
ছবি: সংগৃহীত
এক সময় অন্ধকারে ডুবে থাকা ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার গ্রামের মানুষ আজ নিরাপদে, স্বাধীনভাবে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বসবাস করছেন। আর এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে তিন বন্ধুর অসাধারণ উদ্যোগ ‘গ্রাম উর্জা’। সৌর বিদ্যুৎ-নির্ভর মাইক্রো গ্রিডের মাধ্যমে ১৫০টিরও বেশি প্রত্যন্ত গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে তারা এক নতুন আলোয় আলোকিত করেছেন ভারতের গ্রামীণ জীবন।
২০১৫ সালে, সামীর নাইয়ার ও অংশুমান লাথ ঝাড়খণ্ডে এসে সৌর শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা করেন। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন প্রসাদ কুলকার্নি। এই তিনজন মিলে গড়ে তোলেন ‘গ্রাম উর্জা’ একটি সামাজিক উদ্যোগ যা সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে গ্রামীণ ভারতকে আলোকিত করছে।
বিদ্যুৎ আসার পর রাতের অন্ধকারের ভয় দূর হয়েছে। এখন মহিলারা গ্রামে রাতেও চলাফেরা করতে পারেন, নিজেরাই গ্রামের শক্তি কমিটির (Village Energy Committee) সভায় অংশগ্রহণ করেন, এবং বিদ্যুৎ ট্যারিফ নির্ধারণে মতামত দেন। যেমন, কুড়পানি গিরিজাতোলির সুচিতা বা বলেন, "প্রথমে আমরা পরিবার প্রতি ২০০০ রুপি জমা দিয়েছিলাম। এখন প্রতি মাসে ১০০ রুপি করে জমা রাখি, যাতে মাইক্রো গ্রিড রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি। এটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়।"
বিদ্যুৎ আসার ফলে শুধু গ্রাম আলোকিত হয়নি, বরং নতুন জীবিকার পথও খুলেছে। কৃষক অম্বাদাস ভোয়ে এখন সৌরচালিত সেচ ব্যবস্থার সাহায্যে বছরে একাধিক ফসল ফলাতে পারছেন, আর শহরে গিয়ে দিনমজুরি করতে হচ্ছে না।
ঝাড়খণ্ডে যেখানে আগে রাতের বেলা সাপ ও হাতির ভয় ছিল, এখন সৌর স্ট্রিট লাইট থাকায় সাপ কামড় বা বন্যপ্রাণীর ভয় অনেকটাই কমে গেছে। এমনকি, গ্রামের মহিলারা রাতেও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন।
গ্রাম উর্জার সৌর মাইক্রো গ্রিডের ১০৪টির মধ্যে ১০২টি এখনও কার্যকর। মডেলটির মূল শক্তি হলো স্থানীয় মানুষদের সম্পৃক্ততা। তারা নিজেরাই গ্রিড পরিচালনায় অংশ নেয়, নিয়মিত ফান্ড সংগ্রহ করে এবং প্রয়োজনে রক্ষণাবেক্ষণ করে। এতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাটি টেকসই হয় এবং বাইরের সহায়তা ছাড়াও চলতে পারে।
নাসিক, মহারাষ্ট্রে যেখানে নারীরা শুকনো কুয়ায় ২০ ফুট নিচে নেমে পানি আনতেন, সেখানে এখন সৌর পাম্প বসিয়ে ঘরে ঘরে পানি পৌঁছানো হয়েছে। ৪২০০ কৃষক এর ফলে প্রায় ৪৫০০ একর জমিতে সেচ দিতে পারছেন, যা আগে সম্ভব ছিল না।
মুমু ২