
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নতুন করে আলোচনায় এসেছে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি দাবি করেছেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি হয়েছে এবং একটি চুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। তবে চূড়ান্ত সমঝোতা এখনও অনেক দূরে। উভয় পক্ষ এখন একটি সমঝোতার পথে আলোচনায় রয়েছে। কিন্তু হামাসের পাল্টা প্রস্তাব ও শর্তের মুখে এই আলোচনা জটিল হয়ে উঠেছে।
হামাস কী চাইছে?
হামাস কয়েকটি সংশোধনীসহ একটি “ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া” দিয়েছে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে। হামাসের প্রধান ৩টি দাবি-
-
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) বন্ধ করা:
ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত এই ফাউন্ডেশনের খাদ্য বিতরণের সময় সম্প্রতি ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো দাবি করছে, GHF একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। -
ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার:
হামাস চাইছে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের আগের অবস্থানে ফিরে যাক। বর্তমানে গাজাকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে “নেৎজারিম করিডোর” এবং “মরাগ করিডোর”। -
আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি:
হামাস চায় একটি মার্কিন গ্যারান্টি, যাতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হলেও আর বোমা বর্ষণ বা স্থল হামলা চালানো না হয়।
ট্রাম্প-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের মূল দিকগুলো
- বন্দিমুক্তি বিনিময়: হামাস ১০ জীবিত ইসরায়েলি বন্দি ও ১৮ জনের মরদেহ মুক্তি দেবে।
- প্যালেস্টাইনি বন্দিমুক্তি: পাল্টা হিসেবে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দিতে হবে।
- ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার: নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার রূপরেখা।
- জাতিসংঘ ও আইসিআরসি’র মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ।
নেতানিয়াহু বাহ্যিকভাবে প্রস্তাবে সম্মতি দিলেও হামাসের সংশোধনী শর্তগুলো ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ চলবে যতক্ষণ না সব বন্দি মুক্ত হয় এবং হামাস ধ্বংস হয়। এটি অনেক বিশ্লেষকের মতে, কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অজুহাত।
এছাড়া, নিজ দুর্নীতির মামলায় চাপ মুক্ত হতে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যেই নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান বলে মনে করা হচ্ছে।
গাজা ও পশ্চিম তীরের বর্তমান পরিস্থিতি
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা বিমান ও স্থল হামলায় গাজা ভূখণ্ডে কমপক্ষে ১৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেকেই আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, পশ্চিম তীরেও চলছে দখলদার সেনা ও বসতি স্থাপনকারী ইসরায়েলিদের চরম সহিংসতা। বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া, কৃষিজমি দখল, দোকানপাটে আগুন লাগানো এবং গুলি করে সাধারণ মানুষ হত্যা—এখন সেখানে যেন প্রতিদিনের চিত্র। ইসরায়েলি সেনারা প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে বাড়ি ধ্বংস করছে এবং ফিলিস্তিনি যুবকদের গ্রেপ্তার করছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে পশ্চিম তীরে প্রাণ হারিয়েছেন ১,০০০’র বেশি ফিলিস্তিনি। অনেক এলাকাকে কার্যত ‘মৃত্যু-উপত্যকা’তে পরিণত করা হয়েছে, যেখানে শিশুরাও আর নিরাপদ নয়।
গাজা ও পশ্চিম তীর—দুই জায়গাতেই এখন চরম মানবিক বিপর্যয়। আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা ও দ্বৈত নীতির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
চুক্তির সম্ভাবনা কতটুকু?
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আদনান হায়াজনেহ বলেন, "ইসরায়েল আসলে শান্তি চায় না। তারা চায়, একটি ভূমি যেখানে কোনো ফিলিস্তিনি থাকবে না।" তিনি আরও বলেন, “ফিলিস্তিনিদের সামনে তিনটি বিকল্প—ক্ষুধায় মরো, বোমায় মরো, অথবা দেশ ছেড়ে চলে যাও।”
মুমু ২