
ছবি:সংগৃহীত
ভাবুন তো, একসাথে আকাশে ওড়ছে মানুষের চালানো যুদ্ধবিমান আর তার পাশে নিঃশব্দে কাজ করছে বুদ্ধিমান ড্রোন—এমনই এক ভবিষ্যৎ বাস্তবে রূপ নিয়েছে ফ্লোরিডার এগলিন এয়ার ফোর্স বেসে।
সেখানেই যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী চালিয়েছে এক অভিনব যুদ্ধ মহড়া, যেখানে F-16 এবং F-15 যুদ্ধবিমানের পাইলটরা একসাথে নিয়ন্ত্রণ করেছেন আধা-স্বয়ংক্রিয় ড্রোন XQ-58A ভ্যালকিরি।
প্রতিটি পাইলটের অধীনে ছিল দুটি করে ড্রোন—একটি ম্যান-মেশিন টিম ওয়ার্কের চমৎকার উদাহরণ। এই মহড়া শুধু প্রযুক্তির নয়, আস্থা, গতি ও ভবিষ্যতের যুদ্ধকৌশলের প্রতিফলন।
ভ্যালকিরি: নিঃশব্দে আকাশ জয়কারী
XQ-58A ভ্যালকিরি দেখতে যেন কোনো সাই-ফাই সিনেমার গোপন অস্ত্র। স্টেলথ প্রযুক্তিতে তৈরি, রানওয়ের দরকার নেই, আবার ৩,০০০ কিমির বেশি পথ পাড়ি দিতে পারে। এটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন মানুষের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধ করতে পারে—চুপিচুপি শত্রুর তথ্য সংগ্রহ, রাডার জ্যামিং, এমনকি নির্ভুল আঘাত হানাও এর কাজ।
এর পেছনে আছে মার্কিন বিমান গবেষণা ল্যাব (AFRL) এবং Kratos Defense-এর দীর্ঘমেয়াদি পরিশ্রম। প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে, "কম খরচে তৈরি, বিপজ্জনক মিশনে ব্যবহারযোগ্য" এমন ড্রোন তৈরির লক্ষ্যে।
নতুন যুদ্ধভাবনা: মানুষ বাঁচিয়ে যুদ্ধ জেতা
আজকের যুদ্ধ আর আগের মতো নয়। আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে আছে ভয়ানক হাইপারসনিক অস্ত্র, উন্নত রাডার, এবং শক্তিশালী ইলেকট্রনিক হামলা। এই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন চায়—মানুষকে কম ঝুঁকিতে রেখে মেশিন দিয়ে যুদ্ধ এগিয়ে নিতে। আর সেখানেই আসে ভ্যালকিরি।
এটি শুধু শত্রু ঘাঁটি নজরদারি করে না, প্রয়োজনে আক্রমণ চালাতেও প্রস্তুত। শুধু একটি রকেট সহায়তায় উড়ে যেতে পারে, আর ফিরে আসে প্যারাস্যুটে। এ কারণে এটি যে কোনও দুর্গম জায়গা থেকেও কাজ করতে পারে—যেমন যুদ্ধের মাঝখানে হঠাৎ গড়ে তোলা ঘাঁটি।
মানুষের সাথে মেশিন: আকাশে নতুন বন্ধুত্ব
মহড়ার সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক ছিল—F-16 এবং F-15 পাইলটরা একসাথে দুইটি করে ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করেছেন, তাও কোনো বাড়তি চাপ ছাড়াই। তারা শুধু বিমান চালাননি, ড্রোনগুলোকে কৌশলগত নির্দেশনাও দিয়েছেন—কখন কোথায় যেতে হবে, কাকে নজরে রাখতে হবে, বা কখন আঘাত হানতে হবে।
এই ধরনের মানব-মেশিন টিমিংই আগামী দিনের যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ফারাক গড়ে দেবে।
জেনারেল কেন উইলসব্যাচ, এয়ার কমব্যাট কমান্ডের প্রধান, বলেন, "আমরা শুধু নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি না, বরং ভবিষ্যতের যুদ্ধের পুরো ধারাই বদলে দিচ্ছি।"
আর AFRL কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জেসন বার্তোলোমেই যোগ করেন, "এই মহড়ার প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের শেখাচ্ছে কীভাবে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমগুলো আমাদের ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারে।"
এক ঝলক ভবিষ্যতের যুদ্ধ
এই মহড়া প্রমাণ করেছে—ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে মানুষের জন্য আরও নিরাপদ, মেশিনের জন্য আরও কার্যকর।
মানুষ ও যন্ত্র একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বে। আর আকাশে যেখানে একসময় একাই উড়তো যুদ্ধবিমান, এখন সেখানে থাকবে তার সাথে একঝাঁক বুদ্ধিমান ড্রোন—নিঃশব্দে, নিখুঁতভাবে কাজ করে যাওয়া ‘বিশ্বস্ত সঙ্গী’।
মারিয়া