ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

বিবিসির চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে হামাস

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ৭ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৬, ৭ আগস্ট ২০২৫

বিবিসির চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে হামাস

ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীন রাষ্ট্র নেই, নেই রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার মতোই নিজেদের সংগঠিত ও পরিচালিত করে চলেছে ফিলিস্তিনিরা। মুক্তির সংগ্রামে নিরন্তর লেগে থাকা নেতৃত্বদানকারী সংগঠন হামাস—বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও চমকপ্রদভাবে এসব ব্যবস্থার জন্য অগ্রগামী।

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ দ্বিতীয় বছরে পা রাখলেও, হামাস এখনও তাদের ৩০০ জন সরকারি কর্মচারীর বেতন অব্যাহত রেখেছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও প্রতি ১০ সপ্তাহ পরপর যুদ্ধের আগের বেতনের প্রায় ২০ শতাংশ পাচ্ছেন এসব কর্মচারীরা। এর মোট পরিমাণ প্রায় ৭০ লাখ মার্কিন ডলার।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি কথা বলেছে তিনজন সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে। প্রত্যেকেই নিশ্চিত করেছেন—সম্প্রতি তারা প্রায় ৩০০ ডলার করে হাতে পেয়েছেন। গাজায় বর্তমানে কার্যকর কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা না থাকায় বেতন নেয়ার প্রক্রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল।

বেতন বিতরণের এক অভিনব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কর্মচারীদের ফোনে বা তাঁদের স্ত্রীর ফোনে একটি গোপন বার্তা পাঠানো হয়। বার্তায় নির্দিষ্ট স্থান ও নির্দিষ্ট সময়ে এক বন্ধুর সঙ্গে চা খেতে যাওয়ার আহ্বান থাকে। সেখানে পৌঁছালে এক অচেনা ব্যক্তি বা নারী এসে একটি সিল করা খাম ধরিয়ে দিয়ে মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে যান।

গাজা শহরের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারী জানান, প্রতিবার বেতন নিতে গেলে স্ত্রী-সন্তানকে বিদায় জানান, যদি আর ফিরে না আসেন এই আশঙ্কায়। একবার গাজা সিটির একটি ব্যস্ত বাজারে বেতন বিতরণের সময় ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছিল। তবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

“আলা” নামের একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, তিনি ১,০০০ শেকেল পেয়েছেন, যা তার একমাত্র সম্বল ও ভরসা। তিনি জানান, প্রায় দু’মাস পর তিনি এই অর্থ পেয়েছেন। সেই দুই মাস তিনি প্রায় না খেয়ে ছিলেন। গাজায় ত্রাণ বিতরণের বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি প্রায়ই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে গিয়ে অপেক্ষা করি কিছু ময়দা পাওয়ার আশায়। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই খালি হাতে ফিরি।”

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, হামাসের অর্থবিষয়ক প্রধান ইসমাইল বারহুমকে মার্চ মাসে হত্যা করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, বারহুম হামাসের সামরিক শাখায় অর্থ পাঠাতেন।

বিবিসির কাছে এক সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা জানান, ৭ অক্টোবর ২০২৩–এর হামলার আগেই হামাস প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার এবং কোটি কোটি শেকেল গোপন সুরঙ্গগুলোতে মজুত রেখেছিল। এই প্রক্রিয়াটি সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনোয়ার ও তার ভাই মোহাম্মদ। হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েল তাদের দুজনকেই হত্যা করেছে।

গাজায় খাদ্যসংকট চরমে পৌঁছেছে। এক কেজি ময়দার দাম ৮০ ডলার পর্যন্ত উঠেছে। তারপরও হামাস তাদের সদস্যদের জন্য খাবারের প্যাকেট ও অন্যান্য সাহায্য বিতরণ করছে।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের অর্থায়ন হয় প্রধানত ইরান থেকে। অন্যদিকে কাতার এবং মুসলিম ব্রাদারহুড থেকেও হামাস অর্থ পায়। মুসলিম ব্রাদারহুড জানিয়েছে, তাদের বাৎসরিক বাজেটের প্রায় ১০ শতাংশ তারা হামাসকে দিয়ে থাকে।

 

শেখ ফরিদ

×