
ছবি: সংগৃহীত
ইরানের ড্রোন সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে গভীর আগ্রহ ও বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ইরানের ড্রোন ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। ইরানের শাহেদ 136 ড্রোন যুদ্ধক্ষেত্রে সাশ্রয়ী ও কার্যকর হওয়ায় রাশিয়া নিজেই এই ড্রোন তৈরি শুরু করেছে। মস্কো থেকে প্রায় ৬০০ মাইল দূরে আলাবোগুগা নামক বিশাল একটি কারখানা গড়ে তুলেছে রুশ সরকার, যেখানে ইরানের ডিজাইনকৃত শাহেদ 136 ড্রোনের উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এখন প্রায় ৯০ শতাংশ শাহেদ সিরিজের ড্রোনই রাশিয়ায় তৈরি হচ্ছে।
উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায়, আলাবোগা কারখানাটির সম্প্রসারণ চলছে, নতুন ভবন ও থাকার জায়গা নির্মাণ করা হচ্ছে। পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাশিয়া এখন ইরানি সহযোগিতা ছাড়াই সাহেদ ড্রোন তৈরি করতে সক্ষম। তবে এর ফলে ইরান কিছুটা অসন্তুষ্ট, বিশেষ করে তখন যখন জুন মাসে ইসরাইল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালালে রাশিয়া খুব দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেয়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ ইউক্রেন আগ্রাসনের পর ইরান থেকে শাহেদ ড্রোন আমদানি শুরু করে রাশিয়া। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে ১.৭৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি হয়, যার আওতায় রাশিয়া নিজেই ড্রোন তৈরি করতে পারবে। চুক্তিতে বলা হয়েছিল ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ৬০০০ ড্রোন তৈরি হবে, কিন্তু এক বছর আগেই রাশিয়া এই পরিমাণ ড্রোন উৎপাদন করেছে। বর্তমানে আলাবোগা কারখানায় মাসে প্রায় ৫৫০০ ড্রোন তৈরি হচ্ছে।
পশ্চিমা গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ইরান প্রথমে রাশিয়ার ড্রোন তৈরির উদ্যোগকে সমর্থন করলেও, পরে রুশদের উন্নত সংস্করণ দেখে অবাক হয়। তেহরানের বিশ্লেষক দ রেইনি মন্তব্য করেছেন, “রাশিয়া সবসময় বেশি নিতে চায় আর কম দিতে চায়,” যা ইরানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এছাড়া জানা গেছে, রাশিয়া চুক্তি মোতাবেক ইরানকে যথাযথ অর্থ পরিশোধ করেনি। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছু অর্থ আটকে আছে বলে দাবি করেছে ইরানি কোম্পানি সাহারা থান্ডার।
সম্প্রতি একটি বড় সামরিক পরিবহন বিমান মস্কো থেকে তেহরানে গিয়েছিল এবং পরে আবার মস্কো ফিরে আসে, যার মধ্যে রাশিয়ার এ৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের কিছু অংশ ছিল বলে জানা গেছে। যদিও রাশিয়া ও ইরান এই বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
তেহরানের বিশ্লেষক দ রেইনি মনে করেন, “সম্পর্ক যাই হোক না কেন, ইরান রাশিয়ার কাছ থেকে উপকারী হবে, কারণ মস্কো থেকে সামরিক হার্ডওয়্যার, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাবে।” তাই ইরান-রাশিয়া সম্পর্কের মধ্য দিয়ে তেহরান সামরিক ও কৌশলগত উন্নতি লাভ করছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
শেখ ফরিদ