
যুক্তরাজ্যের একটি আদালত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এক নারীকে ভিডিও কলে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অপরাধে এক তরুণকে ৯ বছর ৪ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ‘অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট ২০২৩’-এর আওতায় এটাই প্রথম কোনো অপরাধীর কারাদণ্ডের ঘটনা।
যুক্তরাজ্যের লেস্টারশায়ারের বাসিন্দা ২৩ বছর বয়সী টাইলার ওয়েব। তিনি রেডিটে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা বিষয়ে গঠিত এক ফোরামে এক নারীর সঙ্গে পরিচিত হন। পরে তাঁরা টেলিগ্রামে ভিডিও কলে কথা বলতেন। আদালতে বলা হয়, সেই কথোপকথনগুলো ছিল ‘বিকৃত মানসিকতার’।
সেই সময় ওই নারী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। ওয়েব তাঁকে বারবার বলেন আত্মহত্যা করতে। তিনি চান, সেই আত্মহত্যা ভিডিও কলে দেখে নিতে। আদালতের ভাষায়, এ ছিল ‘পরিকল্পিত মানসিক নির্যাতন’।
লেস্টার ক্রাউন কোর্টে বিচারক টিমোথি স্পেনসার কেসি বলেন, ওয়েব মূলত যৌন তৃপ্তির জন্য এই কাজ করেছেন। আদালত তাঁকে ‘হাইব্রিড আদেশ’ দিয়েছে। অর্থাৎ, তিনি প্রথমে মানসিক হাসপাতালে থাকবেন, পরে উপযুক্ত মনে হলে কারাগারে পাঠানো হবে।
বিচারক বলেন, ‘তোমার প্ররোচনা দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে। এটা দুজনের মধ্যে কোনো আত্মহত্যা চুক্তি ছিল না। এটি ছিল অন্যের আত্মহত্যা দেখে নিজে আনন্দ পাওয়ার বিষয়।’
আদালতের শুনানির সময় ওয়েব মাথা নিচু করে, কান ঢেকে ডকে বসেছিলেন, পরে চেয়ার নিচে লুকিয়ে পড়েন। নিজের নাম বলতেও অস্বীকৃতি জানান।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লুইস ওকলি আদালতে বলেন, ওয়েব ওই নারীকে আত্মহত্যা করতে বলেন, কারণ এটা তাঁকে ‘উত্তেজিত করত’। তিনি বলেন, ওই নারী যখন আত্মহত্যা করতে চাইছিলেন, ওয়েব তা দেখে ‘উপভোগ’ করতেন।
আদালতে জানানো হয়, একবার ওই নারী আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন—ফাঁসিতে ঝুলে পড়েন। তবে ব্যর্থ হলে ওয়েব আবার বলেন, ‘আবার চেষ্টা করো।’
এরপর গত বছরের ৩ জুলাই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ওই নারী। তিনি ভয় পেয়েছিলেন, ওয়েব অন্য কাউকেও এমন করতে উৎসাহ দিতে পারেন। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ওই নারী আদালতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি এটাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা বলব না, এটা মানসিকভাবে হত্যার চেষ্টা। সে আমাকে তার কথার মাধ্যমে ধ্বংস করেছে। আমার জীবনের ওপর এটা চিরস্থায়ী ক্ষতি করেছে।’
ওকলি আরও জানান, ওয়েবের রেডিট প্রোফাইল ছিল ‘**u/EmpathicNarcissist**’। অ্যাকাউন্টটিতে পাওয়া গেছে নানা অ্যানিমে ও গেমিং চরিত্র, যাদের অনেককে যৌন উদ্দীপক ভঙ্গিতে এবং মারাত্মক আহত বা মৃত অবস্থায় দেখানো হয়েছে।
তবে ওয়েব নিজে ভিডিও কলে তাঁর ক্যামেরা চালু করতেন না। কারণ, ওয়েব জানতেন, তিনি যা করছেন তা বেআইনি। আদালতে ওয়েবের আইনজীবী জোয়ি কওং জানান, ওয়েব নিজে একসময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এবং অনলাইনে পাওয়া বিকৃত কনটেন্ট দেখে এমন আচরণ রপ্ত করেন।
তাঁর চিকিৎসক আজিথ গুরুসিংহে জানান, ওয়েব অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এসিডি), ওসিডি, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত। তিনি এখন মানসিক হাসপাতালে আছেন এবং পুরোপুরি অনুতপ্ত নন। তবে কিছুটা অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন।
ডিটেকটিভ কনস্টেবল লরেন হ্যাম্পটন বলেন, ‘এটি শুধু ভয়াবহ নয়, বরং অতি উদ্বেগজনক। এক নারী যখন অনলাইনে সহায়তার জন্য হাত বাড়িয়েছিলেন, তখন ওয়েব তাঁর বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘তিনি জানতেন, তাঁর কথায় ওই নারী আত্মহত্যা করতে পারেন—তবুও বারবার সে তা বলে গেছে।’
তথসূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ
ফুয়াদ