীবীর আগ্রহ ও স্কিল পর্যাপ্ত নয়। এমন পরিস্থিতিতে অফিস যেটুকু চাইবে শুধু সেইটুকুই দিতে হবে। এর বেশি দেওয়া যাবে না, আবার চাহিদার ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।
৩. যারা কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন তাদের আগে ঠিক করতে হবে তিনি কোনটা করতে ভালোবাসেন আর কোনটা ভালো পারেন। সে অনুযায়ী মনকে স্থির করতে হবে। ভালোবাসার কাজ করলে মানসিক শান্তি আসে। কিন্তু ক্যারিয়ারে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয় না। আবার ভালো পারার কাজ করলে ক্যারিয়ার আগাবে কিন্তু মানসিক শান্তি মিলবে না। তাই ব্যালেন্স করতে হবে।
৪. কর্মজীবনের শুরুতে নতুনরা কে কার আগে প্রমোশন পাবে সেটা নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। কেউ আগে প্রামোশন পেলে অন্যরা আরও বেশি শো অব করতে চায় অথবা কাজ কমিয়ে দেয়। ফলে তিনি আরও পিছিয়ে যান এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তাই ছোট সময়ের ব্যবধানে সহকর্মীদের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। স্বাভাবিকভাবে কাজ করে গেলে ক্যারিয়ার গ্যাপ কোনো এক পর্যায়ে কমে যায়। তাই অন্যদের সঙ্গে তুলনা না করে নিজের আগের ও বর্তমানের দক্ষতার সঙ্গে তুলনা করতে হবে।
৫. চাকরি পাওয়ার সময় নতুন কর্মজীবী অনেকে কনভিনিয়েন্স, টাকা, আরামের কথা আগে চিন্তা করেন। অনেকে তার এলাকার বাইরে যাওয়ার ভয়ে ছোট পজিশনে চাকরি বেছে নেন। কর্মজীবনের শুরুতে যদি কেউ রেসপনসিবল পজিশন পান এবং সেখানে যদি কষ্টও হয় তাহলে সেই সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। অনেক কোম্পানি রেসপনসিবল পজিশন ও কষ্ট করার সুযোগই দেয় না। তাই কর্মজীবনের শুরুতে বেতন কিছুটা কম হলেও, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কম হলেও কষ্টটা মেনে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা উচিত।
৬. ক্যারিয়ারে কঠোর পরিশ্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু নেভিগেশন বা ট্রেন্ড বুঝতে পারা আরও গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রি কেন দিতে যাচ্ছে সেটা বুঝা। যেমন: যদি দেখা যায় ডেইরি ইন্ডাস্ট্রি গুঁড়া দুধের দিকে যাচ্ছে আর তখনই কেউ যদি তরল দুধ বাজারে আনতে চান, তাহলে তিনি ব্যর্থ হবেন। তাই ট্রেন্ড বুঝতে নিজের মধ্যে লিডারশিপ স্কিল গড়ে তুলতে হবে।

×