
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আবারও হামলা চালানো হতে পারে। সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির একটি সাক্ষাৎকারের পরপরই, যেখানে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বোমা হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এ ক্ষয়ক্ষতির পরও তেহরান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে সরে আসবে না।
আরাগচি ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “এটা (সমৃদ্ধকরণ) আপাতত থেমে আছে, কারণ ক্ষয়ক্ষতি সত্যিই গুরুতর। কিন্তু এটি আমাদের বিজ্ঞানীদের অর্জন এবং এখন এটি আমাদের জাতীয় গর্বের বিষয়। সুতরাং, আমরা এটি ছেড়ে দিতে পারি না।”
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে আরাগচির ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় লিখেন, “অবশ্যই তারা (স্থাপনাগুলো) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেমনটা আমি বলেছিলাম। এবং প্রয়োজনে আবারও আমরা সেটি করব!”
গত ২২ জুন, ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের ১২ দিনব্যাপী সংঘাতের সময়, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফোরদু, নাতানজ ও ইসফাহানে হামলা চালায়। সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পর, এক মার্কিন-মধ্যস্থ যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণ ধ্বংস” হয়ে গেছে।
তবে পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক মাস পিছিয়ে পড়েছে মাত্র। এই মূল্যায়নের কড়া প্রতিবাদ করে হোয়াইট হাউস জানায়, “এটি পুরোপুরি ভুল বিশ্লেষণ।”
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই সোমবার ইরান ঘোষণা করেছে, তারা আবারও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনা শুরু করবে। এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার, তুরস্কের ইস্তানবুলে। ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পর এটি হবে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এর আগে গত মে মাসেও একই ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আলোচনায় অংশ নেবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির (সম্মিলিতভাবে পরিচিত ‘ইথ্রি’ দেশ) প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান।ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘায়ি বলেন, “আলোচনার বিষয়বস্তু স্পষ্ট ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।”
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ‘যৌথ সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনা’ (জেসিপিওএ) চুক্তির আওতায় ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপে রাজি হয়। এর বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়।
তবে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইরান ধীরে ধীরে সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বাড়াতে থাকে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, ইরান বর্তমানে ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করছে, যা অস্ত্র তৈরির পর্যায়ের (৯০%) কাছাকাছি।
তেহরান সবসময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায়। বরং তারা বলে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা ফের নতুন মোড় নিতে পারে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পর। একইসঙ্গে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ইরানের আসন্ন আলোচনায় হয়তো খুলে যেতে পারে কূটনৈতিক সমঝোতার নতুন পথ। এখন বিশ্ব নজর রাখছে, তেহরান ও ওয়াশিংটনের এই দ্বন্দ্ব কোন দিকে মোড় নেয়।
সূত্র:https://tinyurl.com/mve38775
আফরোজা