
ছবি: সংগৃহীত
এটি সাধারণ কোনো হেলিকপ্টার নয়। দিনে বা রাতে যেকোনো প্রতিকূল আবহাওয়াতেও শত্রুর নিশানায় আঘাত হানতে পারে আকাশের জম—অ্যাপাচি হেলিকপ্টার। এর রাডার একই সাথে শনাক্ত করতে পারে ২৫৬ কোটি লক্ষ বস্তু। শুধু তাই নয়, বহন করতে পারে চেইন গান, হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং এরিয়াল রকেটসহ বিভিন্ন লিথাল অস্ত্র। বিধ্বংসী কার্যকারিতা ও সক্ষমতার কারণে পশ্চিমাবলয়ে বেশ সুপরিচিত এই যুদ্ধযান।
পাকিস্তানের উপর নজরদারি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও তিনটি অ্যাপাচি হেলিকপ্টার কিনছে মোদি সরকার। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনের বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, আগামী ২১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে হেলিকপ্টারগুলো হাতে পাবে ভারত এবং প্রাথমিকভাবে পাকিস্তান সীমান্তেই ভারত সেগুলো মোতায়েন করতে পারে বলেও জানিয়েছে পৃথক বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন।
অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টার বিভিন্ন যুদ্ধে তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। ১৯৮৯ সালের অপারেশন জাস্ট কজে পানামার রাত্রিকালীন সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে ১৯৯১ সালের পার্সিয়ান গাল্ফ ওয়ারে এটি সবচেয়ে কার্যকর প্রমাণিত হয়, যেখানে অ্যাপাচি ইরাকি সেনাবাহিনীর পাঁচ শতাধিক ট্যাংক ও শত শত সামরিক যান ধ্বংস করে। আফগানিস্তান ও ইরাকেও এটি ক্লোজ এয়ার সাপোর্ট মিশনে সফল ছিল। নির্ভুল লক্ষ্যভেদ ও কয়েক মাইল দূর থেকে আঘাত হানার ক্ষমতায় একে অনন্য করে তুলেছে।
মার্কিন সেনাবাহিনী তাদের বহরে প্রায় ৮২৫টি অ্যাপাচি পরিচালনা করে। বোইং এ পর্যন্ত ২৭০০ টিরও বেশি এইচ-৬৪ অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টার সরবরাহ করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী ও অন্যান্য দেশকে।
তবে অ্যাপাচি কোনো সাধারণ হেলিকপ্টার নয়। পশ্চিমাবলয়ে সুপরিচিত মার্কিন এই সমরযানটি রয়েছে ভিন্নধর্মী কিছু বিশেষত্বে। এটি তৈরি করে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ উড়োজাহাজ ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বোইং ডিফেন্স, স্পেস অ্যান্ড সিকিউরিটি। অত্যাধুনিক টুইন ইঞ্জিন ও ফোর-ব্লেড মাল্টিমিশন অ্যাটাক হেলিকপ্টারটির মূল বৈশিষ্ট্য হলো দিন বা রাতের যেকোনো আবহাওয়ায় শত্রুর নিশানায় অগ্নিবর্ষণের সক্ষমতা।
‘স্কাই ট্যাঙ্ক’ বা আকাশের ট্যাংক নামে পরিচিত এই হেলিকপ্টারের বর্তমান ইউনিট খরচ প্রায় ৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩৫ কোটি টাকারও বেশি। ভারত একটি অ্যাপাচি হেলিকপ্টারের সমপরিমাণ টাকায় প্রায় ১২ থেকে ১৫টি আধুনিক ট্যাংক কিনতে পারতো, তবুও অ্যাপাচির দিকেই মনোনিবেশ করেছে।
সমর বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাত থেমে গেলেও ভারত তাদের পশ্চিম সীমান্তে সম্ভাব্য যেকোনো সাজানো আক্রমণ মোকাবেলায় সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে চায়। এই হেলিকপ্টারের উন্নত রাডার, নাইট ভিশন ও জোন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ভারতের আক্রমণাত্মক ও ট্যাংক বিধ্বংসী সক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন কৌশল বিশ্লেষকেরা।
শেখ ফরিদ