
ছবি: সংগৃহীত
গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শতাধিক ইস্পাতজাত সামগ্রী রপ্তানি করে আসছিলেন আদিত্য গারোডিয়া। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ট্যারিফ নীতির কারণে তার ব্যবসা এখন পড়েছে চরম সংকটে।
২০২৫ সালের ৪ জুন থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ট্যারিফ বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। আদিত্য গারোডিয়া বলছেন, “এটা যেন কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হলো। অর্ডারের ৩০ শতাংশই বাতিল হয়ে গেছে।”
ভারতের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্প বর্তমানে এক ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে চীনের কমদামি পণ্যের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হয় দেশীয় নির্মাতাদের। আর এখন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরোপিত উচ্চ ট্যারিফের কারণে সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজারও প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।
চীন সস্তা কাঁচামাল ও বড় পরিসরের উৎপাদনের সুবিধা নিয়ে বিশ্ববাজারে কম দামে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। ভারতের ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে এই মূল্যে প্রতিযোগিতা করা প্রায় অসম্ভব। ফলে দেশের ভেতরেই চাহিদা কমে যাচ্ছে ভারতীয় পণ্যের।
যেখানে একসময় ভারতের ইস্পাতজাত পণ্যের অন্যতম প্রধান গন্তব্য ছিল আমেরিকা, এখন সেই রপ্তানি বাজারেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের ধারাবাহিক শুল্কনীতি।
২০১৮ সালের পর ২০২৫ সালে এসে যুক্তরাষ্ট্র ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের প্রস্তুত পণ্য বা derivatives-এর ওপরও ২৫% ট্যারিফ বসিয়েছে। এরপর জুনে তা বাড়িয়ে ৫০% করা হয় — যা অনেকের মতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য “coffin এ শেষ পেরেক”।
ভারতের হাজারো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (MSME) এখন এক চরম দোলাচলের মধ্যে পড়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে তারা চীনের কমদামি পণ্যের সঙ্গে লড়ছে, আবার আন্তর্জাতিক বাজারে আমেরিকার উচ্চ শুল্ক তাদের রপ্তানি কার্যক্রমকে প্রায় বন্ধ করে দিচ্ছে।
Corona Steel Industry-র পরিচালক আদিত্য গারোডিয়া বলেন, “আমরা রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু এখন বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার দিচ্ছে না, পেমেন্টও দেরি করছে। এটা শিল্পের জন্য ভয়াবহ সংকেত।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বতন্ত্র বাণিজ্য চুক্তি করে এই ট্যারিফ হ্রাসের পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যথায় চীনের সস্তা পণ্যের ভিড়ে এবং আমেরিকার দ্বার রুদ্ধ হয়ে এই শিল্প দ্রুত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।
ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্ট কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান পঙ্কজ চাড্ডা বলছেন, এখন একমাত্র উপায় হলো পেরু বা চিলির মতো দেশে রপ্তানি করে পরে সেখান থেকে মার্কিন বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করা।
মুমু ২