
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিল থেকে যেকোনো রকমের আমদানির উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি এই সিদ্ধান্তকে ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
লুলা এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “ব্রাজিল একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র যার স্বাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এবং আমরা কোনো প্রকার ‘অভিভাবকত্ব’ মেনে নেব না।” তিনি আরও বলেন, “যেকোনো একতরফা শুল্ক বৃদ্ধি ব্রাজিলের অর্থনৈতিক পারস্পরিক আইন অনুযায়ী মোকাবিলা করা হবে।”
এই সিদ্ধান্তটি এমন সময় এসেছে যখন ট্রাম্প, সাবেক ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে “রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার” বলে আখ্যা দিয়ে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। বলসোনারো বর্তমানে ২০২২ সালের নির্বাচনের ফল মেনে না নিয়ে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি।
ট্রাম্প Truth Social-এ বলেন: “বলসোনারোকে ছেড়ে দাও। তারা শুধুই তাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তাড়া করে চলেছে!” এর জবাবে লুলা জানান, “কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
নতুন এই শুল্ক কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে এবং এটি ট্রাম্পের বৃহত্তর ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ কৌশলের অংশ। ট্রাম্প দাবি করেন, “তামা সেমিকন্ডাক্টর, জাহাজ, বিমান, গোলাবারুদ, ডেটা সেন্টার, ব্যাটারি, রাডার, এবং হাইপারসনিক অস্ত্র তৈরিতে অপরিহার্য।”
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, এ পর্যন্ত শুল্কের মাধ্যমে সরকার $১০০ বিলিয়ন সংগ্রহ করেছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে এই পরিমাণ $৩০০ বিলিয়নে পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট লুলাকে পাঠানো এক চিঠিতে বলসোনারোর বিচারকে “আন্তর্জাতিক লজ্জা” বলে অভিহিত করেন এবং আরও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন। ব্রাজিল এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম স্টিল রফতানিকারক, যা ট্রাম্পের হুমকিকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
লুলা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির দাবি খণ্ডন করে বলেন, “গত ১৫ বছরে মার্কিন সরকার স্বয়ং স্বীকার করেছে যে ব্রাজিলের সঙ্গে পণ্যের ও পরিষেবার বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মোট উদ্বৃত্ত $৪১০ বিলিয়ন।”
তিনি আরও বলেন, “ব্রাজিলে কার্যরত সব কোম্পানিকেই আমাদের আইন মানতে হবে, তা দেশি হোক বা বিদেশি।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কখনো সহিংসতা বা আক্রমণের ছাড়পত্র হতে পারে না।”
ব্রাজিলের চলমান BRICS সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং ইরানে সামরিক হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে। এর জবাবে ট্রাম্প BRICS সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
এদিকে ব্রাসিলিয়ায় মার্কিন দূতাবাস বলেছে, “জাইর বলসোনারো এবং তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী মিত্র। তাদের বিরুদ্ধে চলমান রাজনৈতিক নির্যাতন ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে অপমান করছে।”
যদিও বলসোনারো ভবিষ্যতের নির্বাচনে অংশ নিতে নিষিদ্ধ, তবুও তিনি এখনও দেশটির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে রয়ে গেছেন। তিনি ট্রাম্পের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ট্রাম্প তাকে “পরবর্তী নির্বাচনের ফ্রন্টরানার” হিসেবে উল্লেখ করেন—যদিও আইনি দিক থেকে তিনি তা নন।
লুলা শেষ করেন তার বক্তব্য এই বার্তায়: “সার্বভৌমত্ব, সম্মান ও ব্রাজিলিয়ান জনগণের স্বার্থের অকুণ্ঠ রক্ষা—এই তিনটি আমাদের বৈদেশিক নীতির মূলনীতি।”
সূত্রঃ টাইমস অব ইন্ডিয়া
নোভা